সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কাজে অন্যরকম হয়ে উঠছে সম্প্রীতি

নিজস্ব প্রতিবেদন, শিলিগুড়িঃ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে শিলিগুড়িতে ক্রমশই অন্যরকম হয়ে উঠছে সম্প্রীতি নামের একটি সংগঠন। সোমবার চিকিৎসক দিবসের দিন ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে রোগীদের মধ্যে ফল যেমন কলা, ডিম, দুধ, বিস্কুট প্রভৃতি বিলি করা হয়। স্বাস্থ্য কর্মীদের হাতেও তা তুলে দেওয়া হয়। সংগঠনের সভাপতি জয়ন্ত কর জানিয়েছেন, এদিন তারা সেখানে চিকিৎসকদের ব্যাজও পড়ান।তাদের সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রকাশ রায়, শিলিগুড়ি কলেজের অধ্যক্ষ সুজিত ঘোষ, স্কুল শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ, বাবলু মন্ডল,অভয়া বোস, অধ্যাপক ডঃপ্রবীর মান্না, ডঃঝিনুক দাশগুপ্ত প্রমুখ।

তিন বছর আগে শিলিগুড়ি শহরে তৈরি হয় সম্প্রীতি। মূলত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে দেওয়া এবং তার পাশাপাশি সামাজিক কাজ করতেই জন্ম হয় এই সংগঠনের। প্রথমে কলেজ এর কাছে কয়েকজন শিক্ষক, অধ্যাপক ও শিক্ষা কর্মী নিজেরা আড্ডার ছলে বলতে থাকেন, চাকরির পাশাপাশি সামাজিক কাজ করা যায় বা চাকরির সঙ্গে সঙ্গে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে দেওয়া যায়। আড্ডায় যেমন ভাবনা বাস্তবে তেমনই তার প্রয়োগ শুরু। ওই অধ্যাপক শিক্ষকরা নিজেরা চাঁদা দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। সভাপতি জয়ন্তবাবু জানান, দ্বিতীয় বছরে তারা লিটারারি উৎসব করেন।তার সঙ্গে লোকসংগীত উৎসব হয়। এরপর সদস্য সংখ্যা বাড়তে থাকে। এখন তা ৬৮ তে পৌঁছে গেছে। সবাই যে অধ্যাপক তা কিন্তু নয়, অন্য পেশার আরও অনেক ভালো মনের মানুষ এই সংগঠনে আছেন। আর এরসঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। বাইরের কারো কাছ থেকে তারা চাঁদা সংগ্রহ করেন না। নিজেরাই টাকা দিয়ে কাজকর্ম করেন। কোথাও কোনো দুঃস্থ বা অসহায় মানুষ বিপদে পড়লে তারা পাশে আছেন। কদিন আগে সোহন পাল নামে হায়দার পাড়ায় আড়াই বছরের এক শিশুর ব্রেন টিউমারের খবর পেয়ে তারা সেখানে পৌঁছে অর্থ সাহায্য করেন। আবার সোমবারই শিলিগুড়ি অরবিন্দ পল্লীতে বিদ্যুৎ ঘোষ নামে এক রং মিস্ত্রীকে ৫০০০ টাকা অর্থ সাহায্য করেছেন মুম্বাইতে চিকিৎসা করতে যাওয়ার জন্য। সন্দেহ করা হচ্ছে, বিদ্যুৎ ঘোষ এর ক্যান্সার হয়েছে। তার দুই সন্তান। ছোট সন্তান প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে আর বড় সন্তান এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে সূর্যসেন কলেজে ভর্তি হয়েছে। জয়ন্তবাবুরা এদিন বিদ্যুৎ ঘোষের বড় ছেলের পড়াশুনার জন্য সব রকম সহায়তা করবেন বলে আশ্বাস দেন। জয়ন্তবাবু বলেন আগামীতে তারা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর জন্মদিন পালনের সময় দরিদ্রদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করবেন। আবার গান্ধীজীর স্মরণ অনুষ্ঠানে কুষ্ঠ আশ্রম ও হরিজন বস্তিতে বস্ত্র বিতরণের কথা ভাবছেন। গতবছরও তারা কুষ্ঠ আশ্রমে সামাজিক কর্মসূচি নেন গান্ধীজি স্মরনে। গরিব সাধারণ মানুষের স্বার্থে কাজ করে যাওয়া ছাড়াও সংস্কৃতির জন্য তারা কাজ চালিয়ে যাবেন বলে জয়ন্তবাবু জানান। দুঃস্থ ও মেধাবীদের বই কিনে দেওয়া, স্কুল বা কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার মতো কাজও তারা করছেন। এবার রিতু সূত্রধর, সুনিতা পোদ্দার নামে দুজন দুঃস্থ ও মেধাবীকে তারা ভর্তির ব্যবস্থা করেন কলেজে। এইসব ধারাবাহিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজ সম্প্রীতিকে ক্রমশ অন্যরকম করে তুলছে।