প্রয়াস চালালো খবরের ঘন্টা, নিখোঁজ তরুণী শেষমেষ কলকাতার হোম থেকে ভিডিওকলে শিলিগুড়িতে কথা বললো পরিবারের সঙ্গে

নিজস্ব প্রতিবেদন ঃ  টানা দু’বছরেরও বেশি সময় পরে হারিয়ে যাওয়া তরুনীর সন্ধান পেলেন তরুনীর মা এবং ভাই বোনেরা।বুধবার সন্ধ্যায় প্রচন্ড গরমেের মধ্যেই খবরের ঘন্টা মানবিক কারনে ওই তরুনীর পরিবারের সন্ধানে খোঁজখবর অভিযান চালায় শিলিগুড়ি সুভাষ পল্লী বাজার থেকে ঘোঘোমালি বাজার পর্যন্ত। শেষমেষ খবরের ঘন্টার মোবাইল থেকেই হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিও কলে ওই তরুনীর সঙ্গে তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়া হয়।
ওই তরুনীর নাম রাধা। তাঁর মানসিক কিছু সমস্যা রয়েছে। দুবছর আগে সে ঘোঘোমালি বাজার থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। তারপর তাঁর বাড়ির লোকজন প্রচুর খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর হদিশ পায়নি।
বুধবার দুপুরে কলকাতার চেতলা হাট রোড থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ঈশ্বর সঙ্কল্প হোম থেকে সমাজসেবী তপন প্রধান খবরের ঘন্টার প্রতিনিধি বাপি ঘোষের হোয়াটসঅ্যাপে রাধার ছবি পাঠিয়ে বলেন,এই মেয়েটিকে কলকাতার আলিপুর পুলিশ উদ্ধার করে তাদের হোমে পাঠিয়েছে। মেয়েটি এতদিন তার নাম ঠিকানা কিছুই বলতে পারছিলো না। যদিওবা কখনো নাম ঠিকানা বলছিলতো, সব আবোলতাবোল। হোমের তরফে মেয়েটির মানসিক চিকিৎসা এবং কাউন্সেলিং শুরু হয়। শেষমেষ মেয়েটি এটুকু বলতে সক্ষম হয় যে তাঁর বাড়ি শিলিগুড়ি কোর্ট মোড় থেকে সুভাষ পল্লীর দিকে।তাঁর বাড়ি নদীর ধারে। কলকাতার হোম থেকে তপনবাবু খবরের ঘন্টার সম্পাদকের কাছে রাধার হোমে থাকার বিষয়টি শিলিগুড়িতে প্রচার করার আবেদন জানান।যাতে তাঁর পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়। অথবা খবরের ঘন্টার সম্পাদক মানবিক কারনে যদি মেয়েটির পরিবারের সন্ধান করে দিতে পারে তো খুব ভালো হয় বলে তপনবাবু জানান। তপনবাবুর কাছ থেকে হোয়াটসঅ্যাপে পাওয়া মেয়েটির ছবি এবং সুভাষ পল্লী বাজারে নদীর পার, এই ঠিকানা পেয়ে গলদঘর্ম অবস্থায় খবরের ঘন্টার সম্পাদক সুভাষ পল্লী বাজার চষে বেড়ান।শেষমেষ সফলতা আসে।একে তাকে ছবি দেখাতে দেখাতে শেষে মেয়েটির মামার সন্ধান পাওয়া যায় ফুলেশ্বরী নদীর ধারে। মামা ছবি দেখে তাঁর ভাগ্নিকে চিনতে পারেন। তাঁর মামা সুশান্ত সূত্রধর শিলিগুড়ি পুরসভার কর্মী। সুশান্ত সূত্রধর এই প্রতিবেদককে বলেন,এই মেয়ে কোথায়? এতো নিখোঁজ। আপনার মোবাইলে এর ছবি কিভাবে এলো? প্রতিবেদক সব জানালে পুর কর্মী সুশান্ত সূত্রধর সুভাষ পল্লী বাজার থেকে ঘোঘোমালি বাজারে জোড়াপানি নদীর ধারে এই প্রতিবেদককে নিয়ে যান।সেখানে ওই মেয়েটির ঘর ভাঙাচোরা, বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। কুপির আলোয় রাত কাটায় ওই পরিবার। মেয়েটির মা,দাদা এবং দিদির সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিও কলে এই প্রতিবেদক সরাসরি কলকাতার হোম থেকে কথা বলিয়ে দেয় মেয়েটির সঙ্গে। মেয়েটি চিনতে পারে মা, দাদা, দিদিকে।মুহুর্তের মধ্যে আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয় সেখানে। মেয়েটির বাবা কিছু দিন আগে মারা গিয়েছে। ওরা তিন ভাই ও পাচ বোন।বড়দাদার ওপরই কোনোমতে সংসার চলে। পরিবারে তীব্র অভাব।টাকার অভাবে এক দাদা সূর্য সেন কলেজে বি এ ক্লাসে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েও পড়তে পারেনি।কারন ঘরে অভাব। তাদের ওই হারিয়ে যাওয়া বোন মানসিক সমস্যার কারনে প্রায়ই হারিয়ে যায়।কলকাতার ঈশ্বর সঙ্কল্প সংস্থার সমাজসেবী তপন প্রধান বলেন, মেয়েটি সব ভুলে যায়।মানসিকভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। তাঁরা তাঁকে সেলাই শেখাচ্ছেন কিন্তু বারবার ভুলে যাচ্ছে। তবে চিকিৎসা টানা চালিয়ে যেতে হবে।আধার কার্ড ইত্যাদি নিয়ে মেয়েটির পরিবারকে কলকাতায় যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। কিন্তু কলকাতায় যাওয়া আসা, থাকা খাওয়ার খরচ সংগ্রহ করাটাও তাদের কাছে চাপের বলে সেই পরিবার জানায়।তবে এরাও এক সূত্রধর পরিবার। অভাব থাকলেও রাধাকে তাঁরা তাদের কাছে ফিরিয়ে আনতে চান হোম থেকে।

আরও বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন —-