বেসরকারি স্কুলের থেকে এই সরকারি স্কুলে ভর্তির হিড়িক কেন অভিভাবকদের

বাপি ঘোষ ঃ সরকারি স্কুল ছেড়ে ছেলেমেয়েরা প্রাইভেট স্কুলের দিকে কেন ঝুঁকছে, কি কি পদ্ধতি অবলম্বন করলে ছেলেমেয়েদের বেসরকারি স্কুলে যাওয়ার প্রবনতা কমবে তারজন্য দিনরাত ভেবে চলেছেন এই শিক্ষক।ইতিমধ্যে এই শিক্ষক রাজ্য সরকারের দেওয়া শিক্ষা রত্ন পেয়েছেন।আর এই শিক্ষক যে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সেই স্কুল মুরলীগঞ্জ হাইস্কুল গোটা দেশে একটি মডেল স্কুল হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। শিলিগুড়ি মহকুমার বিধাননগরের মুরলীগঞ্জ হাইস্কুল পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর চা বাগান এলাকায় অবস্থিত। কিন্তু সেই স্কুলে কেন আজ গ্রামের অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের পড়তে পাঠাচ্ছেন, তার বহু কারন।এরমধ্যে এই ভিডিওতে কিছু বিষয় মেলে ধরলেন প্রধান শিক্ষক সামসুল আলম।সামসুলবাবু বলেছেন,স্কুলের বাথরুম টয়লেট কিন্তু একেবারে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।তাদের স্কুলে ছাত্রীদের জন্যই রয়েছে প্রায় ২২টি বাথরুম। ছাত্রদের জন্যও অনেকগুলো বাথরুম রয়েছে। প্রতি ত্রিশ মিনিট অন্তর ডেটল ফিনাইল দিয়ে বাথরুম পরিস্কার করা হচ্ছে। এরজন্য সকাল থেকে স্কুল ছুটি না হওয়া পর্যন্ত সবসময় তিনজন সাফাই কর্মী সবসময় ব্যস্ত থাকছেন।পড়াশোনার বাইরে কোন ছাত্র ভালো খেলতে পারে, কে ভালো গান জানে,কে ভালো ছবি আঁকতে জানে সেসব খুঁজে তাদের সেই সব প্রতিভা তাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে মেলে ধরছেন।এতে সেই সব ছাত্র ছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকরা স্কুলের প্রতি বেশি করে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তাঁরা স্কুল ফাঁকি দিতে চাইছে না। তাঁরা একটি স্কুলের সুন্দর ওয়েবসাইটও তৈরি করেছেন। সেখানে সব মেলে ধরা হচ্ছে। ছাত্র বা ছাত্রীদের মার্ক শিটও মেলে ধরা হচ্ছে। ফলে অভিভাবকরাও ওয়েবসাইটে সব দেখে নিতে পারছেন।এভাবে অভিভাবকদের সঙ্গেও স্কুলের একটি আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। মুরলীগঞ্জ হাইস্কুলে আগে দুটো বাস ছিলো, এখন ছটি বাস হয়েছে। মিড ডে মিলে মাশরুম দেওয়া হচ্ছে। কম খরচ অথচ খুব পুষ্টিকর হলো মাশরুম। এই স্কুলে মিড ডে মিলে মাশরুম দেওয়ার প্রথা এখন শিক্ষা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। এই স্কুলে কিছু ক্ষন পর পর জল খাওয়ার জন্য ঘন্টা বাজে,ছাত্রছাত্রীদের স্কুল শুরুর সময় বোতলে করে জল দিয়ে দেওয়া হয়। ঘন্টা বাজলে পালা করে তারা জল পান করে। এতে ছাত্রছাত্রীদের কিডনি বা স্বাস্থ্য ভালো থাকছে।স্কুলে জল খাওয়ানের এই পদ্ধতিও গোটা দেশতো বটেই এখন বিদেশেও প্রশংসিত হচ্ছে। স্কুলে এসে কোনো ছাত্র বা ছাত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের অভিভাবকদের অকারনে উদ্বেগে না ফেলে স্থানীয় একটি নার্সিং হোমের সঙ্গে চুক্তি করে নিয়ে সেই সব অসুস্থ ছাত্র বা ছাত্রীর বিনামূল্যে চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। স্কুলে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে, শুরু হয়েছে স্মার্ট ক্লাস। এইসব নানা কারনে ছাত্র বা ছাত্রীরা বাড়িতে বসে থাকতে চায় না,স্কুল তাদের কাছে টানছে।প্রধান শিক্ষক সামসুল আলম বলেন,স্কুল হতে হব ঝা চকচকে। সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা বেশ দক্ষ।তবে কেন ছেলেমেয়ে বা অভিভাবকরা সরকারি স্কুল থেকে মুখ ফিরিয়ে প্রাইভেট স্কুলের দিকে ঝুঁকবে? আর আজকাল নন স্কুলিং এর কিছু প্রবনতাও তৈরি হয়েছে। এই নন স্কুলিং এর থেকে পাশ করা ছেলেমেয়েরা ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে কতটা বাবা মাকে দেখে রাখবে বা কতটা নৈতিক মূল্যবোধ তাদের মধ্যে তৈরি হবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
তাদের স্কুলে তারা পঞ্চম থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত বিশেষ স্পোকেন ইংলিশ এর ক্লাসও নিচ্ছেন।
এইসব শিক্ষা উপযোগী বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করায় তাদের সরকারি স্কুল মুরলীগঞ্জ হাইস্কুলে ছেলেমেয়েরা উৎসাহের সঙ্গে পড়তে আসে। ২০০০-২০০১ সালে শিলিগুড়ি মহকুমার বিধাননগর মুরলীগঞ্জস্থিত এই স্কুলে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ছিল মাত্র ৬৫ জন,আজ সেই স্কুলে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ২৩৪৮ জন।আর আজ এই স্কুল মডেল স্কুল হিসাবেও বহু পুরস্কার পেয়েছে। প্রশ্ন হলো,ইংরেজি বেসরকারি স্কুলের রমরমা ঠেকাতে অন্য সব সরকারি স্কুলগুলো মুরলীগঞ্জের মতো কেন হতে পারছে না?
বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন —