ঝর্ণার জল পান করতে গিয়ে বিপত্তি, এই মহিলার শ্বাসনালীতে ১৫দিন ধরে আটকে থাকলো জোঁক,তারপর? তারপর কি হলো– দেখুন

নিজস্ব প্রতিবেদন : ঝর্নার জল পান করতে গিয়ে বিপত্তি। সেই জলের মধ্যে যে জোঁক ছিলো তা বুঝতেই পারেননি ৪০ বছর বয়স্কা সেই মহিলা। জোঁকটি মহিলার গলার মধ্যে শ্বাসনালীতে গিয়ে আটকে যায়।জোঁক যে মহিলার গলায় আটকে ছিলো তা টেরই পাননি মহিলা। তবে তাঁর গলায় অস্বস্তি অনুভব হচ্ছিল, মাঝেমধ্যে কাশি হচ্ছিল। গলার মধ্যে কিছু একটা আটকে আছে বুঝতে পারছিলেন কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। খাওয়াদাওয়া স্বাভাবিকই করছিলেন। জোঁকটি যে গলার মধ্যে শ্বাসনালীতে আটকে থেকো মহিলার রক্ত শোষন করছিলো সেটাও মহিলা বুঝতে পারেন নি।গরুবাথানের গ্রাম থেকে মহিলাকে শিলিগুড়ি এনে বেসরকারিভাবে চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়া হয়। মহিলার জীবন ক্রমশ সঙ্কটাপন্ন হয়ে উঠছিলে।নিঃশ্বাস প্রক্রিয়া স্বাভাবিক নিয়মে চালাতে গিয়েও কষ্ট হচ্ছিল তাঁর। শেষমেষ ২রা ফেব্রুয়ারী দুপুরে সেই মহিলাকে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।সেখানে ই এন টি বিভাগের প্রধান ডাঃ রাধেশ্যাম মাহাতোর নেতৃত্বে
ই এনটি বিভাগের সমস্ত চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় সেই মহিলার গলার মধ্যে থেকে অপারেশন করে বের করা হয় সেই অভিশপ্ত জোঁকটিকে।এক ঘন্টা ধরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চলে সেই অপারেশন। টানা পনেরোদিন মহিলার শ্বাস নালীতে আটকে থেকে জোঁকটি অনেক রক্ত শুষে নেওয়ার পর এখন বোতল বন্দী। বিভাগীয় প্রধান ডাঃ রাধেশ্যাম মাহাতো এই অপারেশন সম্পর্কে উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন,মহিলার গলায় তাঁরা পাইপের সাহায্যে কৃত্রিম শ্বাসনালী তৈরি করে নিয়েছিলেন।তারপর অপারেশন করে জোঁকটি বের করা হয়। এক ঘন্টার অপারেশন হলেও অপারেশন ছিলো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। আর জোঁকটি বের করা সম্ভব না হলে মহিলার জীবন সংশয় হতে পারতো।এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ডাঃ রাধেশ্যাম মাহাতো সকলকে জল,মুড়ি ইত্যাদি কিছু খাওয়ার আগে তা দেখে খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। সেই মহিলার স্বামী নবীন রাই বকেন,পাহাড়ের ঝর্নার জল আর তাঁরা পান করবেন না।ঝর্ণার জল পান করার আগে অন্য সকলকেও সতর্ক করেন নবীন রাই।
উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ই এন টি বিভাগে এই ঝুঁকিপূর্ন অপারেশনে বিভাগীয় প্রধান ডাঃ রাধেশ্যাম মাহাতোকে অপারেশনের কাজে সহযোগিতা করেন ডাঃ গৌতম দাস,ডাঃ সৌমেন্দু ভৌমিক, ডাঃ তুহিন শাসমল,ডাঃ আজহারউদ্দীন, ডাঃ অজিতাভ সরকার, এবং ডাঃ সন্দীপ মন্ডল।অপারেশনের সময় রোগিনীকে অজ্ঞান করার প্রয়োজন হলে সেই কাজে সহযোগিতা করেন ডাঃ ধর্মেন্দ্র,ডাঃ নিশা ভুটিয়া,ডাঃ সৌরভ কর্মকার,ডাঃ দিয়া মিত্র, ডাঃ পার্সি মন্ডি। যেসব নার্স এই কাজে সহযোগিতা করেন তারা হলেন শবনম শর্মা,দীপিকা বর্মন এবং শেখ আজহারউদ্দীন। বিভাগীয় প্রধান ডাঃ রাধেশ্যাম মাহাতো এই অপারেশন সফল করে তোলার জন্য ই এন টি বিভাগের অন্যান্য টেকনিক্যাল স্টাফ এবং সব কর্মীদের ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। আরও একবার প্রমানিত হলো,সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকরা সবাই মিলে উদ্যোগী হলে বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় অনেক ঝুকিপূর্ণ অপারেশন এবং চিকিৎসা সরকারি হাসপাতালে সম্ভব।
সেই রোগিনীর পরিবার এই ঘটনা সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বারবার উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ই এন টি বিভাগের প্রধান ডাঃ রাধেশ্যাম মাহাতো সহ সব চিকিৎসক এবং কর্মীদের প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন: