
বাপি ঘোষ ঃ শারীরিক উচ্চতা নেই কার্তিক বর্মনের।মাত্র পাঁচ ফুট। শিক্ষাও কার্যত নেই, মাত্র ষষ্ঠ শ্রেনী উত্তীর্ণ। আর অর্থও নেই, সামান্য সব্জি বিক্রেতা। কিন্তু মনের উচ্চতা বড় হলে যে জগতে বহু অসাধ্য সাধন করা যায় তার বড় উদাহরণ তৈরি করলেন শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া ফাঁপড়ির বাসিন্দা কার্তিক বর্মন। সোমবার তিনি আর্থিক দিক থেকে অত্যন্ত অনগ্রসর, খর্বকায় প্রীতি ঘোষকে বিয়ে করলেন পন ছাড়াই। শুধু বিয়ে নয়, তিনি অন্যান্য যুব সমাজের কাছেও আর্থিকভাবে অনগ্রসর মেয়েদের কথা চিন্তা করে পন ছাড়া বিয়ে করবার আবেদন জানালেন।

শিলিগুড়ি হায়দরপাড়ার প্রীতিলতা সরনিতে মা কৃষ্ণা ঘোষের সঙ্গে থাকত নবম শ্রেণী উত্তীর্ণ প্রীতি। কৃষ্ণা ঘোষের স্বামী বহু দিন আগে মারা গিয়েছেন। তিনি সার্কাসে হাস্য কৌতুক বা জোকারের ভূমিকায় কাজ করতেন। খুব অভাব বলতে গেলে কখনো ভিক্ষা কখনও পরিচারিকার কাজ করে সংসার চলে তাদের। ইদানীং প্রীতি একটি শাড়ির দোকানে সেলসের কাজ শুরু করে। এরমধ্যে বিয়ের দিন স্থির হয়। প্রীতির বয়স ২০, উচ্চতা তিন ফুট তিন ইঞ্চি।আর পাত্রের বয়স ৩০, উচ্চতা পাঁচ ফুট। কিন্তু বিয়ে হবে কি করে, প্রীতির মায়ের টাকা কোথায়? কিভাবে তিনি পন দেবেন? তিনিতো নিজের শারীরিক অসুস্থতার চিকিৎসাও করতে পারেন না। পাত্র কার্তিক বর্মন পেশায় সব্জি বিক্রেতা। তিনি পাত্রী পক্ষের আর্থিক অবস্থার কথা শুনে আগেই জানিয়ে দেন, কোনওরকম পন তিনি নেবেন না। কিন্তু বিয়ের অন্য খরচ? খবর পেয়ে এগিয়ে এলেন সমাজসেবী চিরঞ্জীব চ্যাটার্জী, অনিন্দিতা চ্যাটার্জী, কৌস্তুভ দত্ত, রোজলি দত্ত প্রমুখ। তাদের সকলের সহযোগিতায় সোমবার রাতে বিয়ে সুসম্পন্ন হল। চিরঞ্জীব এবং কৌস্তুভ জানালেন, আর্থিক প্রতিবন্ধকতা, খর্বকায় হলে কি তাদের বিয়ে আটকে থাকবে? আমাদের সমাজেরও দায়িত্ব রয়েছে শুভ কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। তাই এগিয়ে আসা। আর বর কার্তিকের বক্তব্য, আমি যেমন পন না নিয়ে এগিয়ে এলাম অন্যরাও এগিয়ে আসুক। পন প্রথার বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠুক।