
নিজস্ব প্রতিবেদন ঃমাত্র এগার বছর বয়স ইশিকা মুন্ডার।ওর বাবা কর্মসূত্রে বাইরে থাকে।আর মা কালচিনি চা বাগানে পাতা তোলার কাজ করে। কিন্তু চোখে দেখতে পায় না ইশিকা। বৃহস্পতিবার হাসিমারার সমাজসেবী দিদি নম্বর ওয়ান খ্যাত শুক্লা দেবনাথ ইশিকাকে কালচিনি থেকে শিলিগুড়ি নিয়ে আসেন।সঙ্গে ইশিকার মা-ও ছিলেন।শিলিগুড়িতে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসককে দেখানোর পর তাদের বক্তব্য, ইশিকার চোখের দৃষ্টিশক্তি আর ফিরে আসা সম্ভব নয়। ফলে ইশিকার মা কান্নায় ভেঙে পড়ে।সেই সঙ্গে চিন্তা করতে থাকে, ইশিকাকে আগামী দিনগুলোয় কিভাবে নিরাপদে রাখা হবে। কেননা চা বাগানে পাতা তুলতে গেলে ইশিকাকে একা বাড়িতে রাখতে হবে।আর তার দৃষ্টি না থাকার জেরে কোনো অশুভ শক্তি তার ওপর শারীরিক অত্যাচার বা কোথাও পাচারকারী করে দিতে পারে।মা চায় মেয়ের নিরাপদ আশ্রয়। বিষয়টি চিন্তা করে ইশিকার মা সমাজকর্মী শুক্লা দেবনাথকে জানালে শুক্লা দেবনাথ বিষয়টি খবরের ঘন্টার নজরে আনেন।খবরের ঘন্টার সম্পাদক বাপি ঘোষ পুরো বিষয়টি জেনে বৃহস্পতিবারই মানবিক কারনে যোগাযোগ করেন শিলিগুড়ি বর্ধমান রোডের দ্য হিমালয়ান আই ইন্সটিটিউটের সমাজসেবী কমলেশ গুহের সঙ্গে। কমলেশবাবু এবিষয়ে শালুগাড়ার বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের স্কুল প্রেরণার বিশিষ্ট সমাজসেবী রীতা সেনগুপ্তের সঙ্গে কথা বলেন।খবরের ঘন্টার সম্পাদক বাপি ঘোষও রীতাদেবীর সঙ্গে কথা বলেন ইশিকার পুর্নবাসনের বিষয়ে।রীতাদেবী খবরের ঘন্টার সম্পাদককে পরামর্শ দেন, বৃহস্পতিবারই ইশিকাকে তাঁর অভিভাবক সমেত শালুগাড়ার প্রেরনা স্কুলে পৌঁছে দিতে।এরপর খবরের ঘন্টার সম্পাদকের দেখানো পথে দৃষ্টিহীন ইশিকা,ওর মা এবং সমাজসেবী শুক্লা দেবনাথ পৌঁছে যান শালুগাড়ার সেই স্কুলে।সেই স্কুলে এরপর শিক্ষিকারা ইশিকার জড়তা কাটিয়ে তুলতে তাদের বিভিন্ন বিস্ময়কর ও ব্যতিক্রমী কর্মকান্ড বোঝাতে থাকেন গোটা স্কুল ঘুরিয়ে। দেখা যায়, দৃষ্টিহীন সহ অন্য বিশেষ চাহিদা সম্পন্নরা সেখানে বিস্ময়কর সব কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। গোটা স্কুল চত্বরে প্রতিভাবান বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের অসামান্য সব কাজের নমুনা ফুটে উঠেছে। কেও হাতের কাজ শিখছে এবং প্রতিবন্ধকতা জয় করে সব হাতের কাজ করছে।কেও দৃষ্টিহীনতা এবং অন্য প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে পড়াশোনা শিখছে। প্রেরনাতে থেকেই কয়েকজন দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আবার প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে ওরা কেও খেলাধুলা করছে। প্রেরনার শিক্ষিকার ওদের প্রতিভা অনুযায়ী কাওকে সঙ্গীত কাওকে ছবি আঁকা সহ অন্য কাজেও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ওদের হাতে তৈরি পন্য বিপণনও হচ্ছে। শিক্ষিকাদের নিরলস প্রচেষ্টায় মূল স্রোতে ফিরছে বহু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলেমেয়ে। দেশ ও সভ্যতাকে এগিয়ে দিতে প্রেরনার এই প্রয়াস সত্যি এক অন্যরকম প্রেরনা। হতদরিদ্র চা শ্রমিক গাঁয়ের মেয়ে ইশিকাও সেখান থেকে প্রেরনা পেয়ে জীবনে পাক নতুন আলো, বিদায় নিক ওর জীবনের সব অন্ধকার এমনটাই চায় ইশিকার মা।
