শ্রুতিমধুর ভাষা বাংলা

বাবলী রায় দেবঃমাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধসম।দেশকালস্থানভেদে সদ‍্যজাত কোনো শিশুরই নিজস্ব কোনো ভাষা থাকে না।মায়ের কোলে বেড়ে ওঠার সময় মায়ের মুখে শোনা ভাষা শিখেই সে বড়ো হয়,কালক্রমে সেটি তার ভাষা হয়ে দাঁড়ায় যেটি তার জীবনপথে চলার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত,সামাজিক সাংস্কৃতিক পরিচিতির সাক্ষর বহনের সাথে সাথে তার কাজে ও কথায় ধ‍্যানধারণার প্রতিফলন ঘটে,সেই সঙ্গে ঘটে ভাষার বিস্তৃতি।

ইনস্টিটিউট অব লিঙ্গুইস্টিকসের গবেষণা তথ‍্য বলছে, বিশ্বজুড়ে ভাষার সংখ্যা ৬৯০৯ তার মধ্যে ভারতের মতো বহুভাষিক দেশে স্বীকৃত ভাষার সংখ্যা ১,৬৫২।১৯৯১ সালে আদমশুমারিতে উপভাষাগুলিকে গণনায় ধরে ১৫৭৬টি মাতৃভাষার কথা উল্লেখ করা হয়েছে যার ৪১শতাংশ লোক হিন্দীভাষী এবং তারপরেই আসে ‘বাংলাভাষা’ প্রায় ৮.১ শতাংশ লোক বাংলাভাষী।ভারতের ন্যাশনাল অ্যানথেম বা জাতীয় সংগীত বা জাতীয় স্তোত্র বা স্তবক তথা রাষ্ট্রগীত হলো ‘জনগনমন’ অন‍্যদিকে ‘ন্যাশানাল সং’ বা ‘রাষ্ট্রগান’ হলো ‘বন্দেমাতরম’। দুটো গানের জনকই প্রবাদপ্রতীম দুই বাঙ্গালী।

বেদ-উপনিষদের দেশ ভারতের প্রাচীন আর্যভাষা বা সংস্কৃত ছিলো ‘দৈবভাষা’ যেটি আজ মৃতপ্রায়।ভাষাবিদদের মতে,আর্যরা দুটি দলে ভারতে এসেছিলেন।দ্বিতীয় দলের আক্রমণে প্রথম দলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে,তাদের ভাষাকে বহিরঙ্গ ভাষা বলে।ভারতবর্ষের কেন্দ্রে বসবাসকারীদের ভাষাকে অন্তরঙ্গ ভাষা বলে যার অন্তর্গত হল, পঞ্জাবি, হিন্দি। অন‍্যদিকে বহিরঙ্গ ভাষার মধ্যে পড়ে কাশ্মীরি, বাংলা, ওড়িয়া ইত্যাদি।

বিশ্বের কোথায় ঔপনিবেশিক শাষন ব‍্যাবস্থা কায়েম না করেও বাংলাভাষা পৃথিবীর শ্রুতিমধুর ভাষার মর্যাদা পেয়েছে।বিশ্বের সর্বাধিক প্রচলিত এগারোটি ভাষার অষ্টম স্থানে রয়েছে বাংলাভাষা।পশ্চিমবঙ্গ,বাংলাদেশ ছাড়াও পশ্চিম আফ্রিকার সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় সরকারি ভাষা বাংলা।অথচ ঔপনিবেশিক মানসিকতার তান্ডবে বাঙ্গালী ভুলতে বসেছে বাংলাভাষার ঐতিহ্যের কথা।

দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতভাগের পর পূর্বপাকিস্তান তথা অধুনা বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুর পরিবর্তে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনে শহীদদের সম্মান জানিয়ে ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালে ১৭ই নভেম্বর  ‘২১শে ফেব্রুয়ারি’কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা শহীদ দিবসের স্বীকৃতি দিয়েছে।বিশ্বায়নের কোপে প্রতিনিয়ত ভাষা এবং ভাষায় ব‍‍্যবহৃত শব্দের পরিবর্তন হচ্ছে।ফলে ভাষা স্বাতন্ত্র্যতা হারিয়ে অন্য ভাষার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।বাংলাভাষাও ছাড় পাচ্ছে না।
ইংরেজির চাপে পড়ে বাংলাসাহিত্য তথা ভাষা প্রচার এবং প্রসারে বড়ো রকম খামতি থেকে যাচ্ছে।সমীক্ষা বলছে,প্রতি ১৫ দিনের একটি করে ভাষা পৃথিবীর বুক থেকে বিলুপ্ত হচ্ছে।এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে স্বাভাবিকভাবেই বাংলাভাষা নিয়ে সংশয় জাগে কারণ আজ পর্যন্ত বাংলাভাষা ধ্রুপদী ভাষার সম্মান অর্জন করতে পারেনি।
বিশ্বায়নের যুগে বিদেশীভাষায় শিক্ষিত প্রজন্মের উদ্দেশ্যে রামনিধি গুপ্ত মহাশয়ের বাণী ভীষণই প্রাসঙ্গিক..’নানান দেশের নানা ভাষা, বিনে স্বদেশী ভাষা, পুরে কি আশা?’

৩৮ তম উত্তরবঙ্গ বইমেলার উদ্বোধনের দিন (২৭/২/২১) (শিলিগুড়ি,কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম) উন্মোচিত হতে চলছে উত্তরবঙ্গের মেয়ে বাবলী রায় দেবের দ্বিতীয় গ্রন্থ “প্রজ্জ্বালিকা” বিশিষ্টজনদের হাত ধরে।লেখিকার প্রথম উপন্যাস “অ্যানি, ফিরে যাও” যা গতবছর কলকাতা বইমেলায় উন্মোচিত হয়েছিল তা পাঠক মনে জায়গা করে নিয়েছে একটি ব্যতিক্রমী উপস্থাপনার জন্য।সাপকে কেন্দ্র করে বইটির মুখবন্ধ লিখেছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক শ্রীঅমর মিত্র মহাশয়।আশাকরি, ‘প্রজ্জ্বালিকা ‘ বইটিও পাঠক মনে জায়গা করে নেবে।উল্লেখ্য,শ্রীমতী বাবলী রায় দেব আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা সংস্কৃতি সমিতি শিলিগুড়ি শাখার আজীবন সদস্যা।সমিতির তরফে বাবলী রায় দেবকে অভিনন্দন জানাই, সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মেতে থাকুক লেখিকা।
ধন্যবাদ সহ সজল কুমার গুহ সম্পাদক আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা সংস্কৃতি সমিতি শিলিগুড়ি শাখা।