” তোমরা যে সব বুড়ো খোকা”, দেখেছেন এই শিশু কিশোরদের সব বিজ্ঞান প্রতিভা?

বাপি ঘোষ ঃ বিখ্যাত লেখক ও সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায় তার খুকু ও খোকা ছড়া-কবিতায় সামান্য ব্যঙ্গের সুরে কিছু লাইন লিখেছিলেন। তার থেকে সামান্য কয়েকটি লাইন এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে হচ্ছে। কিন্তু কেন হঠাৎ এই কবিতার লাইন প্রতিবেদনে, সে প্রসঙ্গে পরে আসছি।তার আগে ছড়া-কবিতার কিছু লাইন উল্লেখ করতে হচ্ছে।
“তেলের শিশি ভাঙল বলে/
খুকুর পরে রাগ করো/
তোমরা যে সব বুড়ো খোকা/
ভারত ভেঙে ভাগ করো!
তার বেলা?”
কবি আরেক স্থানে লিখেছেন, “যুদ্ধ জাহাজ জঙ্গী মোটর/
কামান বিমান অশ্ব উট/
ভাগাভাগির ভাঙাভাঙির/
চলছে যেন হরির-লুট!/
তার বেলা?”
হ্যা,আসলে আমরা মানে বুড়ো খোকার দল নিজেরা বিভেদ হিংসা করেই শেষ হয়ে চলেছি কিন্তু আমাদের সামনে যে নতুন প্রজন্ম আসছে তাঁরা কিন্তু দেশ ও সমাজ নিয়ে বহু কিছু চিন্তা করছে।এই যে এত পথ দুর্ঘটনা ঘটছে,এত মানুষের প্রান চলে যাচ্ছে আমরা তা প্রতিরোধ করতে কতটা কি করতে পেরেছি? ট্রেনে কাটা পড়ে প্রায়ই হাতির মৃত্যু হচ্ছে। কতটুকু আমরা তা ঠেকাতে পেরেছি।নতুন যুগের শিশু কিশোরেরা কিন্তু এসব নিয়ে ভাবছে।নতুন নতুন উদ্ভাবনী ভাবনা ওদের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসছে বিজ্ঞানের আলোকে।এই ডিজিটাল যুগে ওরা স্মার্ট রোড এবং ডিজিটাল হাইওয়ে তৈরির ভাবনা বিজ্ঞান মডেল আকারে মেলে ধরছে।যেমন নকশালবাড়ির পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রী সমৃদ্ধি ঘোষ তাঁর দাদা সাগর ঘোষের সহযোগিতা নিয়ে সেই মডেল তৈরি করে সাড়া ফেলে দিলো।শনিবার এবং রবিবার শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া রাজগঞ্জের পুঁটিমারী সারদা বিদ্যামন্দিরে প্রাদেশিক গনিত বিজ্ঞান মেলা ২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে ২৭৯ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিভাগে অংশ নেয়। বিভিন্ন বিজ্ঞান মডেল ও গনিতের নানা দিক মেলে ধরার মাধ্যমে চতুর্থ থেকে দ্বাদশ শ্রেনী পর্যন্ত ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন বিভাগে প্রমাণ করে দেয়,তাদের প্রতিভা রয়েছে। তাঁরা যে চিন্তাভাবনা বা বিজ্ঞান সৃজনশীলতায় বড়দের থেকেও কোনো অংশে কম নয় তার বহু প্রতিফলন মেলে ধরেছে ওরা। আজ কিছু বুড়োর দল “তোরা ছোট” বলে অবহেলা করলেও ওরাও যে একদিন বড় হয়ে সুন্দর ভারত গড়ে প্রমান করে দিতে পারে যে ওদের অবহেলা করা ভুল হয়েছে। যেমন ধরুন তুফানগঞ্জ সারদা শিশু তীর্থের শিশু ছাত্র অংশুমান উপাধ্যায় এই বয়সেই মডেল তৈরি করে বার্তা দিচ্ছে, কিভাবে রাস্তার আলো সবসময় জ্বালিয়ে না রেখে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যায়।ফালকাটা সারদা শিশু তীর্থের প্রতীক সাহাতো এই বয়সেই স্বচ্ছ ভারতের মডেল তৈরি করে সকলের মধ্যে জানান দিচ্ছে,যত্রতত্র ময়লা ফেলা উচিত নয়,যেখানে সেখানে মলমূত্রত্যাগ করা উচিত নয়।মালদার সামসি থেকে আসা সপ্তর্ষি ঘোষ প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে সুন্দর সচেতনতার মডেল তৈরি করেছে।ওর বাবা জয়ন্ত ঘোষ বলেন,প্রকৃতি নিয়ে আমাদের সচেতন হওয়ার সময় এসেছে। কেন আজ বিশ্ব উষ্ণায়ন,কেন এতো গরম বাড়ছে, কেন সবুজায়ন হচ্ছে না— কেন এতো ভূমিকম্প, কেন অগ্ন্যুৎপাত,বন্যা,খরা— মানুষ কিভাবে প্রকৃতির ক্ষতি করছে — আমাদের এখন প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে বাঁচার জন্য কি কি করনীয়, বিজ্ঞান মডেলের মাধ্যমে শিশু কিশোরেরা সব মেলে ধরেছে সেই মেলায় যা এককথায় অসাধারণ এবং উচ্চ মেধার বার্তাই দিয়েছে। আমরা বয়স্ক মানুষরা একটু সময় করে এই সব শিশুদের বিজ্ঞান প্রতিভাকে কেন মর্যাদা দিতে পারছি না? ওদের মধ্যে থেকেই আগামীদিনের ডঃ এ পি জে আব্দুল কালাম,জয়ন্ত বিষ্ণু নারলিকারের মতো বিজ্ঞানীরা বেরিয়ে আসবে না তা কে বলতে পারে? সারদা বিদ্যামন্দির পুঁটিমারীর সহকারী প্রধানাচার্য বাপি দাস বলেন,পড়াশোনা করে শুধু ব্যক্তিগত অর্থ উপার্জন নয়,সমাজ ও দেশের জন্য ভবিষ্যতে এই ছেলেমেয়েরা যাতে কিছু দিতে পারে সেই দিকে তাকিয়েই তাদের শিক্ষা প্রদান চলছে ।
বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন–