পুরনো বুট পায়ে জাতীয় মঞ্চে ঝলসে উঠল মালিতা মুন্ডা—বাংলার গর্ব এই আদিবাসী কিশোরী এখন ভারতীয় দলে নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে

নিজস্ব প্রতিবেদন:
পায়ের বুট বহু আগেই জীর্ণ হয়ে গেছে। নতুন ভালো বুট পরে মাঠে নামার ইচ্ছে থাকলেও পরিবারের সামর্থ্য নেই। তবুও পুরনো সস্তা বুট পায়েই বাংলার মান উঁচুতে তুলেছে আদিবাসী প্রতিভাময়ী কিশোরী ফুটবলার মালিতা মুন্ডা। শিলিগুড়ি মহকুমার নকশালবাড়ি হিন্দি জুনিয়র হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সে।

সম্প্রতি অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুরে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে মেয়েদের জাতীয় ফুটবল প্রতিযোগিতা। সেই টুর্নামেন্টে বাংলা রানার্স আপ হয় এবং মনিপুর চ্যাম্পিয়ন হয়। কিন্তু শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাংলাকে ফাইনালে তুলে আনার নেপথ্যে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল মালিতার। ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, বিহার—সব দলকে টপকে ফাইনালে ওঠার পথে প্রতিটি ম্যাচেই একটি করে গোল করে উজ্জ্বল ভূমিকা নেয় এই হতদরিদ্র আদিবাসী কিশোরী।
শিলিগুড়ি মহকুমার
খড়িবাড়ি থানার টুকুরিয়াঝাড় ফরেস্টের কাছেই মালিতাদের ভাঙাচোরা বাড়ি। বাবা দিনমজুর, মা প্রায় প্রতিবন্ধী হওয়ায় সবসময় বাড়িতেই থাকেন। সেই প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়েটি বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখেই এগিয়ে চলেছে। খড়িবাড়ি বুড়াগঞ্জে তরাই এডুকেশনাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি পরিচালিত তরাই স্পোর্টস একাডেমিতে প্রশিক্ষক লোকনাথ বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত ফুটবল অনুশীলন করে মালিতা। সেখান থেকেই নকশালবাড়িতে গিয়ে সে পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছে।

অভাব, অপুষ্টি, নতুন বুট কেনার সামর্থ্য না থাকা —কোনো কিছুই থামাতে পারেনি মালিতাকে। সদ্যসমাপ্ত জাতীয় প্রতিযোগিতায় বাংলা মেয়েদের ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছানোর পেছনে তার অসামান্য অবদানই সবচেয়ে বড় শক্তি।

এবার মেয়েদের জাতীয় ফুটবল দলের জন্য ট্রায়াল অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বেঙ্গালুরুতে। সেখানে বাংলা থেকে একমাত্র ডাক পেয়েছে শিলিগুড়ি মহকুমার এই কিশোরী মালিতা মুন্ডা। ট্রায়ালে উত্তীর্ণ হতে পারলে দেশের জার্সি গায়ে মাঠে নামার সুযোগ পাবে সে—ঠিক যেমন শিলিগুড়ির রিচা ঘোষ আজ ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের সদস্য।

কোচ লোকনাথ বিশ্বাস জানিয়েছেন, তরাই স্পোর্টস একাডেমি স্থানীয় ছেলেমেয়েদের ক্রীড়া প্রশিক্ষণ দেয় মূলত তাদের নেশা থেকে দূরে রাখার উদ্দেশ্যে। মালিতা সেই একাডেমিতে নিষ্ঠার সঙ্গে অনুশীলন করে আজ বাংলার নাম উজ্জ্বল করেছে। তবে এখন তার জরুরি প্রয়োজন আর্থিক সহযোগিতা।
মালিতাকে সাহায্য করতে যোগাযোগ / গুগল পে: 8972802699