একসময় শাকসবজির জন্য জমিতে লাঙল দিতেন, আজ মানুষ তৈরির চাষবাসে নেমেছেন এই শিক্ষক

বাপি ঘোষ ঃ কৃষক পরিবারের এই সন্তান কৈশোরে হলদিবাড়ির গ্রামের বাড়িতে জমিতে লাঙল দিয়েছেন। ধান পাট থেকে শাকসবজি চাষ করার সময়ই সেই কিশোরের মনে মাঝেমধ্যে চিন্তা উঁকি দিতো,এখনতো জমিতে শাকসবজি চাষ করছি,ভবিষ্যতে যদি মানুষ তৈরির চাষ করার যায়।কিশোর বয়সের সেই স্বপ্ন আজ মাঝবয়সে এসে কিন্তু অনেকটাই সার্থক হয়েছে এই ব্যক্তির।আজ তিনি শিলিগুড়ি দক্ষিন শান্তিনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।বহু বছর ধরেই তিনি শিক্ষকতার পেশার সঙ্গে যুক্ত। তাঁর কাছ থেকে একসময় পড়াশোনার তালিম নিয়ে কেও আজ বিদেশে ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিসে কর্মরত, কেওবা চিকিৎসক। কিন্তু তারপরও থেমে যেতে রাজি নন কিশোর বয়সের সেই কৃষক মায় আজকের শিক্ষক চিত্তরঞ্জন সরকার। আদর্শকে সামনে রেখে মানুষ তৈরির সাধনা তাঁর অব্যাহত রয়েছে। স্কুলের অন্য সব সহ শিক্ষক,শিক্ষা কর্মী সকলের সহযোগিতা নিয়ে আজ তাদের স্কুলে শৈশব থেকেই ছেলেমেয়েদের মধ্যে দেশাত্মবোধকর ভাবনা তৈরির কাজে নেমেছেন। স্কুলের খুদে শিশুরা স্কুলের আশপাশে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করে আসছে, কোন বাড়িতে জল জমিয়ে রাখা হয়েছে, কোন বাড়িতে ডেঙ্গু মশার প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে, কোন বাড়ি অপরিচ্ছন্ন সব রিপোর্ট সংগ্রহ করে খুদেরা প্রধান শিক্ষককে রিপোর্ট করছেন।প্রধান শিক্ষক এরপর সেই সব বাড়ির প্রধানদের কাছে গিয়ে অনুরোধ করছেন,দয়া করে বাড়িতে জল জমতে দেবেন না।সতর্ক থাকুন ডেঙ্গু নিয়ে।
সমাজ ও দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা শৈশব থেকে তৈরি করতে শুধু এই কর্মসূচি পালন করেই থেমে থাকছে না এই স্কুল।
স্কুলের কোন ছেলে বা মেয়েটি চুল বড় করে ফেলেছে, কোন ছেলে বা মেয়েটি নখ কাটে নি,কে অপরিচ্ছন্ন থাকছে তার রিপোর্ট স্কুলের স্বাস্থ্য মন্ত্রী প্রতিনিয়ত নজরে রাখছে, তারপর সেই রিপোর্ট জমা হচ্ছে প্রধান শিক্ষকের কাছে।এরপর প্রধান শিক্ষক সেই ছাত্র বা ছাত্রীর নখ ও চুল কাটানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন। স্কুলের প্রধান মন্ত্রী নিয়মিত নজরে রাখছেন মিড ডে মিলের রান্নাটা ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা।রান্নায় একটু অসংলগ্ন কিছু ধরা পড়লেই প্রধান মন্ত্রী রিপোর্ট করছেন প্রধান শিক্ষকের কাছে।পরিবেশ মন্ত্রী নজরে রাখছে, স্কুলের শৌচালয় থেকে স্কুল চত্বর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন আছে কিনা। এভাবে দেশের প্রতি শৈশব থেকেই দায়বদ্ধতা শেখাতে এই স্কুলে ছাত্রদের নিয়ে তৈরি হয়েছে মন্ত্রী সংসদ। নিয়মিত খুদে ছাত্ররা সেই সংসদ পরিচালনা করছে। প্রধান শিক্ষক চিত্তরঞ্জন সরকার জানালেন,নিজের দেশের পাশাপাশি অন্য দেশ সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ তৈরি করতে প্রতিদিন স্কুলে বিভিন্ন দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়।পড়ার পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের কার কিসে প্রতিভা রয়েছে তারজন্য সঙ্গীত,আবৃত্তি, কবিতা, নৃত্য সব খুঁজে বের করা হয়।আর তাদের সেই সব প্রতিভা স্কুলের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে মেলে ধরা হয়। বেসরকারি স্কুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এভাবেই নজর কাড়ছে শিলিগুড়ি দক্ষিন শান্তিনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়।এই স্কুলে প্রায় সব ছাত্রছাত্রীই অনগ্রসর পরিবারের। বহু পরিবারে দু’বেলা রান্না করাই কঠিন সংগ্রামের বিষয়। কারও বাবা রিকশা চালক, কারও বাবা জনমজুর বা মা পরিচারিকা। অর্থ এবং শিক্ষায় অনগ্রসর হলেও স্কুলের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে ছাত্রছাত্রীদের।প্রধান শিক্ষক চিত্তরঞ্জন সরকার বলেন,দুঃখ কষ্টের সঙ্গে মোকাবিলা করা এবং ভবিষ্যতে সুনাগরিক তৈরি করার জন্য স্কুলে তাঁরা নিয়ম করে মনিষী এবং দেশপ্রেমিকদের জীবনী পাঠ করাচ্ছেন ছাত্রছাত্রীদের।ছেলেমেয়েদের মধ্যে জীবনবোধ গড়ে তোলার জন্য শৈশব থেকেই মানুষ তৈরির চাষ চলছে। স্কুলে সঙ্গীত চর্চা, কম্পিউটার চর্চাও হচ্ছে। কোনো ছাত্র স্কুলে আসতে না পারলে প্রধান শিক্ষক তাঁর নিজের বাইকে সেই ছাত্রকে বাড়ি থেকে স্কুলে নিয়ে আসছেন। আবার গরমের ছুটির দিনে স্কুল ছুটি থাকলে হবে কি,কোন ছাত্র কিভাবে ছুটি কাটাচ্ছে, পড়াশোনা ঠিকঠাক করছে কিনা,কার খাতা কলম নেই, কেও অসুস্থ হলো কিনা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক।তাঁর কথায়,আসি যাই মাইনে পাই এভাবনা থেকে শিক্ষকতার পেশায় আাসিনি।ছাত্র ও শিক্ষকের মধ্যে হতে হবে এক আত্মিক সম্পর্ক। সবমিলিয়ে শিলিগুড়ি দক্ষিন শান্তিনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চিত্তরঞ্জন সরকার এক ব্যতিক্রমী শিক্ষক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন বিভিন্ন মহলে। দেখতে থাকুন খবরের ঘন্টা, কি বলছেন এই শিক্ষক—-
বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন —-