করোনা আবহেও শিব জ্ঞানে জীব সেবার ভাবনায় রোগী দেখছেন এক ডাক্তার

শিল্পী পালিত ঃ আজ আমাদের আত্মকথা বিভাগে শিলিগুড়ি শহরের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ডাঃ শম্ভু চক্রবর্তী লিখেছেন তাঁর আত্মকথা —

শিলিগুড়ি শহরের হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার হিসেবে আমার পরিচিতি। আমার নাম ডাঃ শম্ভু চক্রবর্তী। জন্ম কলকাতায়। বাবার নাম শ্রী মাখন চক্রবর্তী, মা বেলা রাণী চক্রবর্তী। মা ছিলেন মালদা হাসপাতালের নার্স। আমার মায়ের ইচ্ছেতেই আমার ডাক্তারী পড়া। আমারও ইচ্ছে হত মাকে দেখেই। বিপদের সময় ডাক্তার, নার্সরা যেন ভগবান হয়ে যান। ঈশ্বর যেন তাদের মধ্য দিয়ে মানুষের জীবন দান করেন। বাবা ইরিগেশন ডিপার্টমেন্টে ছিলেন। আমার ছোটবেলা মালদাতেই কেটেছে। পরবর্তীতে মায়ের কাটিহার হাসপাতালের কর্মসূত্রে ওখানেও পড়াশোনা করেছি। শিলিগুড়ি শহরের একসময়ের প্রথিতযশা হোমিওপ্যথিক ডাক্তার ছিলেন আমার মেশোমশাই ডঃ নিতাই কান্ত চক্রবর্তী। ১৯৮২ সালে শিলিগুড়ি আসি মেসোমশাই এর কাছে। তার কাছে থেকে চিকিৎসার নানান ধরণ, পদ্ধতি, রোগ নির্নয়ের কৌশল ইত্যাদি শিখেছি। এর সাথেই কলকাতা থেকে বি,এইচ, এম, এস ডিগ্রি অর্জন করি। মেশোমশাই এর তত্বাবধানে অনেক বছর জটিল রোগ নির্নয় পদ্ধতি ও নানান ভাবে শিখেছি। আমি মেশোমশাই এর কাছে এত সুন্দর ভাবে শিখতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। আমি আমার গুরুদেব স্বামী নিগমানন্দ সরস্বতীদেবের আশীর্বাদ মনে করি। মেশোমশাইএর কাছ থেকেই আমার গুরুদেবকে পেয়েছি। গুরুদেবের শিক্ষা ও আদর্শ “ শিব জ্ঞানে জীব সেবা” এইটাকে আমি আমার জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছি। আমার শপথ যতদিন বাঁচব সেবা করে যাব।

১৯৯৭ সালে শিলিগুড়ি যাদব পল্লী, ডাঙ্গিপাড়ায় প্রথম নিজে ডিসপেনসারি খুলি। এখানে প্রতিদিন ৪০/ ৫০ জন রোগী দেখি। তাদের মধ্যে দুঃস্হদের বিনেপয়সায় দেখি । বিশেষ পরিস্হিতিতে বা অবস্হার বিশেষ বিপাকে বাইরে গিয়েও রোগী দেখি। শিলিগুড়ির শক্তিগড়ের শৈলেন্দ্রস্মৃতি পাঠাগার ক্লাবে প্রতি রবিবার বিনেপয়সায় রোগী দেখি। আমার ডিসপেনসারিতে অনেক দূরের শহর থেকেও মানুষ চিকিৎসা করাতে আসেন। আমার গুরুদেবের আশীর্বাদে অনেকের অনেক জটিল রোগ ভাল হয়েছে। ফাটাপুকুরের শেফালি দে র গলায় ক্যানসার ভাল হয়েছে, শিলিগুড়ির পলাতক ঘোষের কিডনির স্টোন ভাল হয়ে গেছে, ডাঙ্গিপাড়ার আখতার আলি ব্রেন স্ট্রোকে পঙ্গু হয়ে যায়। এখন হেঁটে আসেন ওষুধ নিতে। এমন অনেক রোগী আছেন যারা জটিল অবস্হা থেকেও ভাল হয়েছেন। এই সব মানুষদের সুস্হতা আমাকে কবিগুরুর গান স্মরণ করিয়ে দেয়— “ সবায় নিয়ে সবার মাঝে লুকিয়ে আছ তুমি / সেই তো আমার তুমি।। অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো/ সেই তো তোমার আলো।…….” এই করোনা আবহেও প্রতিদিন আমি রোগী দেখেছি।

কলকাতার কসবায় একটি সংস্হা “ ক্যানসার ইনস্টিটিউট হোমিওপ্যাথ অফ কলকাতা” প্রতি বছর পাঁচটি রাস্ট্রের হোমিওপ্যাথ ডাক্তারদের নিয়ে কনফারেন্স এর আয়োজন করে। মাঝে মাঝে সেমিনার ও হয়। আমি প্রত্যেকটি সেমিনারে উপস্হিত থাকি। কনফারেন্সেও যাই। পাঁচটি রাস্ট্র ভারত, বাংলাদেশ,ভুটান, নেপাল, পাকিস্তান। এই সংস্হা ডাক্তারদের সেবামূলক কাজ, দায়িত্ব, কর্তব্য ইত্যাদির ওপর নানারকম পুরস্কার দিয়ে থাকে। আমি ২০১৭ তে বিবেকানন্দ পুরস্কার পাই, ২০১৮ তে একসেলেন্সি পুরস্কার পাই ও ২০১৯ এ রত্ন পুরস্কার পাই। আমার কাছে রোগীর সুস্হতা সবচেয়ে বড় পুরস্কার। সারাজীবন যেন মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারি। সত্যি অর্থে “ শিব জ্ঞানে জীব সেবা “ করতে পারি। এই আমার জীবনের ব্রত। ( সৌজন্যে কবিতা বণিক )