শিশু দিবস ও কিছু কথা

কাঞ্চন দাস(ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক,নেতাজি বয়েজ প্রাথমিক বিদ্যালয়,শিলিগুড়ি) :
শুধু বছরের একটি দিন জাকজমক পূর্ণ ভাবে উৎসবের মেজাজে শিশু দিবস উদযাপন করলেই শিশুদের প্রতি উপযুক্ত দায়বদ্ধতা সেরে ফেলা যায় না।সারা বছর শিশুদের প্রতি নজর দিয়ে তার সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ঝেপে পড়াই হবে প্রকৃত কর্তব্য শিশুদের প্রতি।বর্তমানে শিশুদের মধ্যে এক অস্থিরতা, শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে অনীহা প্রচন্ড পরিমানে লক্ষ করা যায়।এগুলোর থেকে শিশুদের মুক্ত করতে গেলে প্রয়োজন শিশুদের সুষ্ঠ মানসিক ও শারীরিক বিকাশ।

করোনা কালের পর থেকে শিশুরা প্রায় গৃহ বন্দি ,মাঠ ঘাটের খেলা ধুলা থেকে বিমুখ।শিশুদের এখন একমাত্র খেলার সাথী মোবাইল।মোবাইলের নেতিবাচক প্রভাব আমাদের সকলেরই কম বেশি জানা।বর্তমানে প্রতিদিনকার হিংসা ও অপরাধের ঘটনা সরাসরি মোবাইলে সামাজিক মাধ্যমে ও বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে তুলে ধরা হয়ে থাকে।সেগুলোয় শিশুদের কোমল মন খুব সহজেই আকৃষ্ট হয় এবং সেই অপরাধ ও হিংসার বীজ ছোটো থেকেই তাদের মধ্যে বুনে যায়।

আগামীতে সেই সকল অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।ছোটো থেকেই তাদের মধ্যে মূল্য বোধের শিক্ষা জাগ্রত করতে হবে।সেক্ষেত্রে পরিবার ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।শিশুদের মোবাইল থেকে দূরে সরিয়ে আনতে হবে।এর জন্য প্রয়োজন বাবা মায়ের তার সন্তানের সাথে নিবিড় যোগাযোগ।

সন্তানের প্রতি পর্যাপ্ত সময় ব্যয় করতে হবে পিতা মাতাকে।একটা সময় পরিরারের গুরুজন ,পিতা মাতা তাদের সন্তানদের বিভিন্ন পৌরাণিক ও নীতি গল্প শোনাতো।বর্তমানে পিতা মাতার হাতে সময় নেই।অফিস ও সংসারের কাজকর্মের বাইরে তারা বিভিন্ন অর্থহীন ধারাবাহিক দেখতে ব্যস্ত।যার দরুন পিতা মাতার সাথে সন্তানদের এক নিবিড় আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠছে না।

শিশুরা তাদের মনের অনেক অবসাদ , চাওয়া পাওয়া তার পিতা মাতার সামনে তুলে ধরতে পারছে না।শিশুদের মানসিক বিকাশ ঘটাতে , পড়াশোনায় মনোযোগী করে তুলতে ও অস্থিরতা দূরীকরণের জন্য প্রয়োজন নিয়মিত ধ্যান ,শরীর চর্চা ও খেলা ধুলায় অংশগ্রহন।সঠিক চরিত্র গঠন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধ্যান খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।পড়াশোনায় শিশুদের আগ্রহী করে তুলতে প্রয়োজন ছোটো ছোটো দলগত প্রকল্পের কাজ।এতে করে শিশুদের খুব সহজেই পড়াশোনায় আগ্রহী করে মোবাইলের থেকে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব।

এভাবেই বিভিন্ন দায়িত্বশীল কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়ে শিশুদের শারীরিক মানসিক বিকাশের মধ্যে দিয়ে এক দারুন ভবিষ্যৎ তাদের উপহার দেওয়া সম্ভব।শিশুদের চাপমুক্ত ও এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ উপহার দিতে পিতা মাতার প্রতি কিছু মূল্যবান প্রস্তাব।

1.আপনার সন্তানকে মাঠে খেলতে দিন,আঘাত পাক ও নোংরা হতে দিন।মাঝে মাঝে পরে যাওয়া ও ব্যথা অনুভব কথা ঠিক আছে।সোফার কুশনের মধ্যে আরামদায়ক জীবন আপনার সন্তানকে অলস করে তুলবে।
2.তাদের পোষা কুকুর,বিড়াল,যে কোনো প্রাণী ,পাখি বা মাছ দত্তক নিতে দিন।

3.তাদের কিছু লোক গান শেখান।
4.আপনার সন্তানের জন্য কিছু রঙিন ছবিযুক্ত নীতি গল্পের বই কিনুন।
5.আপনার সন্তানদের টিভি,মোবাইল ফোন,কম্পিউটার ও বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট থেকে দূরে রাখুন।এর জন্য তাদের পুরো জীবন পরে আছে।

6.চকোলেট ,জেলি,ক্রিম কেক,বায়ু যুক্ত পানীয় এবং তেলে ভাজা খাওয়ার দেওয়া এড়িয়ে চলুন।
7.আপনার ছোট্ট সন্তানের চোখের দিকে তাকান এবং আপনাকে দুর্দান্ত একটি উপহার দেওয়ার জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান।কয়েক বছরের মধ্যে তারা আরও উচ্চতায় উড়ে যাবে।
8.বাবা মা হিসেবে এখনই তাদের সাথে আপনার সময় ব্যয় করা গুরুত্বপূর্ণ।