সবসময়ই সঙ্গীতের নেশায় মগ্ন চিত্রাঙ্গদা

শিল্পী পালিতঃ চিত্রাঙ্গদা সেনগুপ্ত আজ আত্মকথা বিভাগে লিখেছেন কলকাতা থেকে —

আমার সঙ্গীত জীবনের কিছু কথা…..
আমি শ্রীমতী চিত্রাঙ্গদা সেনগুপ্ত। ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের সাধনা করে চলেছি এখনও অবধি। মঙ্গলময় ঈশ্বরের কাছে একটাই প্রার্থনা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যেনো গান গেয়ে যেতে পারি ।
আমাদের একান্নবর্তী পরিবার ছিল সঙ্গীতমুখর। সাঙ্গীতিক পরিবেশেই বিশেষতঃ রবীন্দ্রনাথের গান গেয়েই বড় হয়েছি । আমার দাদু , জ্যাঠা ,বাবা ,কাকা , পিসিরা সবাই গান গাইতেন । আমার মনিদাদু অর্থাৎ আমার বাবার কাকা শ্রদ্ধেয় স্বর্গীয় শৈলেন রায় ছিলেন ৩০/৪০/৫০/৬০ এর দশকের প্রখ্যাত কবি ও গীতিকার। ১৯৬৩ খ্রীষ্টাব্দে তিনি পরলোকগমন করেন । প্রসঙ্গত জানাই আমার নামটি তাঁর ই দেওয়া। বড়দের কাছে শুনেছি মনিদাদুর লেখা অনেক গান ,কীর্তন নাকি আমাকে দিয়ে গাওয়ানো হতো আমার প্রথম শৈশবে।  রবীন্দ্র সংগীতের হাতেখড়ি আমার বাবার কাছে । সেই অৰ্থে বাবাই আমার সঙ্গীত জীবনের প্রথম শিক্ষাগুরু । আমার সঙ্গীত শিক্ষার পিছনে সবচেয়ে বড়ো  অবদান আমার বাবার । বাবার অনুপ্রেরণা  ছাড়া সাঙ্গীতিক জীবনের  ঘরোয়া মঞ্চ থেকে  বাইরের মঞ্চে পা রাখা  আমার পক্ষে  সম্ভব হতো না । বাবার কাছে আমি অনেক গান শিখেছি ।
আমার যখন ১৪ বছর বয়েস তখন প্রথাগতভাবে আমি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নিতে শুরু করি এলাহাবাদ ঘরানার  প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী স্বর্গীয় জীবন উপাধ্যায় মহাশয়ের কাছে। সঙ্গীত প্রভাকর উপাধি পাওয়ার পরে শ্রদ্ধেয় স্বর্গীয় শৈলেন দাস মহাশয় ছিলেন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রবীন্দ্রসংগীতের আমার প্রথম শিক্ষাগুরু । মাষ্টারমশাই এর কাছেই আমি শিখেছি কিভাবে রবি ঠাকুরের গান গাইতে হয় , তার উচ্চারণ , গায়কি সবটাই ।
মাষ্টারমশাই গত হওয়ার পরে বেশ কিছুদিন নিজেকে  সরিয়ে রেখেছিলাম গানের জগৎ থেকে । কিন্তু সঙ্গীত ছেড়ে বেশিদিন থাকা আমার পক্ষে সম্ভব  হয় নি । আমি আবার রবীন্দ্রনাথের গানে ফিরে এসেছিলাম । বুঝেছিলাম কবিগুরুর গান ছাড়া আমার জীবন নিরর্থক । শুরু করলাম আবার । সঙ্গীত শিক্ষক হিসেবে এইবারে পেলাম কবিগুরুর স্নেহধন্য স্বর্গীয়  শৈলজা রঞ্জন মজুমদারের প্রিয় শিষ্য  শ্রী আশিস ভট্টাচার্য মহাশয়কে । বর্তমানে তিনিই আমার শিক্ষাগুরু । প্রতিদিন , প্রতিনিয়ত তাঁর কণ্ঠে রবীন্দ্র সংগীত আমাকে নতুন দিশা দেখাচ্ছে ।  নির্ভুল ভাবে  , রবীন্দ্র স্বরলিপিকে শ্রদ্ধার সাথে অনুসরণ করে রবীন্দ্র সংগীতকে সঠিক ভাবে আত্মস্থ করতে , নির্ভুল ভাবে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইতে ও রবীন্দ্র – দর্শনকে  বোঝাতে  তাঁর আন্তরিক নিরলস  প্রচেষ্টা  আজকের দিনে বিরল ।আমার পরিবারের সহযোগিতা না থাকলে হয়তো আমার পক্ষে গান  গাওয়া সম্ভব হতো না । আমার স্বামী , পুত্র ও পুত্রবধূর  আন্তরিক সহযোগিতা আমাকে  সঙ্গীতময়  রাখতে যথেষ্ট সাহায্য করছে । রবীন্দ্রনাথের গান তাই গাই আজও।এতগুলো বছর ধরে আমার মাষ্টারমশাই দের মতো বরেণ্য মানুষগুলোকে শিক্ষাগুরু  রূপে  পেয়ে আমি ধন্য , ঈশ্বরের কাছে আমি কৃতজ্ঞ । মাস্টার মশাইদের আশীর্বাদকে পাথেয় করে এগিয়ে চলেছি , আমার অন্তরের বিনম্র শ্রদ্ধা ও প্রণাম সহ আমার সুদীর্ঘ সঙ্গীত জীবন কে তাঁদের চরণে  নিবেদন করলাম।

চিত্রাঙ্গদা সেনগুপ্ত
পি-৭ , মিলন পার্ক
কলকাতা – ৭০০০৮৪