
বাপি ঘোষ ঃ রাস্তায় পড়েছিল মদের বোতলটা।কেও একজন নেশায় বুঁদ হয়ে খালি বোতলটা ফেলে দিয়েছিলো রাস্তায়। হঠাৎ সেই বোতলে গিয়ে নজরটা পড়ে বাউন্ডুলের।বাউন্ডুলের আর কাজ কি,সে-ওতো নেশা করে!কিছু যেন খুঁজে বেড়ায় বাউন্ডুলে।চোখের নজরটাইতো অন্যরকম।রাস্তায় পড়ে থাকা সেই খালি মদের বোতলটা সযত্নে ঘরে তুলে এনে বসে পড়ে আর্ট নিয়ে। ফেব্রিকের কাজ ফুটিয়ে তুললো সেই মদের বোতলে।ছবিতে এখন দেখবেন সেই মদের বোতল? বিশ্বাস হবেতো আর্টটা দেখে? দেখুননা ছবিতে, কি সুন্দর জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রা রুপ নিয়েছে সেই বোতলে!! কারও কাছে ও এসব শেখেনি,নিজে থেকেই এসব করে বেড়ায়।এভাবে অনেক ফেলে দেওয়া মদের বোতল,শসের বোতল আজ যেন নতুন প্রান ফিরে পেয়েছে বাউন্ডুলের শিল্প কলায়। এই শিল্প কলাই এক নেশা সম্ভাবনাময় ব্যতিক্রমী এই বাউন্ডুলের। সবে স্কুলের গন্ডি পেরিয়েছে, কলেজে পা রাখছে।বয়স সতেরো প্লাস।কিন্তু শিল্প কলায় কি অসম্ভব প্রতিভা তাঁর, চিন্তার বাইরে। মাটির বিভিন্ন সরাগুলো দেখুন, কি সুন্দর ছবিতে ভরিয়ে তুলেছে এই প্রতিভাময়ী।বাউন্ডুলে তাঁর ডাক নাম,কেও গুনু,কেও তিতাস বলে ডাকে।আসলে ভালো নাম প্রিয়াঙ্কা। প্রিয়াঙ্কা মোহন্ত।শিলিগুড়ি পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রান্তিক এলাকা আদর্শ পল্লীতে ভাড়া বাড়ি এই প্রিয়াঙ্কার।আর্থিক পরিস্থিতি যে খুব ভালো, তা বলা যাবে না।ফলে অনেক প্রতিবন্ধকতা, অনেক সমস্যা আছে।কিন্তু আর্থিক দুঃখের কথা ভেতরেই রেখে দেয় প্রিয়াঙ্কা।কাওকে প্রকাশ করে না। সদিচ্ছা যদি থাকে আর ভিতর থেকে কোনো কিছু ফুটিয়ে তোলার নেশা যদি চেপে বসে তাকে কেও আটকে রাখতে পারে না এই প্রতিভাময়ী বাউন্ডুলে তেমনই বিশ্বাস করে ।
ছবির নেশার কথাতো শুনলেন।ওর আরও কি কি নেশা আছে শুনবেন? হ্যাঁ,ভরত নাট্যম।ভারতবর্ষের ঐতিহ্যমন্ডিত শাস্ত্রীয় নৃত্য ভরত নাট্যম ওর আর একটি নেশা।ওর পা হাত সহ সমগ্র শরীর যখন ভরত নাট্যমের নেশায় ডুব দেয় তখনতো আপনার মনে আসতেই পারে, এ কি কোনো সরস্বতীর বরকন্যা?!!!
ভরত নাট্যমের নেশা ওর এমনই যে মমো,চাউমিন নামক ফার্স্ট ফুডকে ও বিদায় জানিয়েছে।আগে খুব মমো,চাউমিন খাওয়া হচ্ছিল। আর তাতে চড়চড়িয়ে বাড়ছিল ওজন।পরিস্থিতি এমন হয় যে ডাক্তারের কাছেও ওকে পরামর্শ গ্রহণ করতে হয়। ডাক্তার ওসব ফার্স্ট ফুড ছাড়ার পরামর্শ দেন। কারন,ফার্স্ট ফুডের জেরে ওজন আরও বাড়লে ভরত নাট্যমের অনুশীলনে ক্ষতি হতে পারে। ফার্স্ট ফুড ভরত নাট্যামের ক্ষতি করতে পারে বুঝতে পেরেই ফার্স্ট ফুডকে বিষাক্ত শত্রু মনে করে বিদায় জানায় প্রিয়াঙ্কা। তাছাড়া শাস্ত্রীয় নৃত্য চর্চাকে একধরনের ব্যায়াম বা যোগ বা আসন হিসাবেই মনে করে প্রিয়াঙ্কা।
বয়সটা কম,সবে যৌবন এসেছে। এই বয়সে ছেলেমেয়েরা আজকাল নীতিনৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে মদ্যপান বা সিগারেট খায়।বাউন্ডুলের কাছেও বন্ধু বান্ধবদের আড্ডায় তেমন নেশার অফার এসেছে — আরে খা– না, বাবা একদিন।একদিন খেলে কিস্যু হবে না।অন্তত একটা সিগারেটতো ধরাবি?
কচি বয়সের মেয়েটি সেদিকেও নিয়ন্ত্রণ রেখেছে। ওর কথায়,এসব নেশা কেন করবো? নেশাতে করবো সৃজনশীলতার।তাই আকা,নৃত্যের সঙ্গে লেখালেখি মানে অনু গল্প, উপন্যাস লেখাতেও ডুব দেয় বাউন্ডুলে।
কিছু খুঁজছে ও,নতুন কিছু সৃজন।তাই কখনো মহানন্দা সেতুর ধারে গিয়ে বসে পড়ে।আপন মনে দেখতে থাকে,খুঁজতে থাকে — ও নদীরে,বলো তোমার কোথায় দেশ?! এমন সব কাব্যিক মন, কাব্যিক ভাবনা থেকে কে যেন একদিন বলে বসে,তোর নাম বাউন্ডুলে। সেই থেকে তার বাউন্ডুলে নামের প্রবর্তন। আর গুনগুন করে ও গান গায় বলে নাম হয়ে যায় গুনু।
পাড়ায় বন্ধু বান্ধবদের আড্ডায় পরনিন্দা পরচর্চা শুরু হলে ও সেই পরনিন্দা পরচর্চায় জল ঢেলে বন্ধু বান্ধবদের সৃজনশীলতার গল্পে নিয়ে যায়। আর তা দেখে কখনো কখনো বন্ধু বান্ধবরা হাল ছেড়ে দিয়ে বলতে থাকে,তোর সঙ্গে পারা যাবে না,তুই শুধু ইতিবাচক ভাবনা নিয়ে থাকিস।
সবার জীবনে কষ্ট দুঃখ যন্ত্রণা রয়েছে। শিল্পীদের আরও বেশি।কারন শিল্পী মন বেশি সংবেদনশীল বা আবেগপ্রবণ। সেই হিসাবে বাউন্ডুলেরও কখনো দুঃখ, রাগ হয়।আর সেসব নিয়ন্ত্রন করতে ও হাতে তুলে নেয় খমক বা একতারা।খমকেরতো নামই রেখে ফেলেছে, কাকাতুয়া।!!!
রাগ দুঃখ বেশি হলে একতারাটা এমনই বাজাতে থাকে যে তাঁর “তার”টিই ছিঁড়ে যায়।কখনো রাগ দুঃখ বেশি হলে ভরত নাট্যমের তাল পাকা মেঝেতে এত জোরে জোরে অনুশীলন করে যে পা এর পাতা ফেটে রক্তও বের হতে থাকে।
ছোট থেকেই ভিন্ন ধর্মী এই বাউন্ডুলে মেয়ে।নৃত্য, অঙ্কন অনেক পুরস্কারও এনে দিয়েছে ওকে। কিন্তু সেসবে মাথা ঘুরে যায়নি।কারন ওর কথায়,এখনো বহু দূর রাস্তা। অনেক স্বপ্ন। তাই অনুশীলন আর অনুশীলন সঙ্গে একটা ভালো মন, সেই মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ কাজ নয়।কঠিন সেই সাধনায় ডুব দিয়েছে শিলিগুড়ির এই ছোট্ট প্রতিভা মেয়ে।খবরের ঘন্টা আগামী দিনে ওর আরও সাফল্য কামনা করে,রইলো অনেক শুভ কামনা।
বিস্তারিত নিচের লিঙ্কে —-
