
নিজস্ব প্রতিবেদন : জীবনের স্থায়ীত্ব নিয়েই তার পথ চলা। মানুষকে বাঁচিয়ে তোলা, সুস্থ রাখাই তার পেশা।ডুয়ার্সের চিকিৎসক পার্থপ্রতিম এখন জীবনের পাঠ শেখাচ্ছেন পাড়াপড়শি ও কচিকাঁচাদের। ফুলে ফুলে ভরা মধুবনে। তার বাড়ির নাম মধুবন। বানারহাট আদর্শপল্লীতে সবুজ গাছগাছালি ঘেরা তার ছোট্ট বসতবাড়ি। ফুলের বাগান করা তার বহুকালের শখ। ফি বছর নানারঙের পেনজি, চন্দ্রমল্লিকা, পিটুনিয়া, স্যালভিয়া, সুইটিলিয়াম আরো কত নাম না জানা ফুল মাথা নাড়ে প্রাঙ্গন জুড়ে।
এই পুষ্পচর্চা তার কাছে জীবনচর্চারই অঙ্গ। ছোট্ট চারাগাছ একদিন ফুলে ভরা গুল্ম হয়ে ওঠে। তারপর একদিন ফুলহীন, বিবর্ণ হয়ে মারা যায়। আমাদের মানবজীবনটাও তাই। মায়ের কোল আলো করা ছোট্ট শিশুটি একদিন শৈশব, কৈশোর পেড়িয়ে যৌবনে পৌঁছে যায়। তার উদ্যাম, কর্মশক্তি, সৃজনশীল প্রয়াস অভিনন্দিত হয় সমাজের বিভিন্ন স্তরে। তারপর একসময় বার্ধক্যের পথ পেড়িয়ে বিদায় নেয় এই বসুন্ধরা থেকে। জীবনের এই রৈখিক গতি পুস্পচর্চার মধ্যে দিয়ে ভালোভাবে উপলদ্ধি করা যায়। সত্তর – আশি বছরের মানবজীবনের কথকথা; তিন- চার মাসেই পুস্পচর্চার মধ্যেই মূর্ত হয়ে ওঠে। বোঝা যায় জীবনের নশ্বরতা। আমাদের এই মানব জীবন যে চিরস্থায়ী নয়; এই বোধ আমাদের মন জগতে থাকলে রাগ, অভিমান, হিংসা, বিদ্বেষ এগুলি জয় করা সম্ভব। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন- এই রিপুগুলি মানবদেহের অঙ্গ, তন্ত্র, হৃদয়ের ওপর নিঃশব্দে আঘাত হানে। তারই সাথে সমাজ ও সভ্যতার পরিপন্থী ঘটনাগুলি ঘটে।
মধুবন বিতানে মাঝে মধ্যে আসর বসে। পাড়াপড়শি, কচি-ধেড়ে সবাই আসে এই জীবনের পাঠশালায়। স্থানীয় পড়শি গৃহবধু বাসন্তী ঘোষ জানালেন- সাংসারিক কাজে কখনো মন খারাপ হলে চল আসি মধুবনের ফুল বাগানে। মুহূর্তে মন ভালো হয়ে যায়। আর ডাক্তারবাবু যে সুন্দরভাবে বিষয়গুলি বোঝান তাতে মন ভরে যায়।
একই বক্তব্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বনাথ ভট্টাচার্যের- ‘ডাক্তারবাবু মনের আবেগে বহু কিছু করেন; যা সমাজ ও সভ্যতা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনুকূল ভূমিকা পালন করে।‘
পার্থবাবু দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সামাজিক কাজে নিজেকে জাড়িয়ে রেখেছেন। নামের সাথে সংস্কারমূলক পদবি ব্যবহার করেন না। জাতি- ধর্ম- বর্ণবাদের বিরুদ্ধে এটাই তার জেহাদ। চিকিৎসক জীবনের ব্যস্ততার ফাঁকে ল্যাপটপ- প্রোজেকটর কাঁধে পৌঁছে যান স্কুল- ক্লাবে; জনমানসকে বোঝান স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের নাড়ি- নক্ষত্র। বহু প্রবন্ধ লিখেছেন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার সৃজিত ই-বুক প্রসংশিত হয়েছে গুণিজন মহলে। প্রাদেশিক ও জাতীয় স্তরে বহু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।
গত ২৪শে ২০২২ ফেব্রুয়ারী থেকে যুদ্ধ চলেছে ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার। আর কয়েকদিন পরে বর্ষপূর্তি হবে এই মারণ খেলার। রঙীন বসন্তের দিনে যুদ্ধের দামামা বাজছে আমাদের এই পৃথিবীতে। এই যুদ্ধে ইতিমধ্যেই ভেঙে পড়েছে বহু সেতু, ইমারত, বসতবাড়ি, মানুষের বহুদিনের লালিত স্বপ্ন। বিপন্ন হয়েছে বহু শিশু-কিশোর, বোমা-মিসাইলের আঘাতে মারা যাচ্ছে নিরাপরাধ প্রাণ, পরিযায়ী পাখি ও বন্যপ্রাণী। এই প্রেক্ষাপটে পার্থপ্রতিমবাবুর এই জীবনের পাঠশালা কী কোনো প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে ? উত্তরে রক্তিম ডালিয়ার দিতে অপলকে চেয়ে চিকিৎসক জানালেন- ‘ইভেন ইফ টুমরো ইজ দ্যা লাষ্ট ডে অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড, টু ডে উই প্লান্টস এ ট্রি। যদি আগামী কালও পৃথিবীর শেষ দিন হয়, তবুও আজ আমরা সবাই সৃজনশীল প্রয়াস চালিয়ে যাবো।’
