বস্তির শিশুদের স্কুলে আনতে শিলিগুড়িতে অন্যরকম প্রয়াস

নিজস্ব প্রতিবেদন, শিলিগুড়ি ঃ ওদের কেউ সংসারে অভাবের কারনে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক সংগ্রহ করতো।কেও আবার অন্য কাজে মগ্ন থাকতো। কারন, ঘরে অভাব। ঘরেতো শিক্ষার অভাব । তারপর ঘরে কেও সাফাই কর্মী,কেওবা রিকশা ভ্যান চালায়।ফলে ওই বস্তির ছেলেমেয়েদের অনেকেই স্কুলে যাওয়ার কথা ভাবতোই না। আর এইসব বস্তির পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের শিক্ষার আলোয় নিয়ে আসার জন্য শিলিগুড়িতে অন্যরকম লড়াইয়ে নেমেছে আই এন এ স্কুল।
পুরো নাম ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল অকাদেমি। ২০০১ সালে তার যাত্রা শুরু হলেও ২০০৮ সালে বাগরাকোট বাস স্ট্যান্ডের কাছে এর কাজের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। এখন সেখানে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ৬৫ জন। প্রথম শ্রেনী থেকে দ্বাদশ শ্রেনী পর্যন্ত সেখানে পড়াশোনা হয়। স্কুলের অধ্যক্ষ মৃত্যুঞ্জয় মজুমদার জানিয়েছেন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং স্বামী বিবেকানন্দের ভাব ও প্রতিকৃতি সামনে রেখে তারা স্কুল চালাচ্ছেন। বস্তির পিছিয়ে পড়াদের বুঝিয়েসুঝিয়ে স্কুলে আনছেন। এইসব ছেলেমেয়ের মধ্যে অনেক প্রতিভা রয়েছে। সুযোগ ও পরিবেশের অভাবে তারা অনেকে হারিয়ে যায়। আর এদের নিয়েই তাদের অন্যরকম লড়াই চলছে। এই স্কুল থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে এখন ইসলামপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়াশোনা করছে মনীষা হেলা। আর্থিক সঙ্কট থাকায় ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছে থাকলেও তা পড়তে পারছিলো না মনীষা।সে দেশের রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল। রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়। যদিও শেষমেষ ইন্জিনীয়ারিং নিয়েই পড়াশোনায় মেতেছে মনীষা। এ স্কুলেই এখন পড়ছে রুহি পারভিন। রুহি একসময় প্লাস্টিক কুড়াতো। কিন্তু সেসব অনেকদিন বন্ধ করে সে এখন মাধ্যমিকের প্রস্তুতিতে মেতেছে। প্লাস্টিক না কুড়িয়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য অন্যদের এখন পরামর্শ দিচ্ছে রুহি। আরতি মল্লিক, প্রেম হেলা, সুরিয়া হেলার মতো ছাত্রছাত্রীরাও এখন সংসারের অভাব ডিঙিয়ে নিয়মিত স্কুল করে জীবনে বড় হওয়ার লড়াইয়ে নেমেছে। অনেকে আবার পড়ার পাশাপাশি হাতের কাজও শিখছে। আর তাদের এই স্কুলে পড়তে পয়সাও লাগছে না। সৌজন্যে আই এন এ স্কুল। মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে অনু রায়দের মতো শিক্ষিকারাও সেখানে তাদের অবদান রাখছেন দিনরাত পরিশ্রমের মাধ্যমে।