কর্পোরেট সংস্কৃতির কাছে বহু চিকিৎসকের আজ হাত-পা বাঁধা,জানাচ্ছেন বিলেত ফেরত এই প্রবীন চিকিৎসক

নিজস্ব প্রতিবেদন ঃ  ইংল্যান্ড যাওয়ার সময় তাঁর পিতা প্রয়াত চন্দ্রমোহন ভাটনগর তাঁকে বলেছিলেন, ডাক্তার হচ্ছো, ঠিক আছে।কিন্তু মানুষের সেবা করবে।টাকার পিছনে ছুটবে না।টাকাপয়সা এমনেই আসবে।বাবার নির্দেশ তিনি সবসময় মনে রেখে চলতেন।ইংল্যান্ডে বিদেশিদের চিকিৎসা সেবা দিলে বহু অর্থ রোজগার করতে পারতেন।কিন্তু সেই দিকে তাঁর নজর ছিলো না।১৯৬৭ সালে ইংল্যান্ডে যান,তিন বছর সেখানে থেকে দেশের মাটিতে ফিরে আসেন। উদ্দেশ্য একটাই, দেশের মানুষের সেবা করা।আজ ৮২ বছর বয়সে পৌঁছে অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডাঃ গীতা চ্যাটার্জী পুরনো দিনের স্মৃতিচারণায় এসব কথাই মেলে ধরলেন খবরের ঘন্টার কাছে। ১৯৬৪ সালে তিনি এম বি বি এস পাশ করেন।পরে বি এইচ ইউ এম ডি পাশ করেন এনাসথেসিয়ার ওপর।১৯৮৫ সালে তিনি কলকাতার পি জি হাসপাতালে দুবছর চাকরি করেন।তারপর চলে আসেন উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে।উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে তিনি এবং তাঁর স্বামী প্রয়াত ডাক্তার পি কে চ্যাটার্জী একসঙ্গে চাকরি করেছেন।কিন্তু মেডিক্যালে চাকরি করতে গিয়ে দেখলেন,নিজের ইচ্ছেমতো কাজ বা রোগী সাধারণের সঠিক ভাবে সেবা করতে পারছেন না।কোনোদিন দেখতেন ওটিতে সূচ সুতো নেই, কোনোদিন কর্মী নেই। ফলে সময় এবং পরিশ্রম দুটোই নষ্ট হচ্ছে দেখে একপ্রকার বিরক্ত হয়েই চাকরি থেকে স্বেচ্ছাবসর গ্রহণ করেন ১৯৯০ সালে। তবে ইংল্যান্ড থেকে দেশের মাটিতে ফিরে এসে প্রথম দার্জিলিং জেলার কালিম্পং এ এক মিশনারী হাসপাতালে এনাসথেসিস্ট চিকিৎসক হিসাবে কাজে যোগ দেন। প্রবীণ এই মহিলা চিকিৎসক বলেন,তখন আমি এবং অন্য সব ডাক্তারদের মূল লক্ষ্য ছিলো কিভাবে রোগীকে বাঁচানো যায়।যেনতেন প্রকারে হোক রোগীকে সুস্থ করে বাঁচিয়ে তোলার জন্য তাঁরা সব শক্তি প্রয়োগ করতেন।আর এখন এই বয়সে এসে তিনি দুঃখ পান এটা দেখে যে অনেক ডাক্তার আজকাল কর্পোরেট সংস্কৃতির কাছে দায়বদ্ধ। আজকের অনেক চিকিৎসক রোগীর ভালো করতে চাইলেও কর্পোরেট সংস্কৃতির কাছে হাত-পা বাঁধা। ফলে বহু রোগীর সেবা করার ইচ্ছে থাকলেও সেই অনুযায়ী কাজ করতে পারেন না বহু চিকিৎসক। এরমধ্যেই ডাক্তার গীতা চ্যাটার্জী সব চিকিৎসকের কাছে অনুরোধ করেন,” আপনারা রোগীর পরিস্থিতি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করুন।যেসব রোগী আর্থিক দিক থেকে অনগ্রসর তাদের কথা বিশেষভাবে চিন্তা করুন।তাদের পাশে দাঁড়ান। কোনো কোনো চিকিৎসক একেকদিনে দুশোতিনশো রোগী দেখেন,এটাও রোগী সাধারণের সঙ্গে একটি অন্যায় কাজ হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
প্রথম লক্ষ্নৌ মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করে এইমসে চিকিৎসক হিসেবেও প্রশিক্ষণ নেন এই অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক। উত্তরপ্রদেশের রায়বেরেলিতে তাঁর পৈতৃক বাড়ি। আগামী পয়লা জুলাই সকলকে চিকিৎসক দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এই বর্ষীয়ান চিকিৎসক। এখনো তাঁর ক্লান্তি নেই, এখন বেশি সময় পরিবারের দেখভালে নজর দিলেও সময় পেলেই অনলাইনে চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন পরামর্শ দেন লোকজনকে।

বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন —–