
নিজস্ব প্রতিবেদন ঃ শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী তিথি থেকেই প্রকৃতপক্ষে যোগমায়া বা মহামায়ার তিথি শুরু হয়। কারণ এই অষ্টমী তিথিতেই যোগমায়া আবির্ভূত হয়েছিলেন। দস্যু রাজা কংস যখন কারাগরের মধ্যে দেবী দুর্গাকে আছাড় মেরেছিলেন তখন দেবী দুর্গা সতর্ক করেছিলেন কংসকে — তোমারে যে বধিবে গোকূলে বাড়িছে সে।দেবী দুর্গা কংসকে কার্যত এই বার্তা দিয়েই সাবধান করে দিয়েছিলেন, তুমি তোমার আসুরিক বৃত্তিগুলো নাশ করো— তুমি দস্যুবৃত্তি বা আসুরিক প্রবৃত্তি থেকে সরে এসে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নিজেকে সমর্পন করো, নিজের ভুল সংশোধন করো। কিন্তু তারপরও কংস তাতে কর্ণপাত করেনি। শেষে কংসের অত্যাচার থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করার জন্য কংস বধ করেছিলেন স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। এই জগতে সাধারণ মানুষ মায়ার দ্বারা আশ্রিত কিন্তু ঈশ্বর যখন অবতার পুরুষ রূপে জগতে আবির্ভূত হন তখন যোগমায়াকে সঙ্গে নিয়েই আবির্ভূত হন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আবির্ভাবের সময় স্বয়ং যোগমায়াকে নিয়েই আবির্ভূত হয়েছিলেন। এই যোগমায়া এবং মায়া এই দুটো নিয়েই যোগমায়া পরিচালনা করছেন মায়ার সংসার। মা দুর্গাই হলেন যোগমায়া এবং মায়া। মা দুর্গা জগতের কল্যানের জন্য অশুভ শক্তির প্রতীক মহিষাসুর বধ করেছেন। আবার তিনি রক্তবীজ বধ করেছেন। মা দুর্গা হলেন দুর্গতিনাশিনী। মা দুর্গা এই সংসারে শুভ শক্তির প্রসার চান। প্রত্যেক মানুষ তার দুর্গতি থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে ভালো থাকুক,এটাই চান মা দুর্গা। আর মানুষ যাতে ভালো থাকতে পারে তারজন্য মানুষের কতগুলো বৃত্তি ধ্বংস করে মানুষকে শুভ রাস্তায় চলা প্রয়োজন। দেবী দুর্গার আরাধনা মানে নিজের ভিতরের আসুরিক প্রবৃত্তিগুলির নিবৃত্তি করা অর্থাৎ আমাদের অহংকার, ক্রোধ, লোভ, মোহ প্রভৃতি থেকে সরে আসা। আর সেই আসুরিক প্রবৃত্তি থেকে সরে এলেই আমাদের দেবী দুর্গার আরাধনা সার্থক হবে। শারদীয়া দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী তিথিতে এভাবেই নিজের ভাবনা মেলে ধরলেন শিলিগুড়ি প্রধান নগরের শ্রী রামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ ও আশ্রমের সহ-সম্পাদক স্বামী রাঘবানন্দ মহারাজ। স্বামী রাঘব মহারাজ আসন্ন শারদীয়া দুর্গোৎসব সম্পর্কে জানাতে গিয়ে আরো বলেছেন, ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব আমাদের বার্তা দিয়ে গিয়েছিলেন–তোমাদের চৈতন্য হোক অর্থাৎ তোমাদের জ্ঞান হোক, তোমাদের সঠিক বিচার বুদ্ধি তৈরি হোক। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বারবার কুমারী পুজোর কথা বলে গিয়েছিলেন। ঠাকুর বলেছিলেন কুমারী পুজোর মাধ্যমে দেবী দুর্গার আরাধনা করা যায়। দেবী স্বয়ং মহাশক্তিরূপে কুমারীদের মধ্যে অবস্থান করেন। কুমারীদের পুজোর মাধ্যমে দেবী দুর্গার আরাধনা করা হয়। শুধু কুমারী নয়, সমস্ত নারী শক্তির মধ্যেই দেবী দুর্গার ভাব প্রতিফলিত হচ্ছে।তাই আসন্ন শারদীয়া উৎসবে মা দুর্গার পুজো তখনই সার্থক হবে যখন আমরা জীবন্ত নারীদের শ্রদ্ধা বা সম্মান জানাতে পারব ।
বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন—
