
বাপি ঘোষ ঃ সদ্য প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবন নিয়ে লেখালেখি করে চলেছেন কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানার পেটলা গ্রামের যুবক পার্থসারথি রায়।২০১৭ সালে পার্থসারথি কলকাতার গল্ফ গ্রীনে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে তাঁর ওপর লেখালেখি ও বই প্রকাশের আগ্রহ প্রকাশ করলে সৌমিত্রবাবু তথাস্তু বলে সন্মতি জানিয়েছিলেন। তিনি আরও জানিয়েছিলেন, ” আমার কয়েকটি কাব্য গ্রন্থে আমি নিজেকে মেলে ধরেছি “।এরপর সৌমিত্রবাবুর পরামর্শ মেনেই পার্থসারথি কলকাতার কলেজ স্ট্রীট থেকে সৌমিত্রবাবুর লেখা মধ্য রাতের সংকেত, ক্যালাইডো স্কোপ এবং স্বেচ্ছাবন্দী আশার কুহকে সংগ্রহ করেন। এর সঙ্গে সংগ্রহ করেন কবিতা সমগ্র দ্বিতীয় সংস্করন। সেই সব সংগ্রহ করে পার্থসারথি তার লেখালেখি শুরু করেন। এখনও সেই কাজ শেষ হয়নি। পার্থর ইচ্ছে ছিল, লেখালেখি শেষ হলে পান্ডুলিপি নিয়ে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কলকাতায় দেখা করবেন। তারপর বই ছাপতে দিয়ে তাঁর হাত দিয়েই প্রকাশ করবেন। কিন্তু সেটা আর হল না। চলে গেলেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা। পার্থসারথি বলেন, এখন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে উৎসর্গ করেই তাঁর বইটি প্রকাশের ইচ্ছে রয়েছে । তবে বইটি প্রকাশের আগে প্রয়াত এই অভিনেতার পরিবারের সঙ্গেও দেখা করার ইচ্ছে রয়েছে তাঁর।

কিন্তু বিশিষ্ট অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কিভাবে যোগাযোগ হল পার্থর, এর পিছনে রয়েছে বাংলাদেশের প্রয়াত আন্তর্জাতিক সাহিত্যিক আনিসুজ্জামানের ইচ্ছে। ২০১৭ সালে ঢাকাতে পার্থর লেখা, “ঠিকানা — আনিসুজ্জামান জীবন ও সাহিত্য ” প্রকাশিত হয়। সেই বইয়ের মুখবন্ধও লিখে দিয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।আর সেই মুখবন্ধ লেখার জন্য কলকাতায় গিয়ে পার্থ দেখা করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এর সঙ্গে। আনিসুজ্জামানের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে প্রকাশিত সেই বই বিভিন্ন মহলে সাড়া ফেলে। সেই বই প্রকাশের পর প্রয়াত সাহিত্যিক আনিসুজ্জামানের ইচ্ছেতেই পার্থ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে লেখালেখি বা বই প্রকাশের কাজে নামেন। ২০১৫ সালের ১৮ মে প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় পার্থর সাহিত্য প্রেম বা লেখালেখির কাজ দেখে লিখিতভাবে শংসাপত্রও তুলে দেন পার্থর হাতে। তাতে সৌমিত্রবাবু লেখেন, “পার্থসারথি রায়ের সঙ্গে পরিচয় হয়ে খুবই আনন্দ পেলাম। যে নিষ্ঠার সঙ্গে সে সাহিত্যব্রতী হয়েছে তা আজকাল বিরল। তার সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করছি এবং তার কাজ বাঙালির আনুকূল্য লাভ করুক এই কামনা করি।”
কোচবিহারের প্রত্যন্ত সীমান্ত গ্রাম পেটলা থেকে অত্যন্ত সংগ্রামের মধ্যেই কিন্তু পার্থসারথি রায় তাঁর লেখালেখি বা সাহিত্য চর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন তাঁর বয়স ৪২ বছর। ঠিকানা — আনিসুজ্জামান জীবন ও সাহিত্য প্রকাশের আগে ২০১৫ সালে পার্থসারথির বই বাহাদুর শৈলেন প্রকাশিত হয়। টিঁকি দিয়ে নানান কর্মকান্ড চালিয়ে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম তুলেছিলেন শিলিগুড়ির প্রয়াত পুলিশ হোম গার্ড শৈলেন রায়। সেই শৈলেনের ওপর প্রথম বই প্রকাশ করেন পার্থ।আর সেই বইয়ের মুখবন্ধ লিখে দিয়েছিলেন প্রয়াত প্রখ্যাত লেখিকা মহাশ্বেতা দেবী। মহাশ্বেতা দেবী তাঁর জীবনের অসম্পূর্ণ কিছু লেখা বা কাজের দায়িত্বও দিয়ে গিয়েছেন পার্থকে। পার্থ এখনও সেই দায়িত্ব পালনের অঙ্গ হিসাবে উত্তরবঙ্গের চা বাগানের আদিবাসীদের ওপর কাজ করছেন। সেটিও বই আকারে বের করতে চান এই তরুন লেখক।
ছোট থেকেই লেখালেখিতে ঝোঁক পার্থর। দারিদ্র্যতার সঙ্গে লড়াই চালালেও পার্থ লেখালেখি ছাড়েননি। ছাত্রাবস্থা থেকে প্রয়াত লেখিকা মহাশ্বেতা দেবীর লেখা পড়ে তিনি আরও উদ্বুদ্ধ হন। কলকাতার নারকেলডাঙাতে মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে পরপর তিন বার গিয়েও তাঁর কাছে যেতে পারেননি। বারবার ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে এসেছেন। শেষে অবশ্য দেখা পান। মহাশ্বেতা দেবীও তাঁর লেখা বিভিন্ন ছোট গল্প পড়ে তাঁকে উৎসাহিত করেন। মহাশ্বেতা দেবীকে তিনি বড়মা বলে ডাকতেন। মহাশ্বেতা দেবীও তাঁর কপালে একবার স্নেহের চুম্বন দেন তাঁর সাহিত্য প্রেম দেখে। ভবিষ্যতে আরও লেখালেখি চালিয়ে যেতে চান পার্থ।