পেনশনের টাকায় মহালয়ার অনুষ্ঠান অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের

নিজস্ব প্রতিবেদ, শিলিগুড়িঃ একদল শিক্ষক আছেন যারা স্কুলে চাকরি করার পাশাপাশি চুটিয়ে বাড়ি বসে প্রাইভেট টিউশন করে। তাদের টিউশন নিষিদ্ধ হলেও লুকিয়ে লুকিয়ে টিউশন করে। সমাজ চুলোয় গেলেও তাদের কোনও যায় আসে না। শিক্ষকরা সমাজের বন্ধু, সমাজের প্রতি তাদের বিরাট দায়বদ্ধতা রয়েছে, তাদের প্রতি মানুষের বিরাট শ্রদ্ধা রয়েছে এই ভাবটি এইসব শিক্ষক নষ্ট করতে বসেছে তাদের অশিক্ষক সুলভ আচরনের মাধ্যমে। একদিকে এমন ছবি থাকলেও অন্যদিকে ভালো সমাজবন্ধু শিক্ষকও রয়েছেন। আর এই ভালোদের মধ্যেই একজন শিলিগুড়ি ঘোঘোমালির অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অমর দত্ত। তিনি তার মহানুভব কাজের মাধ্যমেই বহু দুঃস্থ মানুষের কাছে অন্যরকম মানুষ হয়ে উঠেছেন।সারা জীবন তিনি শিক্ষকতা করেছেন। শিলিগুড়ি বয়েজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষকতার পাট চুকিয়ে অবসরগ্রহন করেছেন অনেকদিন আগেই। কিন্তু মানুষ বিশেষ করে সমাজের জন্য কিছু কাজ করে যাওয়ার নেশা এই ৭৬ বছর বয়সে এসেও তার থমকে যায়নি। চোখে সামান্য ছানি পড়েছে,হাই প্রেসার রয়েছে, হার্ট ও কোলেস্টরলের ওষুধ তাকে নিয়মিত খেতে হয়। তবুও পেনশনের টাকায় প্রতিবছর মহালয়ার দিন দুঃস্থ মহিলাদের হাতে শাড়ি তুলে দেওয়ার সেবামূলক কাজ তিনি বন্ধ করেননি।তার পাশাপাশি আগমনী ও মহিষাসুর মর্দিনী অনুষ্ঠানও করছেন প্রতিবছর।এবারে সেই তালিকায় অবশ্য সংযোজিত হয়েছে, খবরের ঘন্টা সম্পাদকের লেখা সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফের গান, নারী ও শিশু পাচার এবং প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের দূষনের গান। পত্রিকার সহ সম্পাদিকা বীণাপাণি শিল্পী তার টিম নিয়ে সেই সব সামাজিক সচেতনতার গানগুলো পরিবেশন করবেন সোমবার বিকালে।অমরবাবুর বাড়ি ঘোঘোমালি ফলবাজার রোডে সোমবারের সেই ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানে সাহুডাঙি রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ আশ্রমের স্বামীজি বিনয়ানন্দ মহারাজ এবং স্বামী জীবনানন্দ মহারাজ উপস্থিত থাকবেন। অমরবাবু জানিয়েছেন, মহিলারা সব দেবী ভগবতীর অংশ। অথচ এই পুজোয় টাকার অভাবে বহু মহিলা নতুন শাড়ি পড়তে পারেন না। তাই তাদের পাশে থাকার সামান্য প্রয়াস মাত্র। অমরবাবুর স্ত্রী প্রয়াত কনিকা দত্তও শিক্ষিকা ছিলেন। তবে শুধু মহালয়া নয়,বড় দিন,লোকনাথজয়ন্তীতেও দুঃস্থদের সেবায় নিজেকে তিনি নিয়োজিত করেন পেনশনের টাকায়। তার কথায়,এখানে চিরকাল থাকতে আসিনি। চলে যাওয়ার সময় কিছু নিয়ে যাবো না। তাই দিয়ে যাও। তার পুত্র বাসবজিত দত্ত ওরফে বাসুও সমাজসেবার মধ্যে প্রায়ই নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। তাদের এই কর্মকান্ড কিন্তু এলাকায় বহু লোকের কাছে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে।