নিজস্ব প্রতিবেদন, শিলিগুড়িঃ এবারের দুর্গা পুজোয় তার হাতে তৈরি দুর্গা প্রতিমা শিলিগুড়ি হায়দরপাড়া স্পোর্টিং ক্লাবকে বিশ্ব বাংলার জলপাইগুড়ি জেলার সেরা প্রতিমার স্বীকৃতি এনে দেয়। আবার তারই হাতে তৈরি প্রতিমা শিলিগুড়ি অরবিন্দপল্লীর অরবিন্দ যুবক সংঘকে দার্জিলিং জেলাতে সেরা বিশ্ব বাংলার প্রতিমা হিসাবে স্বীকৃতি এনে দেয়। এভাবে এবারের পুজোয় ওয়াই এম এ ক্লাব, স্বস্তিকা যুবক সংঘ, উইনার্স ক্লাবের প্রতিমায় পুরস্কার এনে দেওয়াটাও তার অবদান। কারন এসব প্রতিমা তারই হাতে তৈরি। শিলিগুড়ি সুভাষ পল্লীর তরুন মৃৎ শিল্পী সুশান্ত পাল এভাবে প্রতিমা তৈরি করেই বিভিন্ন মহলে সাড়া ফেলছেন।
নতুন প্রজন্ম যেভাবে কুমোরটুলির মাটির কাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সেদিক থেকে ব্যতিক্রম সুশান্ত। ছোট থেকেই তার নেশা প্রতিমা তৈরি করা। ৩৮ বছর বয়সে পৌঁছেও সে নেশা ছাড়তে পারেননি।বরঞ্চ তা আরও বেড়েছে। কলকাতার আর্ট কলেজ থেকে স্কাল্পচার নিয়ে পাশ করেছেন সুশান্ত। এবারের দুর্গা পুজোয় তিনি থিম নির্ভর দশটি দুর্গা প্রতিমা তৈরি করেন। আর সাবেকিয়ানার প্রতিমা তৈরি করেন ১৫ টি। কালি পুজোয় থিম নির্ভর প্রতিমা তৈরি করছেন ১০ টি। সাবেকিয়ানার কালি প্রতিমা তৈরি করছেন ৪০ টি। কালি পুজোয় থিম নির্ভর যেসব প্রতিমা তিনি তৈরি করছেন সেসব হল বাবুপাড়া বয়েজ ক্লাবে যামিনী রায়ের পটের আদলে, আমবাড়িতে কাঠের পুতুলের আদলে, কাঠ ও মেটাল মিশ্রনের আদলে নিউ টেনিস ক্লাবের প্রতিমা। দশ মাথার কালি সুশান্ত তৈরি করছেন ভিবজিওর স্পোর্টিং ক্লাবে। বিভিন্ন ক্লাবে তার হাতে তৈরি প্রতিমা পুরস্কার পেলেও সুশান্তর আক্ষেপ, তারা প্রতিমা শিল্পীরা কোনও স্বীকৃতি বা শংসাপত্র পান না। তবে নেশার টানেই একাজ করেন। একাজ না করলে মানসিকভাবে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন বলেই মনে করেন।
বর্তমানে নানান সমস্যা ভুলে গিয়ে কাজ করছেন মৃৎ শিল্পীরা। প্রথমত তাদের জায়গার অভাব। দ্বিতীয়ত,সামগ্রী ঠিকমতো পাওয়া যায় না। তৃতীয়ত,মাটি ঠিকমতো পাওয়া যায় না। পোড়ামাটি দিয়ে অনেক মাটির কাজ হয় । কিন্তু পোড়া মাটির কাজ রিসাইকেলিং হয় না। ফলে তাদের প্রতিমা তৈরির কাজে কিন্তু ধীরে ধীরে মাটি না পাওয়াটা বড় সমস্যার হয়ে উঠছে। চতুর্থত নতুন প্রজন্ম এই মাটির কাজে আর আগের মতো আগ্রহ না দেখানোতে শ্রমিক সমস্যাও তৈরি হচ্ছে। একাজের ভবিষ্যৎ কি তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে আসছে। এরমধ্যেই সুশান্তদের মতো ব্যতিক্রমী মৃৎ শিল্পীদের লড়াই চলছে। তবে মাটির প্রতিমা ছাড়াও ফাইবারের মূর্তিও তৈরি করছেন সুশান্ত। সৌরভ গাঙ্গুলির মূর্তি ছাড়াও প্রনবানন্দের মূর্তি, নেতাজির পূর্নাবয়ব মূর্তি, বিবেকানন্দের মূর্তি তৈরি করেছেন তিনি।