বোন স্বপ্নার সঙ্গে দৌড়ে কখনই জিততে পারেননি দাদা

বাপী ঘোষ ,শিলিগুড়িঃ যখন তিনি ছোট ছিলেন বোনের সঙ্গে দৌড় দৌড় খেলতেন। কিন্তু কখনই পারেন নি। প্রতিবারই বোন জিতে গিয়েছে। তিনি দাদা হলেও পারেন নি বোন স্বপ্নার সঙ্গে। জানালেন বাংলার সোনার মেয়ে স্বপ্না বর্মনের দাদা অসিত বর্মণ। পেশায় তিনি রাজমিস্ত্রী। বুধবার এশিয়াডে হেপ্টাথলনে জলপাইগুড়ির পাতকাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের মেয়ে স্বপ্না বর্মণ সোনা জেতার পর আনন্দে আত্মহারা স্বপ্নার পরিবারের সদস্যরা। তার দাদা অসিত বর্মণ খবরটি টিভিতে দেখার পর দৌড়ে জলপাইগুড়ি শহরে চলে যান। সেখানে তিনি মিষ্টি বিলি করেন। তারপর পটকা কিনে আনেন। অনেক রাত পর্যন্ত পটকা ফাটান। বোনকে সে কথা ফোন করেও জানান। বোন ফোনে বলে দিয়েছেন, সাবধানে বাজি পটকা ফাটাতে হবে। আনন্দ করতে গিয়ে যেন অন্যের ক্ষতি না হয়।
জলপাইগুড়ির গ্রামের মেয়ে স্বপ্না বর্মণ এখন সোনার মেয়ে। তার বাবা পঞ্চানন বর্মণ সামান্য ভ্যান চালক ছিলেন। আর মা বাসনা বর্মণ চা বাগানের শ্রমিক ছিলেন। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে বিছানায় শয্যাশায়ী স্বপ্নার বাবা। স্বপ্নারা চার ভাইবোন। সবার ওপরে স্বপ্নার দিদি চন্দ্রা বর্মণ, তারপর দাদা পবিত্র বর্মণ, তারপর অসিত। সবার ছোট স্বপ্না। ছোট থেকেই স্বপ্নার খুব ঝোঁক এথলেটিক্সের প্রতি। তার বাবা ছোট বেলাতেই স্বপ্নাকে এথলেটিক্সের জন্য উৎসাহ দিতেন। বাঁশের কঞ্চি এনে হাই জাম্পের চর্চা করাতেন বাড়িতেই। আর তার মা চা বাগানের কাজ শেষ করে এসে বাড়ি থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে স্বপ্নাকে নিয়ে যেতেন জলপাইগুড়ির খেলার মাঠ স্পোর্টস কমপ্লেক্সে। বাসনাদেবী নিজে সাইকেল চালিয়ে স্বপ্নাকে নিয়ে যেতেন জলপাইগুড়ি। পায়ের জুতো না মেলার বিষয়টি স্বপ্নাকে দিনের পর দিন ভুগিয়েছে। তার পায়ে ছয়টি আঙুল। পড়তেন কালিয়াগঞ্জ স্কুলে। সেখানে স্কুলের শিক্ষকদেরও তার ছয় আঙুলের জুতোর খোঁজ করতে গিয়ে এক সময় বেশ দৌড়ঝাঁপ করতে হয়েছে। চাঁদা তুলে তাদের জুতোর জন্য বিশেষ অর্ডার দিয়ে তা বানাতে হয়। প্রচণ্ড অভাব থাকা সত্বেও স্বপ্না তার খেলা ছাড়ে নি। ওর দাদা অসিত বর্মণ বললেন, ওকে ছোটবেলায় দেখেছি মা বারবার ভাত খাওয়ার জন্য ডাকছেন। ওর সেদিকে নজর নেই। ওর নজর শুধু খেলার দিকে। খাওয়াদাওয়ার দিকে ওর নজর ছিল না। খুব জেদ ছিল খেলাধুলার দিকে।
স্বপ্নার বাবা আজ অসুস্থ। তবুও মেয়ের এই সাফল্যে আত্মহারা। বাড়িতে শুয়ে থেকেই অনেকের মুখে মিষ্টি গুজে দিয়েছে। মেয়েকে কবে দেখবেন সেই আশায় আছেন। মুখ দিয়ে কথা বিশেষ বের হচ্ছে না। স্বপ্নার খেলাধুলা থেকে কিছু পয়সা আসে ঘরে আর ভাইদের রাজ মিস্ত্রীর কাজ থেকে কিছু রোজগার। তা দিয়েই কোনোমতে চলে সংসার। তবে সোনা জেতার পর মুখ্যমন্ত্রী দশ লক্ষ টাকা দেবেন বলে ঘোষণা করেছেন। তাছাড়া চাকরি দেওয়ার কথাও মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন। ফলে এই পরিবার এতদিন লড়াইয়ের পর এতদিনে আলোর মুখ দেখছে। গোটা গ্রামে এখন শুধু স্বপ্নাকে নিয়ে আলোচনা। তিন তারিখ স্বপ্না কলকাতায় আসবেন। তারপর কবে আসবেন জলপাইগুড়ির গ্রামে, সেই অপেক্ষায় দিন গুনছেন সকলে।