
নিজস্ব প্রতিবেদন ঃ শিলিগুড়ি উত্তর ভারতনগরে বাড়ি কাবেরি চন্দ সরকারের।পাঁচ বছর বয়স থেকেই তিনি মৃতদেহ সৎকার এর মতো সামাজিক কাজে যুক্ত। এখন পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি মৃতদেহ দাহ করেছেন। আর করোনা পর্বেই সাড়ে চারশোর বেশি মৃতদেহ সৎকার করেছেন। শুধু তাই নয়, এই ব্যতিক্রমী সামাজিক কাজে এক নজিরও তৈরি করেছেন কাবেরিদেবী। করোনা পর্বেই মৃতদেহ দাহ করার জন্য তৈরি করেছেন মহিলা বাহিনী। তিনি তৈরি করেছেন মুক্তধারা ফাউন্ডেশন নামে সংগঠনও।সেই সংগঠনে ৬৫ জন সদস্যা রয়েছেন। এরমধ্যে পঁচিশ জন মহিলা মৃতদেহ দাহ করার কাজে যুক্ত। মহিলাদের স্বনির্ভরতার জন্যও বিভিন্ন ভাবে কাজ করছেন তিনি। আর মহিলাদের আত্মরক্ষার জন্য এবার তিনি গামছা এবং ওড়না দিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ শুরু করছেন। কাবেরিদেবী বলেন, মৃতদেহ সৎকার করার মতো ভালো কাজে নেমেও তাঁরা অনেক সমস্যায় পড়েছেন।দাহ কাজ করলে মদ্যপান করতে হয় বলে তাদের পীড়াপীড়ি বা নিপীড়ন করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও তাঁরা কেও মদ্যপান করেননি। শ্মশানে একদল মদ্যপ পুরুষ এজন্য তাদেরকে পেত্নী বলে টিপ্পনী কেটেছে। তাদের ওপর হামলা হয়েছে। তাই এবার গামছা এবং ওড়নার মাথায় পাথর বেঁধে মহিলাদের আত্মরক্ষার বিশেষ প্রশিক্ষন শুরু করছেন তাঁরা । কাবেরিদেবী আরও বলেন, আমরা মরা মানুষ ভয় পাই না। ভয় পাই কিছু জ্যান্ত মানুষের পাশবিক কাজকে।
অনাথ শিশুদের খাবার, বস্ত্র পৌঁছে দেওয়ার মতো মানবিক কাজও করে চলেছেন এই মহিলা সমাজসেবী। ছোট থেকেই সংগ্রাম করে চলেছেন কাবেরিদেবী। তাঁর বাবা প্রয়াত দুলাল চন্দ ক্যুরিয়র সার্ভিসে কাজ করার ফাঁকে বিড়ি বাঁধতেন। বাবার সঙ্গে থেকেই সৎকারের মতো সামাজিক কাজের তালিম তাঁর শুরু হয়েছিল। আর ছোট থেকেই তাঁর ভয় কেটে গিয়েছিল। পরিবেশ বিজ্ঞানের ওপর অনার্স নিয়ে স্নাতক উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। নৃত্য, সঙ্গীত, অঙ্কনের মতো সৃজন কাজেরও তিনি সবসময় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে মৃতদেহ দাহ করার কাজে যুক্ত হওয়ায় কিছু মানুষ নিন্দা করেন কাবেরিদেবীকে। সেসব নিন্দায় কান না দিয়ে তিনি আরও কাজ করতে চান।আর এত দাহ কাজ করলেও কোথাও শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান বা মৎস্য মুখিতে তাঁরা যোগ দেন না।এ প্রসঙ্গে তাদের স্পষ্ট কথা, কারও মৃত্যুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মাছ খেয়ে কেন শ্রদ্ধা নিবেদন হবে? বরঞ্চ সেই টাকায় অভুক্তদের পেট পুরে খাওয়ানো হলে অনেক মঙ্গল হবে। শিলিগুড়িতে বীরাঙ্গনা সহ অন্যান্য পুরস্কার পেয়েছেন কাবেরিদেবী। এখন তিনি সামাজিক কাজ বা অভুক্ত অসহায়দের সহায়তার জন্য মুক্তধারা ফাউন্ডেশনে সকলের সহযোগিতা চান।
