নিজস্ব প্রতিবেদন, শিলিগুড়িঃ ১৪ বছরের কিশোর প্রিয়াংশু দে ওরফে পাল। ওর ছোট ভাই ভয়ানক ব্যাধিতে আক্রান্ত। পড়াশোনার মাথা বেশ ভালো প্রিয়াংশুর।একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ও অষ্টম শ্রেনীতে পড়ে।কিন্তু ভাইয়ের চিকিৎসার খরচ যোগাড় করতেই বাবা রাকেশ পালের অবস্থা হিমশিম। ফলে প্রিয়াংশুর পড়াশোনা লাটে ওঠে।রাকেশ পাল সামান্য টোটো চালক।এই অবস্থায় রাকেশকে সাহায্য করতে গিয়ে প্রিয়াংশু নজরে পড়ে যায় সঙ্গীত শিল্পী অনিন্দিতা চ্যাটার্জীর।অনিন্দিতাদেবী দেখেন,পড়াশোনার মাথা ভালো থাকা সত্বেও প্রিয়াংশুর পড়া বন্ধ টাকার অভাবে।তিনি তখন প্রিয়াংশুর স্কুলের ফী ভরে দিয়ে তাকে স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। মানবিক ও সামাজিক কাজের বিরাট পরিচয় দিয়ে অনিন্দিতাদেবী প্রিয়াংশুর জন্য গৃহ শিক্ষকেরও বন্দোবস্ত করেন। সেই হিসাবে শিক্ষক পিনাকি মজুমদার প্রিয়াংশুকে বিনে পয়সায় পড়িয়ে চলেছেন। প্রিয়াংশু ছাড়া আরও কয়েকজন দুঃস্থ এবং মেধাবীকে বিনে পয়সায় পড়িয়ে চলেছেন পিনাকিবাবু।শিক্ষক দিবসের প্রাক্কালে আনন্দধারার তরফ থেকে সঙ্গীত শিল্পী অনিন্দিতা চ্যাটার্জী পিনাকিবাবুর লেক টাউনের বাড়ি গিয়ে তাকে সংবর্ধনা জানালেন। দুঃস্থ ও মেধাবীদের পাশে থাকার পাশাপাশি মৃতদেহ সৎ কারের জন্য শ্মশানে যাওয়া, রক্তদান শিবিরে যোগ দেওয়ার মতো সামাজিক কাজে মেতে আছেন পিনাকিবাবু।
শিলিগুড়িতে শিক্ষকশিক্ষিকাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম দুর্বা ব্রহ্ম। তিনি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর কাছ থেকেও পুরস্কার নিয়ে এসেছেন। তিনি রবীন্দ্রনগর গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। বিভিন্ন সময় দুঃস্থ ছাত্রীদের নিয়ে তিনি কাজ করছেন। পিছিয়ে পড়া মেয়েরাই তার স্কুলে পড়ে। সেই স্কুলকে তিনি এগিয়ে দিতে বিরাট ভূমিকা পালন করছেন। সম্প্রতি তিনি কোয়েল মন্ডল নামে এক ছাত্রীকে সূর্যসেন মহাবিদ্যালয়েে ভর্তির জন্য চার হাজার টাকা প্রদান করেছেন। ওই ছাত্রীর পরিবার হতদরিদ্র। টাকার অভাবে কলেজে ভর্তি না হতে পেরে ওই ছাত্রীর পড়াশোনা থমকে যাচ্ছিল।দুর্বাদেবী এজন্য শিক্ষা দরদী ভূমিকা পালন করেন। শিলিগুড়ি মহকুমার পিছিয়ে পড়া একটি স্কুল ছিল বিধাননগরের মুরলিগঞ্জ হাই স্কুল।সেই স্কুলে সব পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েরা পড়তো।সেই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসাবে কাজে যোগ দিয়ে স্কুলটিকে রাজ্যের অন্যতম মডেল স্কুল হিসাবে পরিনত করেছেন সামসুল আলম।সামসুল আলম দিনরাত পরিশ্রম করেছেন স্কুলটির জন্য।সে স্কুলে কোনও শিক্ষক প্রাইভেট টিউশন করেন না। স্কুলের ছেলেমেয়েরাই সে স্কুলের সব শিক্ষকের কাছে সম্পদ।
বিশ্বজিৎ রায়। নাট্য ব্যক্তিত্ব হিসাবেই সকলে তাকে চেনেন। তিনি আসলে মার্গারেট হাইস্কুলের শিক্ষক। অনেক দুঃস্থ এবং মেধাবীকে তিনি বিনে পয়সায় পড়িয়ে চলেছেন।তাছাড়া চা বাগানে গিয়ে পিছিয়ে পড়াদের মধ্যে নাট্য চর্চা বাড়িয়ে তুলে এক সুন্দর পরিবেশ তৈরি করছেন তিনি। নাটকের মাধ্যমে সামাজিক কাজ চালিয়ে শিলিগুড়ি ও তার আশপাশে তিনি নজির তৈরি করেছেন।
শিল্পী পালিত।বীণাপাণি শিল্পী হিসাবে তিনি পরিচিত।তিনি একজন সঙ্গীত শিক্ষিকাও। সিনি হোমে থাকা অসহায় মেয়েদের তিনি বিনে পয়সায় সঙ্গীত শিখিয়ে চলেছেন।তাছাড়া অসহায় মেয়েদের গান শুনিয়ে তাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে নিজের সুর করা সামাজিক সচেতনতার গান তিনি পরিবেশন করছেন সমাজের স্বার্থে।
সুপর্না রায়।বাড়ি শিলিগুড়ি বাবুপাড়ায়। তিনি একজন গৃহবধূ হলেও শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া গুলমা চা বাগানের শ্রমিক বস্তিতে নিয়মিত যাচ্ছেন।বস্তির ছেলেমেয়েদের বিনা পারিশ্রমিকে তিনি পড়াশোনা শিখিয়ে চলেছেন।তার এই প্রয়াস অসামান্য।
শিক্ষক দিবসে সমাজের জন্য ব্যতিক্রমী কাজ করা এইসব শিক্ষক শিক্ষিকাদের খবরের ঘন্টা কুর্নিশ জানায়। অপরদিকে শিলিগুড়ি আনন্দময়ী কালিবাড়ি সমিতির তরফে ভাস্কর বিশ্বাস জানাচ্ছেন, বুধবার তারা বেশ কয়েকজন শিক্ষককে সংবর্ধনা দেবেন কালিবাড়ি চত্বরে।তাদের উদ্যোগে দুঃস্থ এবং মেধাবীদের একটি কোচিং ক্যাম্প চলে। বিনে পয়সায় দুঃস্থ এবং মেধাবীদের পড়ানো হয় কালিবাড়ি চত্বরে। যেসব শিক্ষক সেখানে বিনা পারিশ্রমিকে পড়ান তাদেরকে সেখানে বুধবার সংবর্ধনা দেওয়া হবে।এদিকে শিলিগুড়ি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনেও দীর্ঘদিন ধরে বিনাপারিশ্রমিকে কোচিং ক্লাস চলছে।অষ্টম থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে পড়ান হয় এবং বিনামূল্যে বইও দেওয়া হয়, জানাচ্ছেন হিন্দোল সেনগুপ্ত।