
নিজস্ব প্রতিবেদন ঃ কোচবিহার জেলার প্রত্যন্ত এলাকা জামালদহের মতো একটি স্থানে থেকেও যে মানুষ তৈরির চাষ করা যায় নিঃশব্দে তার জ্বলন্ত উদাহরণ মৃন্ময় ঘোষ। বহু বছর ধরে মৃন্ময়বাবু নিঃশব্দে অসামান্য সব কাজ করে চলেছেন।কিন্তু কিছুতেই তিনি প্রচারের আলোয় আসতে চান। আর সংবর্ধনা বা পুরস্কার থেকেতো দূরে। আসলে বিরল এবং অসামান্য কাজের মানুষেরা এমনই হন।জামালদহের পঞ্চপান্ডব সংস্থার তিনি অন্যতম প্রধান কর্নধার। তাঁকে একঝলক দেখলে বলবেন,এই লোকটা আবার অসাধারণ বিরল মানুষ হন কি করে—- মাথার চুলগুলো উসকোখুসকো,আহামারি পোশাকের বাহার নেই। একবারে সাদামাটা পোশাক পরিচ্ছদ, সাদামাটা চালচলন।তাকে একঝলক দেখলে কারও বিশ্বাসই হবে না ইনি গোটা দেশে একের পর এক বিরল এবং অসামান্য সব কাজ করে চলেছেন।তবে কি তাঁর ভালো পোশাক পড়া,একটু ঠাটবাট করার সামর্থ্য নেই?
নিশ্চয়ই রয়েছে। তাঁর স্ত্রী সরকারি কর্মী। তিনি নিজে একটি মিস্টির দোকান চালান। আর নিজে একজন আইনজীবী। তবে কেন অত সাধারণ থাকেন? আসলে তাঁর কথায়,ঠাটবাটের পিছনে পয়সা খরচ করে কি হবে? যে টাকায় ঠাটবাট দামী পোশাক আশাক হবে সে টাকায় একজন দুজন দুঃস্থ মেধাবী ছেলেমেয়েকে ডাক্তারি পড়ানো যাবে।
হ্যা,এই মুহুর্তে রাজ্য এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একাত্তর জন দুঃস্থ ও মেধাবী ছাত্রছাত্রী ডাক্তারি পড়ছে যাদের ডাক্তারি পড়ার বিভিন্ন খরচ বহন করছে পঞ্চপান্ডব এবং তাঁর অন্যতম কর্নধার মৃন্ময় ঘোষ। আর্থিক দিক থেকে অনগ্রসর অথচ মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নকে সার্থক করে তুলতে মৃন্ময়বাবুদের ধারাবহিক প্রয়াসকে ইতিমধ্যে বিভিন্ন মহল কুর্নিশ জানাতে শুরু করেছে। শুধু ডাক্তার বা মানুষ তৈরির চাষ কেন,আরও বহুমুখী সামাজিক ও মানবিক কর্মসূচি চলছে পঞ্চপান্ডবের যার সবকিছু এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা সম্ভব হলো না।
তবে শনিবার মৃন্ময়বাবু এইসব দুঃস্থ ও মেধাবী ডাক্তারির ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে থেকে দশজন নক্ষত্রকে শিলিগুড়ি নিয়ে আসেন। প্রান্তিক কৃষক, জনমজুর সহ আরও অন্যভাবে পিছিয়ে পড়া এই মেধাবীদের শনিবার চিকিৎসক দিবসের দিন শিলিগুড়ির ১২টি স্থানে সংবর্ধনা এবং উপহার সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। কেও তুলে দিয়েছেন পাঠ্য পুস্তক, কেওবা তুলে দিয়েছেন ট্যাব বা ল্যাপটপ।এইসব উপহার ওদের ডাক্তারির পড়াশোনাকে আরও এগিয়ে দেবে। শনিবার যাঁরা বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে মৃন্ময়বাবুর সঙ্গে উপহারগুলো নিতে আসেন তাঁরা হলেন নিতাই দাস— কলেজ অফ মেডিসিন এন্ড সাগর দত্ত হসপিটাল, আবু তাহের—কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, এনামূল হালদার—কলেজ অফ মেডিসিন এন্ড জে এন এম হসপিটাল, সুমন ঘোষ—-মালদা মেডিক্যাল কলেজ, অনিশা পাল— মালদা মেডিক্যাল কলেজ, রিন্টু দাস—- কলেজ অফ মেডিসিন এন্ড সাগর দত্ত হসপিটাল, জয়িশ্বর মন্ডল—-বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ, মৃনাল হাসান—- বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ,ইন্দ্রজিৎ রায়— উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। আর হলদিবাড়ি সীমান্তের ছিটমহল থেকে প্রথম ডাক্তারি পড়তে চলা কূপন রায়।
একটি ওয়াটার পিওরিফায়ার কোম্পানি থেকে গৌতম ভট্টাচার্য এদিন এইসব মেধাবীদের মধ্যে দুজনকে পাঠ্যপুস্তক তুলে দেন। আর আশ্রমপাড়ার একটি রেস্তোরাঁয় সেই ছোট্ট কিন্তু সুন্দর অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন আনন্দধারা সঙ্গীত একাডেমির বিশিষ্ট সমাজসেবী ও সঙ্গীত শিল্পী অনিন্দিতা চট্টোপাধ্যায়। অনিন্দিতাদেবী সেখানে মৃন্ময়বাবুকে শ্রদ্ধা জানান। তার সঙ্গে ওইসব দুঃস্থ ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের মেডেল পড়িয়ে উৎসাহিত করেন। সেই অনুষ্ঠানে অনিন্দিতাদেবী বিশিষ্ট সমাজসেবী সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং খবরের ঘন্টার সম্পাদককেও সংবর্ধনা জানান। অপরদিকে শিলিগুড়ি হায়দরপাড়া নিবাসী দুঃস্থ ও মেধাবী ছাত্র প্রিয়াংশু দের সঙ্গেও এদিন মৃন্ময়বাবুর পরিচয় করিয়ে দেন অনিন্দিতাদেবী। হতদরিদ্র প্রিয়াংশুকে ষষ্ঠ শ্রেনী থেকে পড়িয়ে আসছেন অনিন্দিতাদেবী। প্রিয়াংশু এবার ডাক্তারি পড়ার সুযোগও পেয়েছে। কিন্তু র্যাঙ্ক একটু পিছনে, অথচ প্রিয়াংশুর স্বপ্ন ডাক্তার হওয়ার। মৃন্ময়বাবু জানিয়েছেন, প্রিয়াংশুর স্বপ্ন যাতে সত্যি হয় সেজন্য তিনি প্রয়াস চালাবেন।
প্রান্তিক পরিবার থেকে উঠে আসা এইসব ডাক্তারি পড়ুয়ারা সকলেই এদিন চিকিৎসক দিবস স্মরনে খবরের ঘন্টাকে জানিয়েছেন, ডাক্তার হয়ে বের হলে তাঁরা আর্থিক দিক থেকে অনগ্রসর মেধাবী ছেলেমেয়েদের পাশে দাড়াবেন।আর সর্বোপরি মানুষের সেবা করবেন।আনন্দধারা সঙ্গীত একাডেমির এদিনের ওই প্রয়াসের তারিফ করেন মৃন্ময়বাবু এবং সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়।

বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন —