প্রথমেই ক্যান্সার ধরার জন্য সচেতনতায় নেমেছেন এই নার্স,এবারে পাচ্ছেন তিনি জাতীয় পুরস্কার

নিজস্ব প্রতিবেদন ঃ  এবছর পশ্চিমবঙ্গ থেকে একমাত্র জাতীয় ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল পুরস্কার পাচ্ছেন জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ি নিবাসী নার্স অভিস্মিতা ঘোষ। ১৭ জুন দিল্লিতে দেশের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে এই জাতীয় পুরস্কার তুলে নেবেন অভিস্মিতাদেবী।

মারন ব্যাধি ক্যান্সার শুরুতে চিহ্নিত হলে মানুষের মৃত্যুকে প্রতিহত করে দেওয়া যায়।কিন্তু বহু ক্ষেত্রে মানুষের সচেতনতার অভাব দেখা যায়। ফলে শেষ পর্যায়ে গিয়ে যখন ক্যান্সার ধরা পড়ে তখন সেই মানুষকে আর বাঁচানো সম্ভব হয় না। কিন্তু এই প্রথম পর্যায়ে রোগ চিহ্নিতকরনের কাজটাই বহু ক্ষেত্রে হয় না।কিন্তু ব্যতিক্রমী কাজও হয়।জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ি ব্লকের মাগুরমারি টু গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব আলতাগ্রামের কম্যুনিটি হেলথ অফিসার তথা সরকারি নার্স অভিস্মিতা ঘোষ সেই ব্যতিক্রমী কাজটিই করে চলেছেন নিঃশব্দে। যাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনীহা ছিলো তাঁরা এখন স্বেচ্ছায় বছরে একবার হলেও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাচ্ছেন সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এসে।আর গ্রামের মানুষদের এই বোঝানোর কাজটি সুচারুভাবে করতে পেরেছেন নার্স অভিস্মিতা।
রোদে কখনও পুড়েছেন,কখনো জলে ভিজেছেন।কিন্তু হাল ছেড়ে দেননি।গ্রামের মধ্যে কখনো কারও গোয়াল ঘরে বসেও মানুষদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বুঝিয়েছেন, বছরে একবার অন্তত হলেও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাও। অভিস্মিতার কথায়,অবুঝ মানুষকে লাগাতর বোঝানোর ফলে তাঁরা নিজেরাই এখন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসছেন। তিরিশ বছরের ওপর যাদের বয়স সেই সব ছেলেমেয়ে থেকে বয়স্ক,স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফলে কারও কারও শুরুতেই ক্যান্সার ধরা পড়ছে।আর শুরুতেই ক্যান্সার চিহ্নিত হওয়ায় চিকিৎসা শুরু হয়, ফলে তাঁরা সহজেই মৃত্যুকে ঠেকিয়ে ক্যান্সার মুক্ত হতে পারছেন।ক্যান্সারের সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিস, হাই পারটেনশনের মতো রোগগুলোও এভাবে প্রথম পর্যায়ে চিহ্নিত হওয়ায় রোগীর চিকিৎসা শুরু হচ্ছে। রোগী ভালো হচ্ছে। এভাবে স্বাস্থ্য সচেতনতার নতুন পরিবেশও তৈরি হচ্ছে গ্রামে। এধরনের অসামান্য সব কাজের জন্য এবছর দেশের নার্সিং পেশার সর্বোচ্চ সন্মান বা জাতীয় পুরস্কার ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল বাংলা থেকে একমাত্র পাচ্ছেন অভিস্মিতা ঘোষ। আগামী ১৭ জুন দিল্লিতে দেশের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে এই পুরস্কার নিতে চলেছেন অভিস্মিতাদেবী।
করোনা লকডাউনের সময় অভিস্মিতাদেবী সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।ধূপগুড়ির বাড়ি থেকে তাঁর কর্মস্থল ছিলো আট কিলোমিটার দূরে। প্রতিদিন তাঁর শিক্ষক স্বামী তাঁকে কর্মস্থলে পৌঁছে দিয়েছেন। অন্তঃসত্ত্বা হলেও করোনা লকডাউনের ওই দুঃসময়েও মানুষের সেবা থেকে পিছু হটেননি এই নার্স।এসবের ফলে আজ জাতীয় স্বীকৃতি।তিনি বলেন,” ফলের আশা করে কাজ করিনি।তবে সুপ্ত বাসনাতো একটা থাকেই।আর যদি এরকম স্বীকৃতি আসে তবে ভালোতো লাগেই।তবে বহু নার্স কিন্তু চারদিকে নিজেদের সেবার মানসিকতা নিয়ে উৎসর্গ করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।”
ধূপগুড়িতেই জন্ম অভিস্মিতা ঘোষের।বাবা একজন ব্যবসায়ী আর মা গৃহবধূ। স্বামী স্কুল শিক্ষক।দুই সন্তান। ছোট থেকেই তাঁর স্বপ্ন বা ইচ্ছে ছিলো, বড় হয়ে নিজে কিছু করবেন,স্বনির্ভর হবেন।কলেজে ভুগোল অনার্স নিয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়তে পড়তেই নার্সিং পেশায় যোগদানের জন্য প্রশিক্ষণের সুযোগ আসে।একবারে সেই প্রশিক্ষণে যোগ দেন। কিন্তু কেন,তাঁর জবাব,” শৈশব থেকেই দেখেছি পিসিকে।পিসি আমার নার্স।মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন পিসি।সেখান থেকেই একটা প্রেরনা পেয়েছিলাম।”
জলপাইগুড়ি নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে পাশ করে ধূপগুড়ি হাসপাতালে স্টাফ নার্স হিসাবে তিনি কাজে যোগ দেন ২০০৯ সালে।সেখানে এগার বছর বেশ দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার পর ধূপগুড়ি ব্লকেরই মাগুরমারি টু গ্রাম পঞ্চাায়েতের অধীন পূর্ব আলতাগ্রামে কম্যুনিটি হেল্থ অফিসার হিসাবে কাজ শুরু করেন তিনি।সেখানেও অসামান্য কাজের বেশ কিছু নমুনা তৈরি করেন তিনি। মা ও শিশু স্বাস্থ্যের পাশাপাশি সকলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার দিকে নজর দেন তিনি। আশা কর্মী থেকে অন্য স্বাস্থ্য কর্মী সকলকে নিয়ে গ্রামের মানুষের সেবা করার বিরাট ব্রত অনবরত চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।ভবিষ্যতে লক্ষ্য,নিজের কাজটি সঠিকভাবে চালিয়ে যাওয়া। আর অনবরত যেন মানুষের সেবা করে যেতে পারেন।
হতদরিদ্র কোনো গরিব মানুষ বিপদে পড়লে তাঁর পাশে ব্যক্তিগতভাবে দাঁড়াতেও পিছুপা হন না এই ব্যতিক্রমী নার্স।

বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন —-