দৃষ্টিহীন প্রতিভাবান শিল্পী বাবলু বিশ্বাস স্নাতক হয়েও এখনও বেকার, দারিদ্র নিত্যসঙ্গী

শিল্পী পালিত ঃ উত্তর দিনাজপুর জেলার সোনাপুরে বাড়ি দরিদ্র প্রতিভাবান সঙ্গীত শিল্পী বাবলু বিশ্বাস। একদিকে দারিদ্রতা আর একদিকে দৃষ্টিহীনতা এই দুইয়ের অভাবকে নিয়েই চলছে তাঁর লড়াই। পড়ুন আজকের আত্মকথায়–

আমার জীবনের অতীত থেকে বর্তমান।আমি জন্মসূত্রে একজন দৃষ্টিহীন। ছোটবেলা থেকে বাবা মায়ের স্নেহ ভালোবাসা পেয়ে এতটাই নিশ্চিন্ত ছিলাম যে ভবিষ্যতে কষ্ট, অভাববোধ এগুলোর কোনোটাই আমার মনে আসেনি।

দশ বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকে নিশ্চিন্ত মনে হস্টেলে পড়াশুনা করতে করতে বাকি দিনগুলো বেশ হেসে খেলেই কেটে গেল।পড়াশুনার শেষদিকে কলকাতায় যাওয়ার একটা সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করলাম না। সেখানে ভালো গান বাজনা শেখার লালসায় তড়িঘড়ি করে চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে হয়ে উঠলাম একজন আশ্রমবাসী। গান জানার সূত্রে আমাদের কয়েকজনকে নিয়ে আশ্রমের মালিকের ব্যবসা বেশ জমে ওঠে যা বর্তমানে আরো সক্রিয়।

ভুল পথে পা দিয়েছি, এই ভেবে ছয় মাস পর কলকাতা ছেড়ে আবার বাড়ি ফিরে এলাম সাল 1999 দুর্গা পূজার সময়।এর পর 2000 সালে স্কুলে ভর্তিকে কেন্দ্র করে চলল নানা টালবাহানা। কয়েকটি স্কুলে ভর্তির জন্য দিনের পর দিন ছুটে বেড়ালাম। কিন্তু দৃষ্টিহীন বলে আমাকে কেউ উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি নিল না!নিজের বাড়ির কাছে স্কুল থাকা সত্বেও আমাকে শিলিগুড়ির নেতাজি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হতে হল। অর্থাভাব এবং পারিবারিক নিরুৎসাহ এই দুটোকে সঙ্গী করে কোনোরকমে 2006 সালে স্নাতক স্তর পর্যন্ত পড়াশুনা শেষ করলাম।
এরই মধ্যে চাকুরি সংক্রান্ত অনেক পরীক্ষায় বসেছিলাম কিন্তু ভাগ্যের চাকা আমার দিকে কোনো মতে ঘুরল না! এর জন্য নিজের অক্ষমতা আর কাজের প্রতি অনীহা এই দুটোকে দায়ী করা ছাড়া আর কি হতে পারে? আপনারাই বলুন।
বর্তমানে আমার পরিচয় আমি একজন বেকার অথবা বাজনা গ্রুপের ক‍্যাসিও মাস্টার। সংসার চালাতে আমাকে এভাবেই রাত জেগে ক‍্যাসিও বাজিয়ে দুটো পয়সা উপার্জন করতে হয়!
আমার পরিবার চার জন সদস্য নিয়ে গঠিত। একজন দৃষ্টিহীন মানুষ হলেও আমি গান বাজনা ও পড়াশুনা শেষ করে সমাজে ভালো কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম কিন্তু ভাগ্যববিধাতা আমার সহায় হলেন না!

আমার লেখা সংক্ষিপ্ত জীবনী যদি আপনার মনকে একটুও ছুঁয়ে যায় তাহলে আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকব।

ধন্যবাদ সহ বাবলু বিশ্বাস
সোনাপুর
উত্তর দিনাজপুর