হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সহ ৭৭ জন সেলিব্রিটির সংস্পর্শ নিয়ে অন্য সঙ্গীতের নেশায় পাঞ্চালি

বাপি ঘোষ ,শিলিগুড়িঃ সঙ্গীত জগতের বিখ্যাত সেলিব্রিটি লতা মঙ্গেশকরের স্বাক্ষর তার ডায়েরির পাতায় আজও শোভা পাচ্ছে। আবার বিখ্যাত শিল্পী আশা ভোসলের সইও তিনি যত্নে রেখে দিয়েছেন। ১৯৯০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি শিলিগুড়িতে এক অনুষ্ঠানে লতা-আশা দুই বোন এলে অন্য অনেক অটোগ্রাফশিকারীদের মতো তিনিও সই নেওয়ার নেশায় মাতেন। লতা মঙ্গেশকর সই দিয়ে লেখেন, উইথ লাভ। আবার আশা ভোসলে লেখেন, প্যার কে সাথ। এভাবে সঙ্গীত জগতের বহু সেলিব্রিটির পাশাপাশি ক্রিকেট জগতের সেলিব্রিটিদের মধ্যে শচিন তেন্ডুলকার , সুনীল গাভাস্কার, কপিল দেব সহ আরও অনেক বিখ্যাতদের সই তার ডায়েরির পাতায় আজও জ্বলজ্বল করছে। সেলিব্রিটিদের সই সংগ্রহের পাশাপাশি সঙ্গীত চালিয়ে যাওয়া তার নেশা। ছোট থেকেই গান করছেন। এখন এই ৪৪ বছর বয়সে গান শিখতে তিনি কলকাতায় দৌড়ে যাচ্ছেন।
শিল্পী পাঞ্চালি চক্রবর্তী। বাড়ি শিলিগুড়ি বাবুপাড়ায়। তার বাবা পরিতোষ চক্রবর্তী অতিরিক্ত জেলা শাসক হিসাবে কাজ করতে করতেই অবসর গ্রহন করেছেন। ছোট থেকেই রবীন্দ্র সঙ্গীত ছাড়া অন্য সঙ্গীত নিয়ে নেশায় মাতেন তিনি। আর তার সৌভাগ্য যে প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী হেমন্ত মুখ্যোপাধ্যায় , সুচিত্রা মিত্র, বনশ্রী সেনগুপ্ত, অরুন্ধতী হোমচৌধুরির মতো শিল্পীদের সংস্পর্শে আসেন কয়েকবার। হেমন্ত মুখ্যোপাধ্যায়ের মতো বিরাট মাপের শিল্পীর সঙ্গে তার তোলা ছবি তার ঘরে শোভা পাচ্ছে। একইভাবে সুচিত্রা মিত্রের সঙ্গে তার বিভিন্ন বার বিভিন্নভাবে তোলা ছবি তার ঘরে রয়েছে। সুচিত্রা মিত্র তার সঙ্গীত নিয়ে তাকে এবং তার বাবাকে কয়েকবার তারিফ করে চিঠিও লিখেছেন। সেসব চিঠিও তার ঘরে আজও যত্নে রাখা আছে।
তখন তার বয়স মাত্র পনের বছর। ১৯৮৯ সালের জুন মাস। শিলিগুড়ি দীনবন্ধু মঞ্চে অনুষ্ঠান করতে আসেন প্রথিতযশা শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। সেই অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন পাঞ্চালিও। রসিকতা করে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তাকে বলেছিলেন, তুই কি আমার সঙ্গে ডুয়েট গাইবি নাকি? পাঞ্চালির কথায়, আমি তখন খুব ছোটো। প্রখ্যাত সেই শিল্পীর সেই রসিকতা আমি সেভাবে ধরতে পারি নি। আমি তাকে বলে ফেলেছিলাম, না, আমি আপনার সঙ্গে ডুয়েট গাইবো না। আমি একাই গাইবো। আজ বুঝি কি ভুল বলেছিলাম। অতো বড়ো শিল্পীর সঙ্গে এক লাইন গাইতে পারাটাই যে সৌভাগ্যের ব্যাপার ছিল তা বুঝতে পারি নি। পরে আমার গান শুনে উনি প্রশংসা করেন। আর সুচিত্রা মিত্র তার গান শুনে সামনেত বটেই চিঠি লিখেও প্রশংসা করেন। অন্যদিকে মান্না দের মতো শিল্পীও তার গানের সিডিতে সামান্য একটু গান শুনে তার প্রশংসা করেন। তার রবীন্দ্র সঙ্গীতের মোট আটটি সিডি প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা পেয়েছেন পাঞ্চালি। লোক গান নিয়েও এখন কাজ করছেন। কলকাতা থেকে দিশারি পুরস্কারও এসেছে তার ভাগ্যে। এখন গানই তার নেশা। বিখ্যাতদের সই সংগ্রহ করার নেশার সঙ্গে তার গানের নেশা তাকে এলাকাতে পরিচিতি দিয়েছে।লতা-আশা থেকে শুরু করে হেমন্ত মুখ্যোপাধ্যায়, পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, হৈমন্তী শুক্লা, রুমা গুহঠাকুরতা, সিনেমার স্টার অমিতাভ বচ্চন, জয়া বচ্চন, পরিচালক সত্যজিত রায়, মৃণাল সেন, মিউজিসিয়ান রবি শঙ্কর, বাপী লাহিড়ী, কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়, সুনীল গাঙ্গুলি, জয় গোস্বামী, অভিনেতা সৌমিত্র চ্যাতারজী, চুনি গোস্বামী, শচিন তেন্ডুলকার, গাভাস্কার, কপিল দেব, মহম্মদ আজহারউদ্দীন, দিলিপ বেংসরকারের অটোগ্রাফ সহ ৭৭ জন বিখ্যাত জনের অটোগ্রাফ তার কাছে সযত্নে আছে। সুধা চন্দ্রনের মতো বিখ্যাত নৃত্য শিল্পীর সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে নাচ করার অভিজ্ঞতাও তার রয়েছে। একসময় নিয়মিত নৃত্যও করতেন পাঞ্চালি। আকাশবাণী শিলিগুড়িতেও তার অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়েছে। এখন তার ইচ্ছা কলকাতায় গিয়ে কিছু অনুষ্ঠান করার। তার আক্ষেপ, উত্তরবঙ্গে সঙ্গীত জগতে অনেক প্রতিভা থাকলেও সুযোগের অভাবে সেসব হারিয়ে যায়। উত্তরবঙ্গের অনেক শিল্পীর যোগ্যতা থাকলেও তার মর্যাদা পায় না।