নিজস্ব প্রতিবেদন:
উত্তরবঙ্গের মাটির গান ভাওয়াইয়া—যা গ্রামেগঞ্জের হৃদয়স্পন্দন। নানা প্রতিবন্ধকতা, আর্থিক সংকট এবং আধুনিকতার ঝড়ের মাঝেও আজও বহু শিল্পী অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই ঐতিহ্যবাহী লোকসংগীতকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কিন্তু তাঁদের জীবনের শেষ প্রান্তে কেমন কাটে সেই সময়? আমরা কতজনই বা রাখি তাদের খোঁজ?

এই প্রশ্নই তুললেন বিশিষ্ট সংস্কৃতি অনুরাগী ও শিলিগুড়ি মহকুমার সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক অরিন্দম রায়, শনিবার শিলিগুড়ি তথ্য কেন্দ্রের রামকিঙ্কর হলে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে।
অরিন্দমবাবু দীর্ঘদিন ধরেই সংস্কৃতি ও মানবিকতার মেলবন্ধনে কাজ করছেন। তাঁর নেতৃত্বে এবং জলপাইগুড়ি মিউজিক্যাল অডিও অ্যান্ড ভিডিও ওয়ার্কার ওয়েলফেয়ার সোসাইটি-র মাধ্যমে ২০১৩ সাল থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের প্রতিভাবান লোকসঙ্গীত শিল্পীদের সামনে নিয়ে আসার এক ব্যতিক্রমী প্রয়াস চালানো হচ্ছে।
এই মহৎ কর্মযজ্ঞে তাঁর পাশে রয়েছেন সংস্থার সভাপতি, বিশিষ্ট সংস্কৃতি অনুরাগী ও ভিডিও এডিটর দেবাশীষ রায়। শুধুমাত্র প্রতিভাবান শিল্পীদের মঞ্চ পাইয়ে দেওয়াই নয়, তাঁদের আর্থিক ও মানবিক সহায়তার হাতও তাঁরা বাড়িয়ে দিচ্ছেন নিয়মিতভাবে।
শনিবারের অনুষ্ঠানে সংস্থার পক্ষ থেকে সংবর্ধিত করা হয় বিশিষ্ট ভাওয়াইয়া শিল্পী ময়নাগুড়ির চৈতন্য দেবরায় এবং শিলিগুড়ির প্রবীণ গিটার শিল্পী মলয় গুহ-কে। পাশাপাশি মানবিক সহায়তা প্রদানের উদ্যোগও নেওয়া হয়। এছাড়াও বিশিষ্ট ভাওয়াইয়া শিল্পী বরদাপ্রসাদ রায়কেও সংবর্ধনার জন্য মনোনীত করা হয়, যদিও বৃষ্টির কারণে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি।
অরিন্দমবাবু এদিন জানান, আগামীতে তাঁরা স্কুল স্তর থেকেই শিশু ও কিশোর শিল্পীদের তুলে আনার পরিকল্পনা করছেন। সেই সঙ্গে সমাজের সকলের সহযোগিতা নিয়ে প্রান্তিক লোকশিল্পীদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা চালুর উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানান তিনি।
চৈতন্য দেবরায় ও মলয় গুহ তাঁদের সংবর্ধনা গ্রহণের পর বলেন, “এ ধরনের মানবিক ও সংস্কৃতিমূলক প্রয়াস সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। অরিন্দম রায় ও দেবাশীষ রায়কে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।”
এই উদ্যোগকে স্বা গত জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন বহু শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট ব্যক্তি—মুরলীগঞ্জ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা শিক্ষা রত্ন সামসুল আলম, রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা দুর্বা ব্রহ্ম, শিলিগুড়ি বয়েজ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল দত্ত, নেতাজি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ আরও বহু গুণীজন। তাঁরা একবাক্যে বলেন, লোকসংস্কৃতির বিকাশ ও শিল্পীদের সম্মান রক্ষায় এই প্রয়াস এক নজিরবিহীন উদ্যোগ।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন বিশিষ্ট সঞ্চালিকা সোমা দাস।
সবমিলিয়ে উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতি রক্ষায়, ভাওয়াইয়া শিল্পীদের পাশে মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো অরিন্দম রায় ও দেবাশীষ রায়ের এই প্রয়াস।

