পেটের ক্ষিধে উপেক্ষা করে তবলার ক্ষিধেতে মেতেছে স্বল্প দৃষ্টির অলোক

নিজস্ব প্রতিবেদন,শিলিগুড়িঃ ঘরে তার খুব অভাব। পেটে ক্ষিধে রয়েছে। কিন্তু সে ক্ষিধে উপেক্ষা করে তবলার ক্ষিধেতে মেতেছে শিলিগুড়ি বাগরাকোট বস্তির স্বল্পদৃষ্টি সম্পন্ন যুবক অলোক মন্ডল। তবলার নেশায় প্রায় সময় ডুবে থাকেন অলোক। তবলা বাজিয়েই ও ভবিষ্যতে কিছু করতে চায়। উত্তরবঙ্গের বিশিষ্ট তবলা প্রশিক্ষক সুবীর অধিকারী রীতিমতো তালিম দিয়ে চলেছেন অলোককে।
অলোকের বাবার নাম মানিক মন্ডল। তারা বাবা সামান্য রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। ঘরে অভাব আছে। সে অভাব মেটাতে ওই এলাকাতেই তার মাকে নিয়ে মুদিখানা দোকান করে অলোক।আর তার ফাঁকেই ও তবলার চর্চা চালায়। ওর কথায়, কোথাও আড্ডা দিয়ে বাজে নেশা করার চেয়ে ভালো কিছু করার নেশা অনেক ভালো। সেই হিসাবে তবলার নেশা করেন।
অলোক তার বাম চোখ দিয়ে একদম দেখতে পারে না। আর ডান চোখ দিয়ে অল্প দেখতে পায়।এই প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে অলোক তার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। পড়াশোনার জন্য কবছর আগে তাকে কলকাতায় থাকতে হয়েছিল। সে সময় অলোকের ঠিকানা ছিল কলকাতা ব্লাইন্ড স্কুলের একটি হস্টেল। আর সেসময় অলোক ক্রিকেটও খেলতো। দৃষ্টিহীনদের অনুর্ধ ১৯ ক্রিকেটে বাংলা দলেও সুযোগ পেয়েছিলো অলোক। কিন্তু সে খেলা বেশিদিন চালানো যায়নি। চলে আসতে হয় শিলিগুড়ি। এখানে এসে আবার ছোট বেলাকার তবলার নেশা তাকে পেয়ে বসেছে। শিলিগুড়ি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ছাত্র যুব উৎসবে এবং নকশালবাড়ির এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তবলা বাজানোর পুরস্কার আছে তার। লোক সঙ্গীত শিল্পী সাতারুদ্দিন আহমেদের বাড়ি ভারতনগরে গিয়েও প্রতি রবিবার তবলার চর্চা করে অলোক। ওর বক্তব্য, চোখে সেভাবে না দেখলেও তবলার নেশা অনেক কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। ওর গুরু সুবীর অধিকারী বলেন,বহু পিছিয়ে পড়া প্রতিভাবানেরা তার কাছে আসছে তবলা শিখতে। অলোক তাদের একজন। তিনি এসব পিছিয়ে পড়াদের উৎসাহ দিচ্ছেন। অনেককেই বিনে পয়সায় তবলা শেখাচ্ছেন। নাচ ও গান, তবলা ছাড়া অচল। তাই আজ তবলিয়াদের গুরুত্ব দেওয়ার সময় এসেছে।