ক্যান্সার আক্রান্ত মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে নতুন প্রান দিতে কবি সুকান্ত হাইস্কুলে নতুন দৃষ্টান্ত মনুষ্যশ্রী

নিজস্ব প্রতিবেদন ঃ ” চলে যাবো– তবু আজ যতক্ষন দেহে আছে প্রান / প্রাণপনে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল / এবিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি / নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার ” ছাড়পত্রে লিখেছিলেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। সেই মহান কবি আজ আমাদের মধ্যে নেই বটে কিন্তু তাঁর নামাঙ্কিত কবি সুকান্ত হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীরাতো রয়েছে। শিলিগুড়ি জংশন পাতিকলোনি এলাকায় অবস্থিত সেই স্কুলের ছাত্রছাত্রী,শিক্ষক শিক্ষিকারা মিলে এমন এক মানবিক কাজ করলেন যা এক নতুন মনুষ্যশ্রীর বার্তাই তৈরি করলো। রাজ্য সরকার স্কুল কলেজের জন্য কন্যাশ্রী,ঐক্যশ্রী সহ আরও অনেক প্রকল্প চালু করেছে শিক্ষার প্রসারে। সেইসব প্রকল্পের টাকা থেকে ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা স্কুলেরই ক্যান্সার আক্রান্ত এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর প্রান বাঁচাতে এগিয়ে এলো।আর তাদের সেই মানবিক মুখের জন্য কন্যাশ্রী, ঐক্যশ্রী,মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল সবই যেন হয়ে উঠলো এক অন্যরকম মনুষ্যশ্রী বা শিক্ষাশ্রী। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে মানবিক গুনসম্পন্ন সমাজসেবী শিক্ষক মিজানুর আলি সহ ছাত্রছাত্রী অঙ্কিতা বড়ুয়া, নার্গিস, বর্ষা, সোনালি,সোনামনি সবাই মিলে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সেই ছাত্রীর চিকিৎসার জন্য সাহায্য করলো শুক্রবার ।
আর্থিক দিক থেকে অনগ্রসর সেই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কিছু দিন ধরে স্কুলে অনুপস্থিত ছিলো।বিষয়টি নজরে আসে ইংরেজির শিক্ষক মিজানুর আলির।তিনি সমাজসেবা করতে অভ্যস্ত।কিন্তু সেই পরীক্ষার্থী কেন আসছে না,খোঁজ নিয়ে মিজানুরবাবু জানতে পারেন সেই ছাত্রী দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত। সঙ্গে সঙ্গে মিজানুরবাবু কাজে নেমে পড়েন।স্কুলের সবাই জানতে পারেন।স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরাও জানতে পারে। তাঁরা যে কবি সুকান্ত হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রী অনেকটা সেই ভাবনা থেকেই মানুষ মানুষের জন্য ভাবনা নিয়ে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে।কন্যাশ্রী,ঐক্যশ্রী,স্বামী বিবেকানন্দ ফান্ড সহ সবমিলিয়ে এক অসহায় ছাত্রীর প্রান বাঁচাতে তাদের কাজ হয়ে ওঠে যেন এক মনুষ্যশ্রী।সকলের মানবিক স্পর্শে এক নতুন প্রান ফিরে পায় সেই ছাত্রী। শুরু হয় তাঁর চিকিৎসা। কেমোও শুরু হয়েছে। এবারে মাধ্যমিকেও বসছে সে।স্কুলের শিক্ষক মিজানুরবাবু থেকে প্রধান শিক্ষক,অন্য শিক্ষক মনি কুমার,সোমা দাস থেকে অন্য সকলে মিলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। সে ছাত্রীকে কাউন্সেলিংয়ের পাশাপাশি বিনা পয়সায় কোচিং সবই শুরু হয়।
সেই ছাত্রী সংবাদ মাধ্যমের সামনে আসতে না চাইলেও বলছে,একদিকে মাধ্যমিক, আরেকদিকে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই— সকলের মনুষ্যশ্রী মনোভাবে তাঁকে জীবনযুদ্ধে ইতিবাচক ভাবনা এনে দিয়েছে। এ পরীক্ষায় বাঁচার জন্য সকলের সাহায্য নতুন এক জীবনীশক্তি দিয়ে চলেছে তাঁকে। স্থানীয় ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অমর দাসও এই মানবিক কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন। ওয়ার্ডের পুরসভার তহবিল থেকেও তাঁরা ওই ছাত্রীর পাশে থাকছেন বলে কাউন্সিলর জানান শুক্রবার। এদিন শিলিগুড়ি জংশনে সেই ছাত্রীর হাতে কিছু সাহায্য তুলে দেওয়া হয় । শিলিগুড়ি ইউনিক সোস্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, সুমিতা ক্যান্সার সোসাইটিও এগিয়ে এসেছে এই কিশোরী ক্যান্সার আক্রান্তের জীবনে নতুন মোমবাতি জ্বালিয়ে তুলতে। স্বাস্থ্য সাথি কার্ড থেকেও সহযোগিতা পাচ্ছে এই ছাত্রী। ক্যান্সার মানে যে নো এন্সার নয় তা প্রমান করতেও সকলে মাঠে নেমেছেন।
এ বিশ্বকে এই শিশু কিশোরদের বাসযোগ্য করে তুলতে কবি সুকান্ত হাইস্কুলের এই মনুষ্যশ্রীর প্রয়াস রাজ্যের শিক্ষা জগতে যে এক নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করলো তাতো বলাই বাহুল্য।