‘সঙ্গীত চর্চা চিন্তাভাবনার পরিসর বড় করে’

শিল্পী পালিতঃ খবরের ঘন্টার এই ওয়েবপোর্টালে আমরা বিভিন্ন শিল্পী ও গুনী মানুষের আত্মকথা মেলে ধরার কাজ করছি। খবরের ঘন্টা পত্রিকা প্রতি মাসে একটি করে প্রকাশিত হয়। তার বাইরে খবরের ঘন্টার ওয়েবপোর্টাল আছে যেখানে এখন সম্পাদক মহাশয়ের পরামর্শমতো কলম ধরেছি। এর বাইরে ফেস বুকে খবরের ঘন্টার পেজ ও গ্রুপ আছে। ফেস বুক পেজেও কিছু কিছু ভিডিও খবর প্রকাশিত হয়। তবে সব খবরই ইতিবাচক। এছাড়া ইউ টিউবও আছে। আজ শিক্ষক ও সঙ্গীত শিল্পী সায়ন্তন পালচৌধুরীর আত্মকথা মেলে ধরছি। ——-

—আমার জন্ম লাটাগুড়ি-তে। জঙ্গলে ঘেরা ছোট গ্রাম। বড়ো হয়েছি একান্নবর্তী পরিবারে। যে কারণে বাড়িতেই এতো ভালো সময় কাটতো যে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন কোনোদিন অনুভূত হয়নি। বাড়িতে আগাগোড়া সাংস্কৃতিক পরিবেশ পেয়েছি। বিকাল হলেই বাড়ির উঠানে নাচ-গানের রিহার্সাল হতো। যখন ছোট ছিলাম তখন বাবা-মা এর সাথে নাটকের মহড়া দেখতে যেতাম। বাবা, মা, জেঠু, পিসি-রা প্রচুর নাটকে অভিনয় করেছেন বিভিন্ন জায়গায়। আমার মামাবাড়িতেও পেয়েছি সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা। শিল্পচর্চা ছাড়াও জীবন হয় এটা ঠিক ভাবতে পারিনা।
গান শেখা যে কবে থেকে শুরু হয়েছে আমার মনে নেই। তবে যতোদূর মনে পড়ে আমি প্রথমে মঞ্চে অনুষ্ঠান করি এবং তারপর গান শেখা শুরু করি। প্রথমে তবলা শেখা শুরু করেছিলাম। কিন্তু মন থেকে ইচ্ছা করত না বলে কিছুদিনের মধ্যেই সেটা বন্ধ হয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ শুরু হয় গানের প্রথাগত শিক্ষা। মামাবাড়ি থেকে পুরোনো কুড়ি টাকার হারমোনিয়াম নিয়ে চলে আসি। প্রথমে শ্রী চিন্ময় ভট্টাচার্য্যের কাছে, তারপর শ্রীমতী ভারতী চাকী-র কাছে বেশ কিছুদিন গান শিখি। তারপর শ্রী কৌশিক গোস্বামীর কাছে গানের তালিম শুরু হয়। এখনও তিনিই আমার শিক্ষাগুরু। যেহেতু উনি শ্রুতিনন্দন-এ শিক্ষক পদে নিযুক্ত, সেই সুবাদে গুরুজী পন্ডিত অজয় চক্রবর্তী ও বিদূষী কৌশিকী চক্রবর্তী-র ধারা, শিক্ষার পদ্ধতি ও এসথেটিসিজম-এর কণা মাত্র হলেও কিছুটা ছায়া পাই। এছাড়া শ্রী জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের কাছে আধুনিক গানের শিক্ষা হয়েছিল কিছুদিন। বিভিন্ন কর্মশালায় শ্রী সুকুমার মিত্র, শ্রীমতী হৈমন্তী শুক্লার কাছে সঙ্গীত শিক্ষা হয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পুরস্কার পেয়েছি। শিলিগুড়ি বাংলা গান উৎসবে প্রথম স্থান অধিকার আমাকে বহু গুণী মানুষের সাথে পরিচয়ে সাহায্য করেছে। শাস্ত্রীয় সংগীত তথা রাগসংগীত আমাকে বরাবরই বেশি আকর্ষণ করে। তাই বর্তমানে সেদিকেই বেশি চর্চা চলছে। এছাড়া আমি শিলিগুড়ি বরদাকান্ত বিদ্যাপীঠে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক। গানের সাথে সাথে লেখালেখির কাজটাও করি। বিভিন্ন জার্নাল ও বই-এ সমালোচনামূলক রচনা লিখি। The Theatre Times, New York-এ আমাদের অঞ্চলের একটি নাটকের সমালোচনামূলক রচনা প্রকাশিত হয়। সেমিনার, কনফারেন্স-এ যাবার সুবাদে দেশের বেশ কিছু রাজ্যে ঘোরার সুযোগ হয়। UGC-NET পরীক্ষা পাশ করেছি। কলেজে অধ্যাপনা করার ইচ্ছা খুব বেশি না হলেও কিছুটা আছে। তবে আমি আমার স্কুল, ছাত্রছাত্রী ও কলিগদের মাঝে বেশ সন্তোষজনক আবহাওয়ায় আছি। সংগীত চর্চা ছাড়া বিভিন্ন ধরনের গল্পের বই পড়তে আমার ভালো লাগে।
সারাজীবন সংগীত চর্চা করতে পারাই আমার একমাত্র চাহিদা। প্রচুর অনুষ্ঠান করার চাইতে ঘরে বসে চর্চা করতে আমার বেশি ভালো লাগে। সংগীত চর্চা আমাদের চিন্তাভাবনার পরিসর বড়ো করে, মানসিক শান্তি দেয়। এর দ্বারা আমরা স্থান-কাল অতিক্রম করে অমরত্বকে ছোঁয়ার চেষ্টা করতে পারি।