
নিজস্ব প্রতিবেদনঃ তাঁর বয়স এখন ৯৬। কিন্তু এই বয়সেও তিনি একের পর এক কবিতা লিখে চলেছেন। একদিন অন্তত একটি কবিতা না লিখতে পারলে তাঁর রাতের ঘুম বা দিনের খাওয়াদাওয়া উবে যায়। এই করোনা আবহে করোনা নিয়ে চারটে কবিতা লিখে ফেলেছেন এই বৃদ্ধা-কবি। কিন্তু বৃদ্ধা কবি মুকুল দাসের কেন এই নেশা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ” ভালোবাসা। কেন জানি না, কবিতার প্রতি অসীম প্রেম। “

জন্ম অবিভক্ত বাংলার ময়মনসিংহ গ্রামে তাঁর জন্ম ১৯২৫ সালে। শিক্ষা নগরবাড়ি গার্লস হাইস্কুলে। সেই যুগে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া সহজে কেও ভালো চোখে দেখতেন না। ১২ বছর বয়সেই বিয়ে হয়েছিল মুকুলদেবীর। তখনকার দিনে উচ্চ অভিজাত পরিবারের মেয়ে বৌ-রা পাল্কি করে যাতায়াত করতেন। টাঙ্গাইলে পাড়াগ্রাম নামে এক পরিবারে বিয়ে হয়েছিল কবি মুকুল দাসের। বাংলাদেশের বিখ্যাত আন্তর্জাতিক সাহিত্যিক আনিসুজ্জামান তাঁর এক বার্তায় বেশ কিছুদিন আগে লিখিতভাবে কবিতার বই প্রকাশের জন্য তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
মুকুল দাসের স্বামী বীরেন্দ্রমোহন দাস ছিলেন কুসংস্কার বিরোধী, বিচক্ষন ও সৎ ব্যক্তি। সে সময় যে কোনও ধরনের গ্রাম্য বিচার যেমন তিনি করতেন তেমন খেলাধুলায় ছিলেন পারদর্শী, ১১টি রুপার মেডেল তিনি পেয়েছিলেন। দেশ ভাগের পর চলে আসতে হয়েছিল ভারতবর্ষে, পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে। কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দান, সময়ে গ্রন্থ পড়া, হাতের কাজ নিয়ে সময় কাটাতেন মুকুল দাস। তাঁর লেখা কবিতা, প্রবন্ধ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। বেশ কয়েকটি সংস্থা থেকে পুরস্কারও পেয়েছেন। তাঁর কবিতাসমূহ বিভিন্ন রুপে উদ্ভাসিত, কোথাও দেশের বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন, কোথাও গ্রামের দরিদ্র জীবনের কথা, কোথাও বিশ্ব শান্তি। প্রচুর কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। প্রথম কাব্য গ্রন্থ ‘ গোপা গৃহে মুকুল ধরেছে জ্যোৎস্না ধারায়’। মনে রেখো কবিতার বইয়ের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর ১৪ বছর বয়সের লেখার অভিজ্ঞতা, রুপরস এবং গভীর ভাবের অনুভূতি। আবার ভাঙা হাটের শব্দ নামক কবিতার বইতেও তাঁর এই বার্ধক্যে অন্যরকম প্রতিভার বার্তা দিচ্ছে। কত কবিতা তিনি লিখেছেন তাঁর হিসেব নেই অগুনতি। এই বার্ধক্যেও তিনি কিভাবে একের পর এক কবিতা লিখে চলেছেন প্রশ্ন করলে তিনি জানান, তার পুত্র এবং পুত্র বধূ গোপা দাসের উৎসাহ।
সাম্প্রতিক করোনা অতিমারী নিয়েও তিনি কবিতা লিখেছেন চারটে। একটি কবিতায় লিখেছেন, ” ভাইরাস করোনা — কি হেতু আমার দেশে তোর আগমন?/ কি ভেবেছ? ধান দূর্বা দিয়ে দিয়ে তোরে করবো পূজন?/ করবি তুই বিশ্ব ভ্রমন?/এমন কথা ভাবা তোর ভুল—/করোনা ভাইরাস কেঁদেও পাবি না কুল/আর দিস না থাবা — দেখবি কেমন মজা?—” অন্য এক কবিতায় লিখেছেন, “একদিন ঝড় থামবে/ কিন্তু মানুষের দুঃখকষ্ট সহজে যাবে না/লকডাউন চলছে, এখনও পালিয়ে যায়নি করোনা / যারা দিন আনে দিন খায় /এরপর কি হবে ভাবছে তাই, অসহ্য দিনের পর দিন /ঘরে বসে থাকা,করবার কিছু নাই/তবু করোনা দেয় হানা। ” এভাবে বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর কবিতার কলম চলছে। কবিতার বই যেমন তাঁর অনেক প্রকাশিত হয়েছে তেমনই ফেস বুকেও তিনি তাঁর কবিতা প্রকাশ করছেন। তিনি বলেন, অনেক রাত পর্যন্ত ফেস বুক করি।
কলকাতা নিয়েও তিনি লিখেছেন কবিতা। তা প্রকাশিত হয়েছে তাঁর কবিতার বইতে। লিখেছেন, ” কোলকাতা রাজধানী মহানগরী/ তুমি অপূর্ব সুন্দরী। / যতই ঢাকুক মেঘে চন্দ্র নক্ষত্র, তুমি তিলোত্তমা, / অথবা মেঘ ছিদ্র-শূন্য-পূর্ণতার মত তুমি সুষমা।/ সৈকত উপকূল কিম্বা গিরিরাজ যতই সাজুক যেমনি, / ওগো মহারাণী ব্যস্ত নগরী, তুমি গর্বে গরবিনী—/ তোমার স্থাপত্য মৃত্তিকাতে, তুমি অনন্যা জননী। –“এই বার্ধক্যেও পুরো শক্তি নিয়ে তিনি সকলের অন্তরালে যেভাবে একের পর এক কবিতা লিখে চলেছেন তা অনেকের কাছেই এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। মুকুলদেবী বলছেন, করোনা নিয়ে আরও কবিতা লিখছি। আর সেসব নিয়ে আর একটি কবিতার বই প্রকাশ করার ইচ্ছে রয়েছে।