
বাপি ঘোষ, শিলিগুড়ি ঃ কুড়ি বছর আগে তাঁর দেড় বছরের শিশু পুত্র স্বর্নিল ভৌমিক ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়ত।লিভারজনিত সমস্যার কারনে ওই বয়সেই ছোট্ট ওই শিশুকে ঘন ঘন অপারেশন করতে হোত।কিন্তু কিভাবে এত অপারেশন, ওষুধ থেকে শিশুটিকে বাঁচানো যায়, ভাবতে শুরু করেন শিশুর মা অপু ভৌমিক। সেই সময়েই তিনি সন্ধান পান কলকাতার খড়গপুরে শিবানন্দ সরস্বতীর কেন্দ্রে যোগাসন শেখানো হয়।আর যোগাসন অনুশীলনের মাধ্যমে অনেকেই কঠিন ব্যাধি থেকে মুক্তি পেয়েছেন। খবর পাওয়া মাত্রই অপুদেবী খড়গপুরের সেই কেন্দ্রে গিয়ে শিশু পুত্রকে যোগাসন শেখানো শুরু করেন।আর তাতে দেখেন, যোগাসনের মাধ্যমে তাঁর শিশু আগের অসুস্থতার উপসর্গগুলো কাটিয়ে উঠছেন। এরপর অপুদেবী নিজেও বেশ কিছু দিন কলকাতায় যোগাসনের তালিম নেন।আর সেই যোগাসন চর্চায় তিনি এতটাই গভীরভাবে মনোনিবেশ করতে থাকেন যে আজ উত্তরবঙ্গে যোগাসন চর্চায় একজন তিনি একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন। পুলিশ কর্মী থেকে স্কুল শিক্ষক, স্বাস্থ্য কর্মী সহ বহু স্কুলের ছেলেমেয়ে আজ তাঁর কাছে যোগাসন শিখছেন।এমনকি এই করোনা আবহে অনলাইনেই সকলের মধ্যে যোগাসনের প্রচার চালিয়ে অন্যরকম করোনা-যোদ্ধা হয়ে উঠেছেন তিনি। তাঁর কথায়, আমার কাছে করোনা শুরু হওয়ার আগে থেকে দেড়শ জন নিয়মিত যোগাসন শিখে আসছিলেন। তাঁরা নিয়মিত আসন করছিলেন। চারদিকে করোনার ব্যাপক ঝড় চললেও ওই দেড়শ জনের মধ্যে মাত্র তিনজনের করোনা হয়েছে। আর যে তিনজনের করোনা হয়েছিল তাদের কারোরই অক্সিজেন নিতে হয়নি।তিন চারদিন বাদেই করোনা থেকে তাঁরা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। করোনা শুরু হওয়ার সাত দিনের মাথায় তাঁরা আবার যোগাসন শুরু করেন।অপুদেবী এখন সকলকে বলছেন, করোনার বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে হলে সকলকে অবশ্যই টিকা গ্রহন করতে হবে। মেনে চলতে হবে করোনা সতর্কতার সব নিয়ম।কিন্তু যোগাসন অনুশীলন কিন্তু করোনার বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে বিরাট ওষুধের মতো কাজ করে।
পুরো নাম অপুরানী ভৌমিক। অনেকেই তাঁকে অপুরানী উকিল বলেই জানেন।বাড়ি শিলিগুড়ি দেশবন্ধু পাড়ায়।বয়স ৪৮। কপালভাতি থেকে ভুজঙ্গাসন, গোমুখাসন, ভস্তিকা,অনুলোম বিলোম,উজ্জয়ি,সিংহাসনা, পর্ন পজিশন সহ আরও বহু আসন এইসময় তাঁর কাছে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বড় চাবিকাঠি। তার সঙ্গে অবশ্যই ডায়েট মেনে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। তিনশোরও বেশি আসন অপুদেবী জানেন। আর তাঁর কথায়, এসবই সুস্থ থাকার চাবিকাঠি।
করোনা শুরু হওয়ার আগে তিনি পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে আসন শেখাতেন।ক্লাস নিতেন।এখন সেসব বন্ধ। কারন একসঙ্গে জমায়েত করা যাবে না।তাই এখন ভোর ছটা থেকে বিকেল পর্যন্ত দফায় দফায় তিনি অনলাইনে যোগাসনের ক্লাস নেন।বহু ডাক্তারও তাঁর কাছে যোগাসন শেখার জন্য রোগীদের পরামর্শ দিচ্ছেন। এমনকি আমেরিকা, কানাডা, বেঙ্গালুরু, বাংলাদেশ, কলকাতা থেকেও অনেকেই তাঁর কাছে অনলাইনে যোগাসনের তালিম নেন নিয়মিত। ফুসফুসের আসন,শ্বাস-প্রশ্বাসের আসন, চোখের আসন থেকে আরও অন্য অনেক আসন এখন অনেকের কাছে প্রানশক্তি। আর যোগাসনের এই চর্চা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন স্থানে সংবর্ধনাও পেয়েছেন তিনি।
অপুদেবীর নেশা নাটকের চর্চা। তিনি নিজে নাটক লেখেন, নাটকে অভিনয়ও করেন।এজন্য বাঙুর থেকে শিলিগুড়ি ফুলমেলা নাটক প্রতিযোগিতার ওপর তাঁর পুরস্কারও রয়েছে। চল্লিশটির মতো নাটক নিজে রচনা করে তাতে তিনি অভিনয় করেছেন। শিলিগুড়ি দীনবন্ধু মঞ্চে তাঁর অনেক নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। সামাজিক সচেতনতা এবং করোনার ওপরও তাঁর স্বরচিত দশটি নাটক রয়েছে। করোনা সচেতনতায় নাটক রচনা করে অভিনব পদ্ধতিতে অভিনয় করে তা তিনি অনলাইনে প্রচার করছেন যা এক নজিরও বটে। তিনি সঙ্গীত চর্চাও করেন, আবার যোগা-নৃত্যের ওপরও তিনি কাজ করছেন।কিন্তু এত কিছু করবার শক্তি কি করে করছেন, জানতে চাইলে অপুদেবী বলেন, ভোর থেকে যোগাসন মেডিটেশন নিয়ে থাকায় একটা বাড়তি অক্সিজেন বা প্রাণশক্তি পাই।সেসব প্রানশক্তি ভেতর থেকে অন্য কাজে উৎসাহ তৈরি করে। আর সবসময় এসব নানান কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি বলেই ভালো আছি।
