কবিতার নেশা দিয়েই হইচই সুলেখার

বাপী ঘোষ ,শিলিগুড়িঃ দিনরাত কবিতা লেখার নেশায় মগ্ন শিলিগুড়ির সুলেখা সরকার। কখনও রাত জেগে ,কখনও সকাল থেকে সন্ধ্যে তিনি লিখে চলেছেন। বিয়ের আগেও লিখতেন। কিন্তু বিয়ের পর সাংসারিক নানান চাপে বিচ্ছেদ ঘটে লেখালেখির সঙ্গে। এখন মেয়ে একটু বড় হতেই বিগত এই আড়াই বছরের মধ্যেই তিনি তার কবিতার বই এবং প্রবন্ধ প্রকাশ করে দুই বঙ্গের বহু কবি সাহিত্যিকের কাছে পৌঁছে গিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ সহ সাহিত্য কলা জগতের বহু গুনি জনের সংস্পর্শে এসেছেন বিগত এক দুই বছরের মধ্যে। আর উত্তরবঙ্গের কবি সাহিত্যিক এমনকি মহিলা মহলে বেশ ঝড় তুলেছেন তিনি। সেই কবি স্নিগ্ধসত্তা সুলেখা সরকার পরিস্কারই বলেন, মহিলারা অনেকেই সুন্দর শাড়ি, গয়না পড়ে সেজেগুজে থাকতে ভালোবাসেন। আমার কাছে গয়না হল কবিতা, কবিতার শব্দ, কবিতার ভাব প্রকাশ।
কবিতা আর প্রবন্ধ লেখা তার শুরু স্কুল জীবন থেকে। যখন তিনি ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়েন তখন থেকেই শুধু লেখা আর লেখা। উত্তরবঙ্গের কবি সাহিত্যিক মহলেও ভালো প্রবেশ করেছিলেন। বিয়ের পর সেসবে ছেদ চলে আসে। এখন আবার তিনি কবিতায় মগ্ন। রাতের পর রাত জেগে লিখে চলেছেন কবিতা। বিগত আড়াই বছরের মধ্যে তার চারটে যৌথ কবিতা সংকলন বেরিয়েছে। কবিতা কাফে, মগ্ন পদাবলী, সময়ের সাথে কবিতার কাছে এবং এপার ওপার। এপার বাংলার কবিদের সঙ্গে যেমন তার কবিতার বই আছে তেমনই ওপার বাংলার কবিদের সঙ্গেও যৌথ সংকলন আছে। তার একক সংকলন রয়েছে, যে কথার অন্তর্বাস নেই। তার বাইরে প্রকাশ পেতে চলেছে দুটি একক সংকলন , তাই ফিরে গেছে পথ এবং সখাপর্ব। কবিতাই তার কাছে নেশা। এই অল্প সময়ের মধ্যেই দুবার বাংলাদেশের ঢাকায় গিয়েছেন কবিতা পাঠের আসরে যোগ দিতে। একবার ঢাকার বাংলা একাডেমীতে নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন আরেকবার বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের সাহিত্য সম্মেলনে। সেখানেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার দেখা এবং তার সংস্রব ধরে রাখতে ছবি তোলা। সেখানেই বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষের সঙ্গে পরিচয় এবং ছবি ধরে রাখা। এভাবে আরও অনেক সেরিব্রিটি কবি সাহিত্যিকের সংস্পর্শে আসা এপার বাংলা, ওপার বাংলায়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কবিতা একাডেমীর কবিতা উৎসবে যোগ দিয়ে স্মারক নিয়ে আসার অভিজ্ঞতাও আছে তার। তার বাইরে বরাক উপত্যকার মাতৃভাষা সুরক্ষা সমিতির পক্ষ থেকে সাহিত্য স্মারক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ শিলচর থেকে সাংস্কৃতিক স্মারক, উত্তরবঙ্গ সাহিত্য উৎসব থেকে সাহিত্য স্মারক, নেতাজি প্রনবানন্দ বিবেকানন্দ স্বপ্ন তীর্থ থেকে সাহিত্য স্মারক, শব্দসাকো সাহিত্য স্মারক এবং টারমিনাস অনন্য প্রয়াস সাহিত্য স্মারক পাওয়ার অভিজ্ঞতা তার হয়েছে। কবিতা লিখেছে হাজারেরও বেশি। আগামীতে দেশ-জাতি-ধর্ম, বেকারত্ব, নিরক্ষরতা নিয়ে কিছু কবিতা লিখছেন। গাণিতিক সূত্র ধরেও কিছু কবিতা লিখেছেন। নবনিতা দেবসেন, শুভ সরকার, শাওলি মিত্রদের মতো স্বনামধন্যদের নিয়ে বের হওয়া পত্রিকাতেও তার লেখা কবিতা একই সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে কোন কোন পত্রিকায়। একদিনে ৫৬ টি কবিতা লেখার অভিজ্ঞতাও তার আছে। আবার কোচবিহারের রাজ পরিবারের অন্তঃপুরে সাহিত্য চর্চা নিয়ে প্রবন্ধ লিখতে গিয়ে কোচবিহারে গিয়ে দিনের পর দিন তাকে পড়ে থাকতে হয়েছে। এখন তার ইচ্ছে ভারত সরকারের সাহিত্য একাডেমীতে কবিতা পাঠ করা। এখন তিনি বলছেন, প্রত্যেক মাতৃ ভাষা সংরক্ষিত হোক। আজ বহু ভাষা লুপ্ত প্রায়। উত্তরবঙ্গের জনজাতিদের ভাষা নিয়েও তিনি কিছু কাজ শুরু করেছেন। তার কাছে প্রতিদিন জীবন ধারনের জন্য অন্ন গ্রহনের চেয়েও বেশি মূল্যবান সাহিত্য বা কবিতা চর্চা চালিয়ে যাওয়া।সুলেখা তার বহু কবিতার মধ্যে একটি কবিতায় বলেছেন, আমাদের ধর্মের নাম সাদা/ আমাদের কর্মের নাম সাদা/ আমরা অক্ষর থেকে বর্ণমালা। এই ভাবনা তিনি বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে চলেছেন। আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি সমিতির শিলিগুড়ি শাখার কর্মকর্তা সজল গুহ জানিয়েছেন, তাদের গর্ব যে সুলেখা সরকার তাদের সংগঠনের সদস্যা। কবিতা ও লেখালেখির মাধ্যমে সুলেখা বেশ কিছুদিন ধরে দারুন কাজ করে যাচ্ছেন।