মাতৃ শক্তির আরাধনায় দুই দিনের মাতৃ দিবস উদযাপন সারদা শিশু তীর্থে

নিজস্ব প্রতিবেদন:
দুর্গা পুজো থেকে কালী পুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো—এই উৎসব পর্বে আমরা মাতৃশক্তির আরাধনা করি। তবে মূর্তি এনে জগৎজননী মায়ের পূজা তখনই আরও সার্থক হয়ে ওঠে, যখন আমরা জীবন্ত মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি। কারণ, প্রতিটি ঘরে মা, বোন, দিদির মধ্যেই বিরাজমান মাতৃশক্তি। তাঁদের প্রতি সম্মান জানালেই বদলে যেতে পারে সমাজ ও দেশ—এই বার্তাকেই সামনে রেখে মাতৃ শক্তির আরাধনায় অনন্য উদ্যোগ নিল শিলিগুড়ির সেবক রোডের দুই মাইল এলাকায় অবস্থিত সারদা শিশু তীর্থ।

এই বিদ্যালয় প্রতিবছরই মাতৃ দিবস উদযাপন করে মাতৃ শক্তির জাগরণ ও শ্রদ্ধা নিবেদনের বার্তা নিয়ে। এবারে ৩১ অক্টোবর ও ১ নভেম্বর দু’দিন ধরে অনুষ্ঠিত হলো “মাতৃ দিবস ২০২৫—সপ্তশক্তির আরাধনা”। শিশুর বিকাশে মায়েদের অবদানকে সামনে রেখে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে পালিত হয় এই অনুষ্ঠান।

দুদিন ধরে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে মা ও শিশু স্বাস্থ্য, মায়েদের মধ্যে শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশ, স্বনির্ভরতার জন্য হাতের কাজ শেখা, প্রার্থনা ও শৃঙ্খলা চর্চা প্রভৃতি নানা বিষয় নিয়ে হয় আলোচনা ও কর্মসূচি। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কবিতা পাঠ, সংগীত পরিবেশনা, দেওয়াল পত্রিকা প্রকাশ, বৃক্ষরোপণ সহ নানান পর্বে অংশ নেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ও তাঁদের মায়েরা। বিশেষ আকর্ষণ ছিল মায়েদের হাতে তৈরি হস্তশিল্পের প্রদর্শনী।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট মনোবৈজ্ঞানিক পরামর্শদাতা ডঃ সোমা মৈত্র, ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সঞ্চিতা দেবনাথ, বিদ্যাসাগর কলেজ অফ এডুকেশনের অধ্যক্ষা ডঃ সবিতা মিশ্র, বিশিষ্ট স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ কবিতা মন্ত্রী, শিশু চিকিৎসক ডাঃ এস বি মন্ত্রী, মহারাজা অগ্রসেন হাসপাতালের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ তথা আর এস এসের কর্মকর্তা ডাঃ বিশ্বপ্রতিম রুদ্র, নীলনলিনী বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষিকা মৌসুমি দত্ত, কবিতা দাহাল, দিবাকর ঘোষ, মনোরঞ্জন ঘোষ, রঞ্জনা দেবী, শান্তা পাল, বিদ্যালয়ের সম্পাদক পবন কুমার নাকিপুরিয়া, প্রধান আচার্য নির্ভয় কান্তি ঘোষ, বিমল কৃষ্ণ দাস সহ বহু গুণীজন।

বিদ্যালয়ের দেওয়ালে শোভা পাচ্ছে মা সারদার অনুপ্রেরণাদায়ী বানী—
“মনেতেই সব, মনেতেই শুদ্ধ, মনেতেই অশুদ্ধ। মানুষের নিজের মনটি আগে দোষ করে, তবে সে পরের দোষ দেখে। পরের দোষ দেখলে নিজেরই ক্ষতি।”
আবার অন্যত্র লেখা—
“ভালোবাসায় সব হয়। জোর করে বা কায়দায় ফেলে কাউকে দিয়ে কিছু করা যায় না।”
এবং—
“ভাঙতে সবাই পারে, গড়তে পারে কজন? নিন্দা ঠাট্টা করতে পারে সবাই, কিন্তু তাকে ভালো করতে পারে কজনে?”

এই বাণীগুলো প্রতিদিন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও মায়েদের মন ছুঁয়ে যায়। মাতৃদিবসের দুদিনের আয়োজনও সেই ভাবধারাতেই অনুপ্রাণিত। বিদ্যালয়ের প্রধান আচার্য নির্ভয় কান্তি ঘোষ বলেন, “মাতৃশক্তির জাগরণ এবং তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পরিবেশ তৈরি করতে আমাদের এই ধারাবাহিক প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।”

বৃষ্টি উপেক্ষা করে দুদিন ধরে অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়। বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে একজন মহিলাকে মাতারূপে প্রতিষ্ঠা করে তাঁর বন্দনা করা হয়। সব মিলিয়ে নারীশক্তির জাগরণ ও সমাজ গঠনের এক অনন্য বার্তা নিয়ে শেষ হয় সারদা শিশু তীর্থের এই বছরের মাতৃদিবস উদযাপন।