বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসের আগে শিলিগুড়িতে মূক-বধির কিশোরকে মারধর—সমাজবোধ কি কেবল কাগজেই?

নিজস্ব প্রতিবেদম:
৩ ডিসেম্বর বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস। বিশ্বের নানা প্রান্তে এই দিনটিতে প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার, মর্যাদা ও অন্তর্ভুক্তি নিয়ে নানা কর্মসূচি হয়। কিন্তু বাস্তব কি সেই বার্তা ধরে রাখতে পারে? শিলিগুড়ির সুকান্ত নগর এলাকায় ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনাটি যেন সেই প্রশ্নটিকেই আরও স্পষ্ট করে তুলল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক মূক ও বধির কিশোরকে এলাকাতেই কয়েকজন ছেলে-মেয়ে মিলে মারধর করে। অভিযোগ, কোনো ভুল আচরণের অভিযোগ থাকলেও তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার বদলে পথেঘাটেই আইন নিজের হাতে তুলে নেয় অভিযুক্তরা। ভিডিও সামনে আসতেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে। ইতিমধ্যেই পুলিশে অভিযোগ হয়েছে, এবং একজনকে আটকও করেছে।
স্থানীয়দের বক্তব্য, “ভুল করলে আইন আছে, পুলিশ আছে। কিন্তু একজন মূক-বধির বালকের ওপর এভাবে অত্যাচার করার অধিকার কে দিল?” বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসের প্রাক্কালে এই প্রশ্ন আরও জোরালোভাবে সামনে এসেছে। প্রতিবন্ধী মানুষের সুরক্ষা, মর্যাদা ও সমান অধিকারের কথা আমরা প্রতিদিন শুনি—কিন্তু বাস্তবে কি তারা নিরাপদ? কাগজে-কলমে পালিত দিবস কি যথেষ্ট, যদি সমাজের আচরণ না বদলায়?
১৯৯২ সালে জাতিসংঘ ৩ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এর উদ্দেশ্য—
সমাজে প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করা,
বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁদের অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো,
এবং বৈষম্য ও সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা।
এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রতিবন্ধকতা কোনো দুর্বলতা নয়—বরং তাদের নিরাপত্তা, সুযোগ ও মর্যাদা নিশ্চিত করাই সভ্য সমাজের দায়িত্ব।
সুকান্ত নগরের ঘটনাটি সেই দায়িত্বের পরীক্ষাই যেন। প্রশ্ন রয়ে যায়—বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস আমরা পালন করি, কিন্তু প্রতিবন্ধী মানুষের প্রতি মানবিক আচরণ কি সত্যিই শিখেছি? সমাজের সবার দায়িত্ব, এমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এবং প্রতিবন্ধী মানুষদের পাশে থাকা—শুধু একটি দিনেই নয়।