এক কোটি ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে দানধ্যানের কর্মসূচি, দানেই সুস্থতা অনুভব করছেন এই বৃদ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদন ঃ আজ এই খবরে যে ব্যক্তির দান করার বড় মানসিকতা সম্পর্কে জানতে পারবেন সেই ব্যক্তির বয়স ৭৭ পেরিয়েছে। তার নানা শারীরিক সমস্যা রয়েছে। এক, তার ফুসফুসে সমস্যা, দুই, তার হার্টে সমস্যা, তিন, তার শারীরিক অন্যান্য সমস্যা রয়েছে। শিলিগুড়ি দেশবন্ধুপাড়া লেকটাউন বঙ্কিম সরণীতে তার বাড়ি। বাড়িতে বসেই তিনি বিভিন্ন মানবিক দানধানের কাজ করে চলেছেন। আর অবাক কান্ড, তার স্ত্রী পূর্নিমা বসু প্রয়াত হয়েছেন গত ২০১৮ সালে। স্ত্রীর মৃত্যুর পর সম্পদের একটি বিরাট অংশ তিনি ব্যাংকে গচ্ছিত রেখেছেন অর্থাৎ এক কোটি ১০ লক্ষ টাকা। সেই টাকা দিয়ে তিনি বিভিন্ন দান বা সামাজিক কাজ করে চলেছেন যা আজকের যুগে সত্যিই এক ব্যতিক্রমী নজির। সম্পদ বা অর্থ অনেকেরই রয়েছে। অনেকেই তার সম্পদ দিনের পর দিন কিভাবে বৃদ্ধি করা যায়, সেদিকেই নজর দেন। দানধ্যান বিশেষ করে নিঃস্বার্থ দানের প্রতি কম মানুষেরই আগ্রহ রয়েছে। বরঞ্চ অর্থ সম্পদ দিয়ে কিভাবে বেশি বেশি করে ভোগবিলাসে মেতে থাকা যায় সেদিকেই অনেকের নজর বেশি। এই দান প্রসঙ্গে আজকের এই খবরে কিছু আধ্যাত্মিক প্রসঙ্গ উত্থাপন করতে হচ্ছে। আমাদের হিন্দু ধর্মের গীতা থেকে শুরু করে বৃহদারণ্যক উপনিষদ সর্বত্রই দানের কথা বলা হয়েছে। গীতার কর্মযোগে আসক্তিবিহীন দানের উল্লেখ রয়েছে। বৃহদারণ্যক উপনিষদে বলা হয়েছে, তিনটি প্রধান গুনাবলী শিখুন– আত্ম সংযম,দান এবং সমস্ত জীবনের জন্য করুনা। আমাদের হিন্দু ধর্ম আরও বলছে, ” দান করা নিজের জন্য একটি বড় পুরস্কার।” অপরদিকে আপনি যদি ইসলাম ধর্মের দিকে তাকান সেখানে বলা হয়েছে, দানশীলতা একটি মহৎ গুণ, দানের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার দেওয়া সম্পদের সুকরিয়া আদায় করা হয়, সম্পদ বৃদ্ধি পায়— আল্লাহ তায়ালা বলেন,” যদি তোমরা দান প্রকাশ্যে করো, তবে তা উত্তম, আর যদি তা গোপনে করো এবং অভাবীদের দাও তবে তা তোমাদের জন্য শ্রেয়। এর মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের মন্দগুলো মোচন করে দেবেন। তোমরা যা করো, আল্লাহ তা অবগত আছেন।” আবার বৌদ্ধ ধর্ম বলছে, দান করার মাধ্যমে উদারতা বিকশিত হয় । দান করার মাধ্যমে একটি পারফেকশন আসে। বৌদ্ধ ধর্ম বিশ্বাস করে, দানের বিনিময়ে কিছু না চাওয়া হলে বৃহত্তর আধ্যাত্মিক সম্পদ পাওয়া যায়। শিখ ধর্মে দানের উদাহরণগুলোর মধ্যে নিঃস্বার্থ সেবা ও লংগরের কথা বলা হয়েছে। পবিত্র বাইবেল বলছে,” প্রত্যেক ব্যক্তি আপন আপন হৃদয়ে যেরূপ সংকল্প করিয়াছে তদনুসারে দান করুক, মনোদুঃখপূর্বক কিংবা আবশ্যকু বলিয়া না দিউক, কেননা ঈশ্বর হৃষ্টচিত্ত দাতাকে ভালোবাসেন।” এ প্রসঙ্গগুলো এজন্যই এলো যে বার্ধক্যে রোগ ব্যাধি এবং স্ত্রী বিয়োগের পরও এক কোটি ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে দানধ্যান বা সামাজিক কাজের এক বিরাট কর্মযজ্ঞ শুরু করেছেন নীতিশ বসু। তিনি তার স্ত্রীর নামে তৈরি করেছেন পূর্ণিমা বসু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। ২০২০ সাল থেকে সেই বিভিন্ন মানবিক দান বা সেবামূলক কাজ করে চলেছে এই সংস্থার। সংস্থার চেয়ারম্যান নীতিশবাবুকে যখন এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয় যে এত টাকা আপনি মানবিক ও সামাজিক কাজের পিছনে কেন ব্যয় করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন— জবাবে তিনি যা বলেন তা রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো একটি দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ বইকি। নীতিশবাবু বলেছেন, দানধ্যানের মাধ্যমেই তিনি বেশি সুস্থ অনুভব করেন, মানসিক শান্তি পান এমনকি রোগযন্ত্রণা থেকেও স্বস্তি অনুভব করেন। তিনি সেবামূলক কাজের সময় সব সময় অনুভব করেন, একটি সুপার পাওয়ার তার সঙ্গে কাজ করছে। আর সেই সুপার পাওয়ার নিজের ভিতরে অনুভব করছেন বলেই অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে থেকেই তিনি সামাজিক সেবামূলক কাজ পরিচালনার বিভিন্ন দিক সামলে চলার শক্তি পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন—-