রাজস্থানে আন্তর্জাতিক ওয়াটার কালার ওয়ার্কশপে যাচ্ছেন মাটিগাড়ার ভাস্কর দে

শিল্পী পালিতঃ আত্মকথা বিভাগে বিভিন্ন মানুষ তাদের ইতিবাচক বিভিন্ন দিক মেলে ধরছেন। আজ মাটিগাড়ার চিত্র শিল্পী ভাস্কর দের কথা শুনুন ——

আমি ভাস্কর দে। 12. 02. 1975 এ আলিপুরদুয়ারে আমার জন্ম। আমার বাবা সেখানে সেরিকালচার বিভাগে সরকারী কাজ করতেন। সেই সূত্রেই সেখানে থাকা। মা গৃহবধূ ,দুই দিদি আর আমি। বাবা প্রমোশন পেয়ে শিলিগুড়ি,মাটিগাড়া সেরিকালচার অফিসে চলে আসেন। তখন আমি দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র। এই মাটিগাড়াতেই আমার বড় হওয়া, খেলাধূলো, পড়াশোনা ,কর্মজীবন। ছোটবেলা অতি দুরন্ত হওয়া সত্বেও আমি ছবি আঁকতে ভালবাসতাম। আমি পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকেই গল্পের বই , কমিকসের বই দেখে ছবি , কার্টুন আঁকতে ভালবাসতাম। মাসিদের স্নেহে ও জোরাজুরিতেই মা আমাকে একদিন নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে দিলেন শিলিগুড়িতে চিত্র মন্দির সুদীপ্ত রায়( তপুদা)র আর্ট স্কুলে। বাসে করে যেতে হত, তারপরে হেঁটেই পৌঁছতাম স্কুলে। বাবা হয়ে পড়লেন অসুস্হ। আমার আঁকার সরঞ্জাম, রং, তুলি ইত্যাদি কিনতে পারিনি। তবুও আমি খুব আনন্দ করেই রাস্তার ধারে, রেলওয়ে প্লাটফর্মে,বাসস্ট্যন্ডে বসে শুধু পেন্সিল দিয়েই মানুষের ও নানান ছবি আঁকতাম। অনেক খরচ বলে জল রং, প্যাস্টেল, ওয়েল কালার হাতে পেলাম অনেকদিন পর। আমার মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় বাবার অসুখ বেড়েই চলেছে। আঁকা শিখতে যাওয়া বন্ধ করেছিলাম। বাবা আমার পাশের সুখবর শুনে যেতে পারেন নি। সংসারের চাপ ,নিজের আঁকা শেখার আগ্রহ সব নিয়ে বাড়িতেই ছোটদের নিয়ে একটা আঁকা শেখার স্কুল তৈরী করলাম। ‘চিত্র কুটীর’ নামে মাটীগাড়া গভর্নমেন্ট কলোনীতে। ছোটদের খুব মন দিয়ে শেখানোর মধ্যেই আমার আনন্দ খুঁজে পেতাম। আজ আমার ছাত্রছাত্রীরাও অনেক ভাল জায়গা করে নিয়েছে আঁকার জগতে।
আর্ট কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় পাস করলেও পড়তে যাওয়া হয়নি। আমি উত্তরবঙ্গের ছেলে বলে আমাদের প্রতি পদক্ষেপেই সৌন্দর্য্যের আনন্দ।সেই আকর্ষনেই আমি বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য আঁকতে ভালবাসি। ছাত্রছাত্রীদেরও নিয়ে যাই মাঝে মাঝে।
1992 তে শিলিগুড়ি দীনবন্ধু মঞ্চে স্যার সুদীপ্ত রায়ের তত্বাবধানে আমার প্রথম এক্সজিবিসন হয়।এর পর 1995 এ নর্থবেঙ্গল আর্ট এণ্ড ক্রাফ্ট ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের তরফে আমার ছবিরও প্রদর্শনী হয়। সেখানে জলরঙে আমার আঁকা ‘ জগন্নাথ’ চিত্র টি খুব প্রশংসা পায়। গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের প্রফেসর প্রকাশ কর্মকার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে আমাকে উৎসাহিত করেন। অন্যান্য শিল্পীরাও খুব প্রশংসা করেছেন। অন্যান্য জায়গায় যেমন দিনহাটা, জলপাইগুড়ি , দার্জ্জিলিংয়েও আমি ছবি প্রদর্শনী করি। তারপর কয়েক বছর আমি শুধু নিজের মনে ছবিআঁকার মধ্যেই নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলাম। কয়েক বছর বাদে আমার স্যার সুদীপ্ত রায় আবার আমাকে নুতন উদ্যমে আঁকার জগতে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। উত্তরবঙ্গ উৎসবে কাজ করি। আমরাই শিলিগুড়িতে প্রথম রাস্তায় আলপনা দিই। খুব জনপ্রিয় হয়েছে এই আল্পনা। সকলেই দিকে দিকে এই কাজ করছে। পরিচ্ছন্ন সুন্দর শহর সকলেরই ভাল লাগে। অনেক ওয়ার্কসপ , এক্সিবিশন করেছি এখনও করছি। 2010 থেকে 2011 বাগডোগরা এয়ার ফোর্স স্কুলে কাজ করেছি। তারপরে পোষ্ট অফিসের কনট্রাক্ট কাজ করছিলাম কিন্তু কুড়ি ফুট বাই চার ফুটের একটা ওয়েল পেন্টিং আঁকার কাজ পেয়েছিলাম , সময়ের অভাবে , আঁকার নেশায় পোষ্টঅফিসের কাজটা ছেড়ে দিই। কলকাতা একাডেমী অফ ফাইন আর্টসে 2019 এ এক্সজিবিসন করি। 2018 তে মাটীগাড়া আর্ট এণ্ড ক্রাফ্ট গ্রুপ স্হাপন করি। প্রতি বছর 15thআগষ্টে সারাদিন ব্যাপী ওয়াটার কালার ওয়ার্কসপ কর্মশালা হয়। পরবর্তী কর্মসূচীর 2020 তে জানুয়ারী মাসে রাজস্হানের কোটাতে যাবো ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার কালার ওয়ার্কসপ আছে। সেখানে কাজ করব। ভাল সুযোগ পেলে অবশ্যই আরও বড় করে বিশ্বব্যাপী কাজ করার ইচ্ছে আছে।