মার্শাল আর্ট মানুষকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখে, জানাচ্ছেন চঞ্চল

শিল্পী পালিতঃ নমস্কার। সকলকে শুভ বিজয়া। আজ আমাদের খবরের ঘন্টার আত্মকথা বিভাগে ক্রীড়া প্রতিভা চঞ্চল সিংহের কথা মেলে ধরা হলো —

আমি চঞ্চল সিংহ। শিলিগুড়ির মহাকাল পল্লীতে থাকি। আমার বাবা গজেন সিংহ, মা জ্যোৎস্না সিংহ। বাড়ির কাছেই মহানন্দা বিদ্যামন্দিরে পড়াশোনা করেছি। ছোটবেলা থেকেই আমার খেলাধূলায় আগ্রহ বেশী ছিল। স্কুলের স্পোর্টসে আমি প্রথম হতাম। লংজাম্প, জিমন্যাস্টিকেও প্রথম হতাম। স্কুল ভার্সেস খেলাতেও আমি আমার স্কুলকে জেতাতাম। ফুটবল খেলতে ভালবাসতাম। ক্লাবের হয়ে অনেক জায়গায় খেলেছি। এর মাঝে টিভিতে ব্রুসলি, জেটলি, জ্যাকি চ্যাং এর খেলা দেখে খুব উৎসাহিত হতাম। পারিবারিক অর্থনৈতিক অসঙ্গতির কারনে আমার মনের ইচ্ছে প্রকাশ করতাম না। বাবার কষ্ট হবে , দুঃখ হবে। আমার বড় দাদা রিপন সিং আমার মনের কথা বুঝতে পেরে ,আমি না বললেও সে আমাকে জাতীয় যুব সংঘে ক্যারাটেতে ভর্তি করে দেন। আমার প্রথম ক্যারাটে গুরু মাষ্টার বিশ্বনাথ স্যার। আমি এক বছরের মধ্যে হোয়াইট বেল্ট থেকে জাম্প করে ইয়োলো বেল্টে চলে আসি। এই সময়ে ডি , ডি, ওয়ানে একটা প্রোগ্রাম খুব মনোযোগ দিয়ে দেখতাম। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা ভালা নিয়ে, তরবারি নিয়ে শাওলিন কংফু খেলা দেখাত। আমি খুব শেখার চেষ্টা করতাম। কায়দা গুলো রপ্ত করার চেষ্টা করতাম।

আমার দাদার সহযোগিতায় চম্পাসারিতে গৌতম রায়ের কাছে কংফু শেখার সুযোগ পাই।সেখানে আরও একজন বিকাশ সিং এর কাছেও কংফু ক্যারাটে শিখি। পাশাপাশি জুড়ো, কুডো, বক্সিং, নিনজা , উসু শিখেছি। দুই বছর শেখার পর আমাদের স্যার দুজন জলপাইগুড়ি পাণ্ডাপাড়ায় “ বেঙ্গল কংফু আ্যসোসিয়েশন “ নামে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলেন। আমি সপ্তাহে একদিন জলপাইগুড়ি গিয়ে শিখতাম। ২০১৩ তে পাটনায় জুনিয়ার বিভাগে পাটনায় উসু খেলেছি।দিনহাটা, কুচবিহার, শিলিগুড়িতে জুডো ক্যাম্প করেছি। নিনজা শিখেছি। ২০১৫ সালে নিনজা স্পোর্টস ন্যাশনাল একাডেমির একটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে ৫২ কেজির ক্যাটাগরিতে ফাইটের ওপরে গোল্ড মেডেল পাই।২০১৬ সালে এন, জে, পি তে ক্যাম্প হয়েছিল সেখানে মুম্বাই এর কুডো মাষ্টার নেহুল বরার কাছে ও সহদেব বর্মনের কাছে কুডোর কিছু কায়দা শেখার সুযোগ পাই। ২০১৭ তে বানারহাটে অনুষ্ঠিত বক্সিং এ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। কোচবিহারে ডিস্ট্রিক্ট জুডোতে ৫৬ কেজি ক্যাটাগরিতে আমি গোল্ড মেডেল পেয়েছি। এর পর ২০১৮ তে আসানসোলে কংফু ন্যাশনাল খেলে গোল্ড মেডেল পেয়েছি। এখানে মণিপুর , দিল্লী, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ছত্তিশগড় থেকে অংশগ্রহনকারীরা এসেছিল। আর্থিক অসুবিধার কারণে আমি অনেক টুর্ণামেন্ট খেলতে পারিনি। জলপাইগুড়িতে শিখতে যেতাম সপ্তাহে একদিন। টুর্ণামেন্টে অংশগ্রহণের আগে সারা সপ্তাহ প্র্যকটিসের জন্য স্যাররা যেভাবে বলে দিতেন সেইভাবে গাছের সাথে সাইকেলের টিউব বেঁধে নানান কায়দায় প্র্যাকটিস করতাম। নিজের খরচ তোলার জন্য স্টীলের আলমারির কারখানায় কাজ করেছি। কোচ হওয়ার ট্রেনিং করি। পরীক্ষা দিয়ে ক্যারাটে ব্ল্যাকবেল্ট হয়েছি। জলপাইগুড়িতে জাজ হওয়ার কোচিংও করেছি। কয়েকটি স্কুল, ক্লাবে আমি শেখাই। বেঙ্গল কংফু অ্যাসোসিয়েশন এর দার্জিলিং ডিস্ট্রিক্টএর এখন আমি সেক্রেটারী। শুকনার ‘ গডউইন মডেল হাই স্কুল ‘এ ,জলপাইগুড়ির উড সিলিন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে , বিহারের ঠাকুর গঞ্জের কাছে পিপরী থানে তারাচাঁদ ধানুকা আ্যকাডেমী হাইস্কুলে আমি নিয়মিত ক্লাস নিই। শিলিগুড়ির হায়দর পাড়ার নিউ পালপাড়ায় সেলিসিয়া ক্লাবে সেলফ ডিফেন্স, ক্যারাটে, কংফু,মিক্স মার্শাল আর্ট ট্রেনিং করাই।

নর্থবেঙ্গলের মার্শাল আর্টের চার্জে যেহেতু আমি আছি আমার ইচ্ছে শিলিগুড়িতে একটা আ্যকাডেমী করব। আমি নিজে ভুক্তভোগী বলে গরীবদের বিনেপয়সায় শেখাই। উচ্চপদাধিকারী বা যে কোন পদাধিকারী মানুষকেও পারসোনাল ট্রেনিং দিয়ে থাকি। আমার মাষ্টার বলেন “ মার্শাল আর্ট হল জীবনের নদীর গতিবেগ ধারা । এর জন্য রাস্তা হল রাইট টাইম, রাইট প্লেস, রাইট ডিসিশন হওয়া চাই।” সাধারণ মানুষ ও ছোটদের শিক্ষার জন্য একটা নিজস্ব আ্যকাদেমী তৈরীর ইচ্ছেয় অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে শেষে নিজের বাড়িতেই (সূর্যসেন পার্কের পাশেই )শেখানোর ব্যবস্হা করেছি। আমার স্টীল ফার্নিচারের কাজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কিছু ইকুইপমেন্টস আমি নিজে বানাই। যাতে মানুষ সহজে ব্যবহার করার সুযোগ পায়। যেমন পাঞ্চিং প্যাড, উডেন জাঙ্গি, স্ট্যন্ডিং কিক, স্প্রিং এর মাধ্যমে পাঞ্চিং ব্যাগ, তরোয়াল,ছোটদের জন্য পাইপ আর রসি দিয়ে নানচাকু,তোংফা,সাই ,উডেন ডামি, স্ট্যন্ডিং ফোকাস প্যাড এটা স্প্রিং রডের সাহায্যে মুভমেন্ট করানো যায়, স্প্রিং ফোকাস পাঞ্চিং ব্যাগ ইত্যাদি । আমার কাছে যারা শেখে তাদের মধ্যে কয়েকজনের নাম করছি সৌগত চক্রবর্তী বেস্ট ফাইটার, স্টেট গোল্ড মেডেলিস্ট , মন্টি রায় ন্যাশনালে সিলভার ও ডিস্ট্রিক্টে সিলভার, মাট্টি( বিশাল) বর্মন ন্যাশনালে গোল্ড মেডেল, ৮ বছরের ন্যাশনালে গোল্ড মেডেল অরূপ পাল ও কিং জং, ১২ বছরের কিরণ শর্মা ন্যাশনালে গোল্ড মেডেল।

আমার মনে হয় খেলা ধূলা প্রত্যেক মানুষের করা উচিত। বিশেষ ভাবে মার্শাল আর্ট গ্রহণ করে মানুষ শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্হ থাকে। এতে দেহের সব মাশল গুলো সঠিক ভাবে আমাদের হাড়ের যে কাঠামো তাকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়। জয়েন্ট গুলো খুব ভাল তৈরী হয়।ফলে দেহ মজবুত থাকে। যুব সমাজ সুস্হ ও কর্মঠ হলে দেশ, জাতির উন্নতি সম্ভব। জীবনের অনেক দূর এখনও যেতে হবে। সকলের শুভেচ্ছাই আমার পাথেয়।( সৌজন্যে ঃ কবিতা বনিক)