
শিল্পী পালিতঃ ডুয়ার্সের ডায়েরিতে রোমাঞ্চকর ভ্রমনের অন্য এক অভিজ্ঞতা পড়ুন উত্তর ২৪ পরগণার শিবানী বিশ্বাসের কলমে–

ডুয়ার্স ঘোরার দ্বিতীয় দিনে ৩১ শে অক্টোবর গিয়েছিলাম মূর্তি গভর্ণমেন্ট টুরিস্ট রিসর্ট।দারুণ সুন্দর কটেজগুলো।থার্মাল চেকআপ , স্যানিটাইজের পর্ব মিটলে দুপুরের খাবার খেয়ে ফোনে কথা বলে নেওয়া হল জঙ্গল সাফারি গরুমারা ও নেওড়াভ্যালি রিজার্ভ ফরেস্টে।আড়াইটে নাগাদ জিপসিতে রওনা হলাম জঙ্গলের দিকে।গরুমারা রিজার্ভ ফরেস্টের অফিস থেকে অনুমতিপত্র নিয়ে জিপসি ঢুকে পড়ল চেকপোস্ট পেরিয়ে চা-বাগানকে বাঁয়ে রেখে জঙ্গলের গভীরে।কখনও হালকা , কখনও ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে আমাদের তিনটি জিপসি এগিয়ে চলেছে এবড়োখেবড়ো , উঁচুনিচু পথে।আমরা দাঁড়িয়ে পড়লাম জিপসিতে।শক্ত করে রড ধরে তাকিয়ে দেখছি দু’পাশ। জঙ্গলের একটি নিজস্ব সৌন্দর্য আছে। শাল, সেগুন, শিমূল, পলাশ, বহেড়া, পিপল প্রভৃতি গাছ আর
তারমাঝে ছোটছোট গাছের ঝোপ। বাঁশগাছ, বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস এবং নল খাগড়া ইত্যাদিও চোখে পড়ল , এছাড়া আছে অর্কিড ৷ তার মোহময় রূপ দেখতে দেখতেই চোখে পড়ল একটি ময়ূর আপন মনে ঘুরে বেড়াচ্ছে।কানে আসছে হরেকরকম পাখির ডাক ও ঝিঁঝিপোকার আওয়াজ। বিশাল উঁচু উঁচু গাছের সারির মাঝে দেখতে পেলাম হর্ণবিল। জলাজমিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে ধবধবে সাদা বকের সারি।ময়ূরের কর্কশ ডাকে চমকে উঠেই দেখতে পেলাম দুটো বার্কিং ডিয়ার ছুটে জঙ্গলে ঢুকে যাওয়া।ময়ূর ময়ূরী ঘুরে বেড়াচ্ছে আপন মনে।আমাদের জিপও থেমে থেমে এগিয়ে চলেছে। একটা বাঁক ঘুরতেই হঠাৎই গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল একটি দাঁতাল হাতি।আমাদের সামনে থাকা দুটো জিপ থমকে গেল।পেছনে আমরাসহ আরও দুটি জিপ।দূরত্ব মাত্র কুড়ি ফুট।কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে হাতিটি আমাদের পর্যবেক্ষণ করতে লাগল।তারপরই
রীতিমতো শূঁড় দিয়ে ধুলো উড়িয়ে রাগ প্রকাশ করতে করতে এগিয়ে এল আমাদের দিকে।আমাদের জিপগুলো পিছু হটতে শুরু করেছে ততক্ষণে।যত পিছনে সরতে থাকি হাতি এগিয়ে আসতে থাকে আরও।সামনের জিপসির আরোহীরা কেঁদেই ফেলে। আমাদের অবস্থাও তাই।গাইডরা আমাদের চুপ করে থাকতে বলে। অথচ তারাও যে ভয় পেয়েছে সেটা বেশ বুঝতে পারি।প্রায় দু’শো মিটার তাড়া করে আসার পর গজরাজ পাশের জঙ্গলে ঢুকে পড়ল।আমরা
তবুও চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি , যদি আবার বেরিয়ে আসে! ঠিক তাই … আবার মুখ ঘুরিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে আমাদের দিকে।রীতিমতো কেঁদেই ফেলে অনেকে।একা দাঁতাল হাতি নাকি ভয়ঙ্কর ! ততক্ষণে জিপের মুখ ঘুরিয়ে নেয় জিপচালক।তারপর কিছু একটা ভেবে হাতি ঢুকে পড়ে জঙ্গলে।রুদ্ধশ্বাসে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি।শুধু পাখির ডাক , আর বন্যপ্রাণী শুকনো পাতার উপর দিয়ে চলে যাওয়ার শব্দ ।আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর জিপ অন্য রাস্তায় ঘুরিয়ে রওনা হই নেওড়াভ্যালি রিজার্ভ ফরেস্টের দিকে।
শিবানী বিশ্বাস
উত্তর ২৪ পরগনা