হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের কেন্দ্র হয়ে উঠল শিলিগুড়ি ও ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদন ঃ আসন্ন বিধান সভা নির্বাচনে শিলিগুড়ি এবং ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি আসনে বিজেপির প্রার্থী কারা হবেন সেই দিকে তাকিয়ে ছিল রাজনৈতিক মহল। শেষমেষ বৃহস্পতিবার বিকালে ওই দুই কেন্দ্রের দুই বিজেপি প্রার্থীর নাম ঘোষিত হয়েছে। শিলিগুড়ি কেন্দ্রে শঙ্কর ঘোষ এবং ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি আসনে শিখা চ্যাটার্জী। ফলে এই দুই কেন্দ্রে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে অনুমান করছে বিভিন্ন মহল।

শিলিগুড়ি কেন্দ্রে লড়াই যে ত্রিমুখী তা বলেই দেওয়া যায়। শিলিগুড়িতে বাম কংগ্রেসের জোট প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য। দীর্ঘদিনের পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ তিনি। বহু বছর ধরে তিনি শিলিগুড়িতে সিপিএমের টিকিটে জয়ী হয়ে আসছেন। বাম সরকারের সময় তিনি শিলিগুড়ি থেকে বারবার জয়ী হয়ে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রীর পদ দায়িত্বের সঙ্গে সামলে এসেছেন। মাঝখানে একবার তৃনমুল প্রার্থী ডাঃ রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যের কাছে পরাজিত হন। কাজেই এবারেও তিনি জয়ের বিষয়ে একশভাগ নিশ্চিত। বরঞ্চ এবার দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান পাওয়ার জন্য বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে লড়াই হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। অপরদিকে বাইরে থেকে এসে তিনি প্রার্থী হয়েছেন বলে যে প্রচার তাঁর বিরুদ্ধে হয়েছে সেই প্রচার ঝেড়েফেলে আদা জল খেয়ে মানুষের মধ্যে নিবিড় জনসংযোগ এবং প্রচারে মন দিয়েছেন তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী ওমপ্রকাশ মিশ্র। কখনো হেঁটে, কখনো সাইকেলে তিনি ভোটারদের সঙ্গে মিশে যাচ্ছেন দলীয় কর্মীদের নিয়ে। পরিস্কার বলছেন, উন্নয়নের কাজতো করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেসব উন্নয়ন কাজ করেছেন তা নজিরবিহীন। তাছাড়া করোনা দুর্যোগের সময় তৃনমুল কর্মীরা যেভাবে মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন তাতে তিনি নিশ্চিত জোড়াফুলকে মানুষ নিরাশ করবেন না। অন্যদিকে সিপিএম থেকে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া শঙ্কর ঘোষ প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম ঘোষিত হওয়ার আগে থেকেই প্রচারে বলতে শুরু করেছিলেন, সরকারে বামেরা আসছে না। ফলে বাম প্রার্থীকে জিতিয়ে কি লাভ? আবার শিলিগুড়িতে বাম প্রার্থীকে জয়ী করলে আবারও শিলিগুড়িতে এটা হয়নি, সেটা হয়নি শুনতে হবে। শুধু শিলিগুড়ি নয়, গোটা রাজ্যতো বটেই এমনকি উত্তরবঙ্গের সর্বত্র বিজেপি ভালো ফল করবে বলেই তিনি আশাবাদী।

শিলিগুড়ির পাশে জলপাইগুড়ি জেলার ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি আসনও এবার সকলের নজর কাড়ছে। কারন এই কেন্দ্রে হেভিওয়েট তৃনমুল প্রার্থী তথা মন্ত্রী গৌতম দেবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন একদা তৃনমুল নেত্রী শিখা চ্যাটার্জী। বিজেপির টিকিটে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। যদিও ভোট প্রচারে অনেকটা এগিয়ে তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী গৌতম দেব। গৌতমবাবু ওই এলাকায় রীতিমতো ঘাঁটি তৈরি করে বসেছেন। প্রতিটি ভোটারের বাড়ি বাড়ি তিনি পৌঁছে যাচ্ছেন। শিশুদের মধ্যে চকোলেট বিলি করে তিনি অন্য পরিবেশ তৈরি করছেন। বয়স্কদের দুহাত ধরে প্রনাম করে, মানুষের সমস্যা শুনে বা হাত নেড়ে নেড়ে তিনি ভোটারদের মধ্যে দাগ কাটছেন। কেন্দ্রের ভোটারদের তিনি আগে থেকেই চেনেন বা জানেন, সেই সম্পর্ক আরও বেশি বেশি করে ঝালিয়ে নিচ্ছেন। বলছেন, প্রচুর কাজ হয়েছে এলাকায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা রাজ্যে যে উন্নয়নের ঝড় তুলেছেন সেই ঝড় এসেছে ডাবগ্রাম ফুলবাড়িতেও। তাই এবারও বিপুল ভোটে মানুষ তাঁকে আর্শীবাদ করবেন বলেই বিশ্বাস করেন গৌতমবাবু। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে মূল লড়াইয়ে থাকা বিজেপি প্রার্থী শিখা চ্যাটার্জী জোর দিয়ে বলছেন, আমি জয়ী হবো। কারন মানুষ আর তৃনমুলকে পছন্দ করছেন না। আমি এলাকার মানুষের সঙ্গে ছিলাম, আছি,থাকবো। আমার নাম ঘোষিত হওয়ার অনেক আগেই আমি জনসংযোগে নজর দিই। মানুষতো পদ্ম প্রতীককেই এবার সর্বত্র বেছে নেবেন। একটা হাওয়া চলছে বিজেপির। প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম ঘোষিত হওয়ার পর আরও বেশি বেশি করে শিখাদেবী ঝাঁপিয়ে পড়েছেন এলাকায়। অন্যদিকে সিপিএমের পুরনো প্রার্থী দিলীপ সিং বারবার পরাজিত হলেও এবারও সহজে হার স্বীকার করতে রাজি নন।তাই দিলীপবাবুও মাটি কামড়ে পড়ে থেকে এলাকায় মিটিং, জনসংযোগ, মিছিল শুরু করেছেন। এখন ফলাফল কি হবে তা জানা যাবে ২ মের পর।