
শিল্পী পালিত ঃ কলকাতার গ্রীন পার্ক থেকে আজ আমাদের এই ওয়েবনিউজ পোর্টালে তাঁর আত্মকথা মেলে ধরেছেন সঙ্গীত শিল্পী পূর্বাশা মন্ডল —-
——
আমি পূর্বাশা মণ্ডল। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কাকদ্বীপ শহরে আমার জন্ম। বাবা, মা আর ভাইকে নিয়ে আমাদের ছোট্ট পরিবার। আমার বাবা স্বর্গত ভাস্কর চন্দ্র দোলুই সরকারী চাকরির পাশাপাশি ভালো লোকসঙ্গীত গাইতেন। মা শ্রীমতি সন্ধ্যা দোলুই শিক্ষিকা ও সঙ্গীত শিল্পী। তাই বলা যায় গান আমার রক্তে অতি শৈশবেই গান শেখার প্রাথমিক পাঠ মায়ের কাছ থেকে নিয়েছি। তারপর বিশিষ্ট বেতারশিল্পী অমল নাগ মহাশয়ের কাছ থেকে রবীন্দ্র সঙ্গীতে ডিপ্লোমা করেছি৷ ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় নানা পুরস্কার পেয়েছি। পরবর্তীকালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় এম.এ. করার সময় ইউনিভারসিটি ইন্সটিটিউট হলে সকলের সামনে রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রতিযোগিতার পুরস্কার পেয়েছি। বাংলা বিভাগের নাটক প্রতিযোগিতায় নেপথ্যে রবীন্দ্র সঙ্গীত গেয়ে সকলের প্রশংসা পেয়েছি। সেটা আমার কাছে খুব স্মরনীয় ঘটনা। আমার পরিবারের সকলেই সংস্কৃতিমনস্ক। তাই চিরকাল স্বাধীনভাবে গান, নাচ, শ্রুতিনাটকের চর্চা করে গেছি। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান করেছি। লেখাপড়ার শেষে বিয়ে। বিয়ের পরেও আমি গানের চর্চা চালিয়ে গেছি। অধ্যাপক স্বামী ডঃ ননীগোপাল মণ্ডলের উৎসাহে বাণীচক্রে শ্রীমতী সুমিত্রা সেনের কাছে গানের তালিম নিয়েছি৷ কলকাতার শিশির মঞ্চে সুমিত্রাদিদির পরিচালনায় সকল ছাত্রীরা চন্ডালিকা নৃত্যনাট্যের গানে অংশগ্রহণ করেছি। সেটাও আমার কাছে স্মরণীয় ঘটনা। এখন আমি গান শেখাই। গানের তালিমের সঙ্গে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থাও করেছি। এই কোভিড সময়েও আমি অনলাইনে গান শেখাচ্ছি গানকে ভালোবাসি বলেই।
আমার লেখালেখির জগতে আসা মূলত বিয়ের পর। আমি গদ্য সাহিত্যের চর্চা করি। সাপ্তাহিক বর্তমান, বোধন, প্রসাদ, পুরশ্রী, শৈলজা, সারাক্ষণ, কলেজস্ট্রীট, নির্ণয়, প্রাগভাস, আপনজন, সুখবরসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় অনেক গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ লিখেছি। বড়দের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের জন্যও আমার লিখতে ভাল লাগে৷ টাপুর টুপুর, কিশোর দুনিয়া, নয়ন, ছোটদের কলরব, ছোটদের প্রসাদ, সোনার পাখি, সোনার ডিম, জাদুকাঠিসহ অনেক শিশু-কিশোর পত্রিকাতে নিয়মিত লিখি৷ ২০২০ সালে প্রায় বাহান্নটি পূজাবার্ষিকীতে আমার লেখা স্থান পেয়েছে। এছাড়াও মুক্তি, কনীনিকা ও একালের গল্প সংকলনে আমার ভিন্ন স্বাদের গল্প প্রকাশিত হয়েছে৷ কৈরোলিন উপন্যাস সংকলনে একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে৷ এখনও আমি লিখে চলছি। লেখালেখির সুবাদে বেশ কিছু প্রতিযোগিতায় পুরস্কার লাভও করেছি। তারমধ্যে কয়েকটি হল – জিরো পয়েন্ট সাহিত্য পত্রিকা, আমাদের পদক্ষেপ পত্রিকা, সনেট পাবলিকেশন, লেখিকা অনন্যা দাশ আয়োজিত ছোটদের গল্প প্রতিযোগিতা প্রভৃতি। সেই সম্মাননাগুলি আমাকে ভবিষ্যতে আরও ভালো লিখতে অণুপ্রেরণা যোগায়। এখনও পর্যন্ত আমার চারটি গল্প সংকলন প্রকাশিত হয়েছে৷ সেগুলি হল – মনের টান, মায়াদর্পণ, স্বপ্নের কোলাজগুলি ও কনে দেখা আলো। ভাবতেও ভালো লাগে যে প্রত্যেকটা বই পাঠকমহলে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তারা সাগ্রহে আমার বইগুলো সংগ্রহ করে পড়েছেন। তাদের মূল্যবান মতামত জ্ঞাপন করেছেন। আমার সেই পাঠক বন্ধুদের হার্দিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
আমি একজন গৃহবধূ। সংসার, দুই সন্তান সামলে ভবিষ্যতে আমি এইভাবে সাহিত্যকর্মে যুক্ত থাকতে চাই। ছাত্র-ছাত্রীদের গান শিখিয়ে যেতে চাই। গান শুধু একটা কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটি নয়। এটা মনের শান্তি, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার রসদ – সেটা আমি ওদের উপলব্ধি করাতে চাই। আমার পরিবার, স্বামী, সন্তানরা আমাকে এই কাজে নিরন্তর উৎসাহ দেয়। ওরা সঙ্গে না থাকলে আমি মনে জোর নিয়ে এভাবে এগোতে পারতাম না। ভবিষ্যতেও সৃষ্টিশীল কাজে মেতে থেকে আমি নিজেকে ও আমার চারপাশের মানুষদের ভালো রাখতে চাই। কারণ আমি বিশ্বাস করি চলার নামই জীবন, থেমে থাকা মৃত্যু।
সমাপ্ত
পূর্বাশা মণ্ডল
গ্রীণপার্ক, নরেন্দ্রপুর, কলকাতা – ১০৩
