
নিজস্ব প্রতিবেদন ঃ শিলিগুড়ি ডাবগ্রাম শান্তিনগর এলাকার স্কুল ছাত্রী অন্তরা সরকার জন্মের কিছু দিন পর থেকেই নানা রোগব্যাধির সঙ্গে লড়াই করছে। প্রথমত ছোট থেকেই অন্তরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। সেই রোগের সঙ্গে লড়তে লড়তেই কিডনির কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় সে। এখন অন্তরার বয়স ১৩ বছর, সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। আর্থিক অনগ্রসরতাও বড় প্রতিবন্ধকতা তার কাছে। কেননা ওর বাবা কাঠ মিস্ত্রী আর মা পরিচারিকা। একবছর আগেও সে চোখে দেখতে পারতো। কিন্তু হঠাৎ তার কাছে সব অন্ধকার হয়ে আসে । ছানির কারনে তার দুই চোখের দৃষ্টি শক্তি চলে যায়। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের যেখানে অন্তরার কিডনির চিকিৎসা চলছিল সেখান থেকে তার পরিবারকে জানানো হয়, চোখের ছানি অপারেশনের পরিকাঠামো তাদের নেই। তাই তাকে কলকাতার পি জি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারনে তার পরিবার কলকাতায় অন্তরাকে নিয়ে যেতে পারে নি।শেষে গত ১৬ সেপ্টেম্বর খবরের ঘন্টা ওয়েবনিউজ পোর্টাল এবং ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অন্তরার দৃষ্টি শক্তি ফেরানোর জন্য সকলকে এগিয়ে আসার আবেদন জানানো হয়। সেই ওয়েবনিউজ পোর্টালের সম্পাদক ও সাংবাদিক বাপি ঘোষ শিলিগুড়ি বর্ধমান রোডের দ্য হিমালয়ান আই ইন্সটিটিউটের সমাজসেবী কমলেশ গুহের নজরে পুরো বিষয়টি নিয়ে আসেন। তারপর কমলেশবাবুদের আন্তরিক প্রয়াসে ইনার হুইল ক্লাব অফ শিলিগুড়ি উত্তরায়ন এবং রোটারি ক্লাব অফ শিলিগুড়ি উত্তরায়নের কর্মকর্তাদের নজরে বিষয়টি আসে। দ্য হিমালয়ান আই ইন্সটিটিউটের বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুপ্রতীক ব্যানার্জীও সপ্তম শ্রেণীর ওই স্কুল ছাত্রীর দৃষ্টি শক্তি ফেরানোর জন্য মানবিক প্রয়াস নেন। রোটারিয়ান কুলদীপ বনশাল এবং তাঁর স্ত্রী অনিতা বনশাল অন্তরার চোখে লেন্স বসানোর জন্য সমগ্র খরচ বহন করতে এগিয়ে আসেন। ইনার হুইল ক্লাব অফ শিলিগুড়ি উত্তরায়নের সভাপতি শ্বেতা আগরওয়ালা, সম্পাদক রীতা মজুমদার, রোটারি ক্লাবের অজয় কুমার গুপ্তা সহ অন্য সকলে এগিয়ে আসেন। তাদের সহায়তার সঙ্গে সঙ্গে ডাঃ সুপ্রতীক ব্যানার্জী, ডাঃ অজয় আগরওয়ালা শনিবার দ্য হিমালয়ান আই ইন্সটিটিউটে একটি চোখের ছানি অপারেশন করেন। ডাঃ সুপ্রতীক ব্যানার্জী জানিয়েছেন, এদিন অন্তরার একটি চোখের অপারেশন সফল হয়েছে। আর এক চোখের অপারেশন হবে এক মাস পর। এই স্কুল বালিকার চোখের ছানি অপারেশন তাদের কাছে একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয় ছিল। শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুবীর ভৌমিকের কাছেও তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।কেননা ডাঃ সুবীর ভৌমিক বিনা ভিজিটে অন্তরাকে চিকিৎসা করেছেন অপারেশনের আগে। অন্তরার মা কল্পনা সরকার এদিন বলেন, দৃষ্টি শক্তি ফিরলে আবার স্কুলে যাবে অন্তরা। আবার সে ছবি আঁকবে। আবার সে সৃজন কাজে মেতে উঠবে। কেননা সে পড়তে ভালোবাসে।
আর কদিন বাদেই পিতৃ পক্ষের শেষ। শুরু হবে দেবী পক্ষ। অশুভ শক্তিকে দমন করে শুভ শক্তির বার্তা দিতে মর্ত্যে আগমন ঘটবে দেবী দুর্গার। সবাই মেতে উঠবে শারদীয়া উৎসবে।কিন্তু তার আগে অন্তরার দৃষ্টি শক্তি ফেরানোর ওই মানবিক প্রয়াস আমাদের অন্তরের অন্ধকার দূর করে অন্তরের আলো বা অন্তর্দৃষ্টিকে কতটা আলোয় উদ্ভাসিত করবে?
