সদ্যোজাত শিশুর কান্না, প্রসব বেদনায় ছটফট করা মায়ের আর্তনাদের মধ্যেই শিলিগুড়িতে নার্সিং হোম ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো

নিজস্ব প্রতিবেদন ঃ কোনো মায়ের উঠেছিল প্রসব বেদনা, কোনো শিশু সবে ভূমিষ্ঠ হয়েছে। তারমধ্যেই চারপাশে বিরাট বড় হাতুড়ি দিয়ে ভাঙাভাঙির শব্দ। জে সি বি নার্সিংহোমের মধ্যে। বৃহস্পতিবার সকালে এভাবেই শিলিগুড়ি আশ্রমপাড়ার একটি নার্সিং হোমের কিছু অংশ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলো শিলিগুড়ি পুরসভা। পুরসভার বক্তব্য, নার্সিং হোমের কিছু অংশে বেআইনি নির্মাণ হয়েছিল। শেষে হাইকোর্টের নির্দেশে তাদেরকে অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে হয়েছে। নার্সিং হোমের বক্তব্য, এইরকম ভাঙাভাঙির আগে তাঁরা নোটিশ পাননি।তবুও পুরসভাকে তাঁরা সহযোগিতা করেছেন।
শিলিগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ হিসাবে দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে একটি উল্লেখযোগ্য নাম ডাক্তার জি বি দাস। স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ হিসাবে তাঁর সুনাম গোটা উত্তর পূর্ব ভারতে বিস্তৃত।সেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ জি বি দাসের নার্সিংহোমে অবৈধ নির্মাণ তৈরি হয়েছিল বলে পুরসভার অভিযোগ ।শিলিগুড়ি আশ্রমপাড়ার পাকুড়তলা মোড়ে লাগোয়া সেই নার্সিংহোমে অবৈধভাবে ঘর ও টিনের শেড তৈরি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। পুরসভার বক্তব্য, এই নির্মানের জন্য পুরসভা থেকে কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি বা প্ল্যান পাশ করানো হয়নি। বহুদিন ধরে শিলিগুড়ি পুরসভা বিষয়টি খতিয়ে দেখা শুরু করে।নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে নোটিশও দেওয়া হয় ।পরে বিষয়টি চলে যায় হাইকোর্টে। শেষমেষ হাইকোর্ট পুরসভাকে ওই অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়। সেই অনুযায়ী বৃহস্পতিবার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে নার্সিংহোমে হাজির হন পুরসভার কর্মীরা। তাঁরা এরপর নার্সিং হোমের কিছু অংশ ভেঙে দেন।পুরসভার একজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার এ ব্যানার্জি জানিয়েছেন,আদালতের নির্দেশ মেনে ওই নার্সিং হোমে অবৈধ নির্মাণ ভাঙা হয়েছে। পুরসভার ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার বলেছেন, পুরসভা নিয়ম মেনেই সব কাজ করেছে। শহরে এরকম আরও যেসব বেআইনী নির্মানের অভিযোগ রয়েছে সব ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই নার্সিংহোমে তরফে ডা: জিবি দাসের বক্তব্য , দূরদূরান্ত থেকে অনেক রোগী আসে। রোগীর পরিবারের জ লোকজনের বসার জন্য কিছু বন্দোবস্ত করা হয়েছিল৷পুরসভা তাদেরকে জানানোর পর ভাঙার কাজ শুরুও হয়ে গিয়েছিল।তাঁরা পুরসভাকে সমস্ত সহযোগিতা করেছেন।তবে তিনি এই ঘটনার জেরে অত্যন্ত দুঃখ পেয়েছেন বলে ডাঃ জি বি দাস জানান।নার্সিং হোমের কর্মী বিকাশ ঘোষ বলেন, আগের থেকে তাঁরা কিছু জানতে পারেননি।নার্সিং হোমে অনেকে প্রসব বেদনা নিয়ে ভর্তি হয়।অনেক সদ্যোজাত শিশু রয়েছে। হাতুড়ি ইত্যাদির শব্দে এইসব শিশু এবং মায়েদের এদিন কষ্ট হয়েছে। সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া শিশু আতঙ্কে বারবার ডুকরে উঠেছে। টিকা নিতে আসা শিশু ও তাদের মায়েরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। হঠাৎ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার শব্দে গর্ভবতী মা নার্সিং হোমের মধ্যে এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত আতঙ্কে ছোটাছুটি করেছে বলে বিকাশবাবু জানান।তার মতে, মানবিকতা বলে কি কিছু নেই নাকি।আইএমএর শিলিগুড়ি শাখার সভাপতি ডাঃ মলয় চক্রবর্তী বলেন, একজন ডাক্তারকে রোগীর স্বার্থে সবসময় সহযোগিতা করা উচিত সমাজের।
এদিন নার্সিং হোমের সামনে ওই ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য দেখা দেয়।