ডিগ্রী না থাকলেও উত্তরবঙ্গের কলেজগুলোতে এখন বিশেষ বক্তা পদ্মশ্রী করিমুল

বাপি ঘোষ, শিলিগুড়িঃ লেখাপড়া তার বেশি নেই, কিন্তু উত্তরবঙ্গের কলেজগুলোতে এখন প্রায়দিনই তাকে ভাষণ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রন জানানো হচ্ছে। আর কলেজগুলোতে স্নাতক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের সামনে ভাষণ দিয়ে তিনি বেশ হাততালি কুড়চ্ছেন। পদ্মশ্রী পাওয়া করিমুল হক এভাবেই পরিবেশ বদলে দেওয়ার কাজে নেমেছেন। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে রক্তদান থেকে শুরু করে অন্য অনেক কাজে তাকে এখন ডাকা হচ্ছে। আর তার এই কাজের জন্য তার স্ত্রী আঞ্জুয়া বেগমের অবদানও আছে।শনিবার তাই শিলিগুড়ির একটি সংস্থা আঞ্জুয়া বেগমকে সংবর্ধনা দিয়েছে।
ডুআরসের মালবাজার থেকে একটু এগোলেই আছে ক্রান্তি নামের গ্রাম। সেই গ্রামের পাশেই আছে রাজাডাঙ্গা অঞ্চল। সেই গ্রামেই বড় হয়েছেন করিমুল হক। একসময় তার মায়ের চিকিৎসা তিনি করাতে পারেন নি। গ্রামে ছিল না এ্যাম্বুলেন্স। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে অসুস্থ মানুষদের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার লোক ছিল না। তিনি এরপর নিজে বাইক এ্যাম্বুলেন্স তৈরি করে গ্রামের মানুষদের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া শুরু করেন। আর তার এই প্রয়াসের জেরে বহু মানুষের প্রান বাঁচে। শেষে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী সম্মান দিয়েছে। পদ্মশ্রী পাওয়ার পর উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে করিমুলকে নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গেলে করিমুলের সঙ্গে সেলফি তোলার হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। এখন যা হচ্ছে তা হল, বিভিন্ন কলেজে করিমুলকে আমন্ত্রন জানিয়ে তার বক্তব্য মেলে ধরা হচ্ছে। আলিপুরদুয়ার কলেজ থেকে ময়নাগুড়ি কলেজ, মালবাজার কলেজ সর্বত্র তাকে বক্তব্য রাখতে হচ্ছে। কিন্তু কি নিয়ে তিনি বক্তব্য রাখছেন, তার কথায়, নেশা করা যাবে না । মেয়েদের সম্মান করতে হবে। জাত আর ধর্মের বিভেদ করা যাবে না। দেশকে ভালবাসতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের সামনে তার বক্তব্য বেশ দাগ কাটছে। পড়ালেখা তিনি করেছেন সপ্তম শ্রেনী পর্যন্ত। কিন্তু সমাজে মুল্যবোধ বাড়াতে তার এই বক্তব্য কিন্তু আলোচনার বিষয় হয়ে উঠছে।
শুধু কলেজে ভাষণ দেওয়াই নয়, বিভিন্ন ভাবে নিজেকে সমাজের কাজে লাগিয়ে চলেছেন করিমুল। পদ্মশ্রী পাওয়ার পরেও তার মনে অহংকার প্রবেশ করে নি। তার বাড়িতেই তিনি একটি হাসপাতাল তৈরি করছেন। দুঃস্থ মানুষদের জন্য তিনি সেবা করবেন সেই হাসপাতালে। তার বাইরে দুঃস্থ ও মেধাবিদের তিনি সাহায্য করছেন। সামনে তার ওপর একটি সিনেমা তৈরি হচ্ছে। ফিল্মি স্টার শাহরুখ খানের স্ত্রী গৌরি খান সেই ছবির প্রযোজক। ফিল্মে করিমুল হকের নাতি ফারহা খান অভিনয় করবে। ফারহা খানের ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে। সে তার দাদুর ভুমিকায় ছোটবেলার অভিনয় করবে। করিমুল জানিয়েছেন, সেই ফিল্ম থেকে ৫০ শতাংশ টাকা তার কাছে আসার কথা। আর সেই টাকা পেলে গরিব মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। তার বাইরে যাদের বাড়ি নেই তাদের বাড়ি তৈরি করে দিতে প্রয়াস নেবেন। কোথাও রাস্তাঘাট ভাঙ্গা থাকলে তা তৈরি করে দেবেন।
ইংরেজি বিশেষ জানেন না করিমুল । তবে পদ্মশ্রী পাওয়ার পর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে তার নাম ছড়িয়ে পড়েছে, বিভিন্ন স্থান থেকে তার কাছে ফোন আসছে। দুই চারটে ইংরেজি শব্দ শিখে নিয়েছেন। আর তা দিয়েই বিদেশিদের বলে যাচ্ছেন, হিন্দি বা বাংলায় কথা বলার জন্য। গত বছর তিনি উত্তরবঙ্গে ২১ টি পুজোর ফিতে কেটে পুজো উদ্বোধন করেছেন। কালি পুজোয় সাতটি পুজো উদ্বোধন করেছিলেন। এবারেও বিভিন্ন পুজো কমিটি তাকে পুজো উদ্বোধন করার জন্য ডাকা শুরু করেছে। তাদের এলাকার এক মন্দিরের পুরোহিত প্রায়ই তার গাড়িতে পুজোর ফল ভরে দিচ্ছেন।সেইসব দেখে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলছেন, মানুষের সেবা করাই হল আসল ধর্ম। আজ কারো মধ্যেই ধর্ম বা জাত নিয়ে বিভেদ থাকা উচিত নয়।