যৌন কর্মীর ছেলেমেয়েদের শিক্ষার আলোয় আনতে শিলিগুড়িতে নজিরবিহীন কাজ এক দম্পতির

বাপি ঘোষ ঃ সমাজে এখনও এরকম বহু মানুষ আছেন যারা নিঃশব্দে মানুষের জন্য কাজ করে চলেছেন।যে যৌন কর্মীদের অনেকে অচ্ছুৎ বা ঘৃণার চোখে দেখেন, সেই যৌন কর্মী ও তাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা বা অন্য আলোয় নিয়ে গিয়ে নজিরবিহীন এবং এক মহতি কাজ করে চলেছেন শিলিগুড়ি শক্তিগড়ের এক দম্পতি।

ওই দম্পতির নাম কৌস্তুভ দত্ত এবং রোজলি দত্ত। নিঃশব্দে তারা তাদের কাজ করে চলেছেন। মহতি কাজ করে তারা ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচারও করছেন না। তবে শনিবার খবরের ঘন্টার প্রশ্নের জবাবে তারা জানিয়েছেন তাদের কাজের কথা।
কোচবিহারের দিনহাটা থেকে উত্তরদিনাজপুরের পাঞ্জিপাড়া পর্যন্ত মোট আটটি যৌন পল্লী রয়েছে। সেই সব যৌন পল্লীতে প্রায় চার হাজার যৌন কর্মী যৌন ব্যবসায় লিপ্ত রয়েছে।দার্জিলিং জেলায় রয়েছে একটি যৌন পল্লী। উত্তর দিনাজপুরে দুটি, জলপাইগুড়িতে একটি, কোচবিহার জেলায় তিনটি, আলিপুরদুয়ার জেলায় একটি। কেও অভাবের তাড়নায় যৌন ব্যবসায় নেমেছে, কেও পাচারের শিকার হয়ে ওই অন্ধকার পথে পা বাড়িয়েছে।কিছু সংখ্যক আবার সঙ্গ দোষে নিজের স্বভাবের কারনে এই পথে পা বাড়িয়ে আর আলোর রাস্তায় ফিরতে পারেনি।
এই যৌন ব্যবসা ঘিরে আবার রয়েছে বিরাট অপরাধ চক্রের কাজ কারবার। যৌন কর্মীদের যৌন কাজের জন্য অন্ধকার কুঠুরি ভাড়া দিয়ে আবার চলছে বাড়িওয়ালিদের রোজগার। দিনের পর দিন থেকে শরীর বিক্রি করার অন্ধকার একঘেয়েমি কাজ থেকে বেরিয়ে আসার ইচ্ছে থাকলেও বহু যৌন কর্মী তা পারে না। কে তাদের হাত ধরবে? সবাই যে তাদের ঘৃণা করে!এ সমাজ তাদেরকে কি ভালো ভাবে নেবে? সেই সব যৌন কর্মীদের মনে শরীর বিক্রির কষ্টকর কাজের মধ্যে ঘুরপাক খায়, কিভাবে তাদের ছেলেমেয়েরা সুস্থভাবে বড় হবে?তাদের পরবর্তী প্রজন্মগুলোও কি এভাবে তাদের সঙ্গে থেকে থেকেই এই কাজে দিনের পর দিন যুক্ত থেকে যাবে? অথচ তাদের ছেলেমেয়েদের মধ্যেও প্রতিভা রয়েছে। তাদের ছেলেমেয়েদের মধ্যেও নৃত্য, সঙ্গীত, চিত্রাঙ্কনের অসামান্য প্রতিভা রয়েছে। কিন্তু কে তাদের পাঁকের মধ্যে থেকে টেনে তুলবে?
অন্ধকার থেকে আলোর পথে এদেরকে নিয়ে যাওয়ার কাজ বেশ কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু শিলিগুড়ি শক্তিগড়ের কৌস্তুভ ও রোজলি সেই মহতি কাজে নেমেছেন। ২০০৮ সাল থেকে তারা উত্তরবঙ্গের নিষিদ্ধ পল্লীগুলোতে গিয়ে কাজ শুরু করেন। শিলিগুড়ি, আলিপুরদুয়ার মিলিয়ে তারা এখন পর্যন্ত ১৫ জন যৌন কর্মীর ১৩ জন ছেলেমেয়েকে যৌন পল্লীর পরিবেশ থেকে সরিয়ে হস্টেল সুবিধাযুক্ত ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করেছেন। এরমধ্যে 2 জন ছেলে, এগারো জন মেয়ে। এদের কেও ষষ্ঠ শ্রেনী, কেও দশম শ্রেনী, কেওবা নার্সারিতে পড়ছে। স্পনসরশিপ সংগ্রহ করে কৌস্তভবাবুরা এই মহতি কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তারা জানালেন, এমন ঘটনাও আছে যৌন কর্মী মাকে শিশু সহ উদ্ধার করে তারা সুস্থ সমাজে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আবার যৌন কাজ ছেড়ে কোনও মহিলা এখন স্রেফ ন্যাপকিন বিক্রির মাধ্যমে মূল স্রোতে ফিরেছেন। একইভাবে যেসব এইডস রোগীকে মানুষ ঘৃনার চোখে দেখেন তাদেরকেও তারা মূল স্রোতে ফেরানোর বিভিন্ন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া যৌন পল্লীগুলোতে তারা স্বাস্থ্য সচেতনতার নানা কর্মসূচি গ্রহন করছেন শিলিগুড়ি রাজবংশী রিপ মিনিস্ট্রি থেকে। ৫ তারিখে তারা ডুয়ার্সের লুকসান ক্যারন চা বাগানে মহিলাদের স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা করে ন্যাপকিন বিলি করেন। বিশ্ব এইডস দিবসকে সামনে রেখে ২ ডিসেম্বর তারা এনজেপির অম্বিকানগরে এইডস আক্রান্ত ও যৌন কর্মীদের নিয়ে এক নৈশভোজের আয়োজন করেছেন ওয়েস্টবেঙ্গল ভলান্টারি হেলথ এসোসিয়েশনের সহযোগিতায়।