পুজো আসছে, মালাকার শিল্পীদের ব্যস্ততা তুঙ্গে উত্তর দিনাজপুরে

নিজস্ব সংবাদদাতা ঃ উৎসব প্রিয় বাঙালির মনে আনন্দের উচ্ছ্বাস। মন্ডপে মন্ডপে ঘুরে দশভূজার মনমোহিনী রূপ দেখে অভিভূত হবেন সকলেই। মায়ের এই সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলবেন মৃৎশিল্পীদের সাথে সাথে মালাকার শিল্পীরাও। শুধুমাত্র প্রতিমা বা মন্ডপ নির্মান বা আলোকসজ্জা নয়, শারদীয়ার অন্যতম আকর্ষন দেবীর অলঙ্কারও। তাই এখন মালাকার শিল্পীদের ব্যস্ততা তুঙ্গে।

সংসারে অভাব থাকলেও দুর্গা প্রতিমার সৌন্দর্যের ছটা ফুটিয়ে তুলতে দিনরাত কাজ করে চলেছেন তারা। জমকালো সোলার সেটের সাজে দেবীর উজ্জ্বলতা যেন বৃদ্ধি পায় বহুগুন। এইসব সাজ তৈরীতে এখন বেজায় ব্যস্ত উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ পৌর এলাকার দক্ষিন আখানগরের শিল্পী সুনীল মালাকার ও তার পরিবার।কিন্তু এবারে করোনা আবহের কারণে কিছুটা হলেও খামতি দেখা দিয়েছে।কারণ প্রতিবছর যেভাবে দেবী দশভূজার অলঙ্কারের সেট তৈরি করেন তার তুলনায় এবারে অর্ধেক কাজ।

দুর্গা কৈলাশ থেকে কতটা সেজেগুজে আসেন তা নিয়ে শান্ত্রে দ্বিমত থাকতেই পারে। মর্তে দেবীকে অলংকারে সাজানোর দায়িত্ব মালাকার শিল্পীদের। জলাজমিতে নেহাতই অবহেলায় জন্মানো শোলা গাছের কান্ড শুকিয়ে নানান ডিজাইনে কেটে তৈরী হয় দেবীর অলংকার। আর সেই অলংকার ভূষিতা দেবীকে দেখতে যখন মন্ডপে মন্ডপে ভিড় জমান দর্শনার্থীরা, তখনও এই শিল্পীদের পরিবার ব্যস্ত থাকে শোলার অলংকার নির্মানে। পুজোর আগে তাই এখন ভীষন ব্যস্ত শোলা শিল্পীরা। বর্তমান অগ্নিমূল্যের বাজারে পাল্লা দিয়ে প্রাপ্য লাভটুকুও হাতে এসে পৌছায় না বলে জানান ৭৬ বছরের বর্ষীয়ান প্রবীণ শিল্পী সুনীল মালাকার । এই কাজ তাঁদের পিতৃপুরুষের আমল থেকে চলে আসছে। এই শোলাগুলি আনতে হয় জেলার ইটাহার ব্লক থেকে। পাশাপাশি শিল্পীরা আরও জানান যুগ যুগ ধরে দেবীর অলংকার তৈরী করি। পুজোর আগে শিল্পীমনের আবেগকে সঙ্গী করে দেবীর অলংকার তৈরীতে বেজায় ব্যস্ত সোলার সেট শিল্পীরা। শুধু প্রবীনেরাই নয়, এই শিল্পের উত্তরাধিকার বহন করে চলেছে শিল্পীদের নতুন প্রজন্মও। তাঁদের হাতের তৈরী শোলার অলঙ্কারগুলি শুধু এই জেলায় নয় পাশের জেলা সহ ভিন রাজ্যে যায়। পাইকারেরা কিংবা মৃৎশিল্পীরা এসে শোলার তৈরী দেবীর অলঙ্কারগুলি নিয়ে যায়।

শিল্পী সুনীল মালাকার জানান, তাদের পূর্বপুরুষদের এই পেশাগত কাজ মালাকার শিল্প, সারা বছর নানা ধরনের কাজ করলেও এই সময় তা নানাধরনের সোলার সেটের কাজ করেন। দূর্গা পূজার সময় চাহিদাটা বেশি ,তাদের হাতের তৈরী সোলার সেট গুলি পাশের রাজ্য বিহার থেকে শুরু করে উত্তর দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্তে যায়। তবে যেধরনের পরিশ্রম করতে হয় তাদের সেই পরিমান অর্থ উপার্জন নেই। তবু তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে সুনীল মালাকারের সহধর্মিনী মায়া মালাকার জানান সংসারের সমস্ত কাজ মিটিয়ে তিনি তার স্বামীকে সহযোগীতা করেন। তিনি দুঃখের সাথে বলেন দেবীকে নতুন বস্ত্র বানিয়ে পারালেও তাদের কপালে জোটে না পূজোর সময়ে নতুন বস্ত্র। তবুও পেটের তাগিদে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন । কারন কাজটা করতে তাঁদের ভালো লাগে। যতদিন বেচে থাকবেন ততদিন কাজ চালিয়ে যাবেন তাঁরা।