বেলাকোবার চমচম সহ অন্য মিস্টি নিয়ে শিলিগুড়িতে কষ্টের মিস্টি ফেরি

নিজস্ব প্রতিবেদন, শিলিগুড়িঃ একহাতে ১৫ কেজি ওজনের মিষ্টির বালতি, আর এক হাতে ১৫ কেজি ওজনের মিস্টির বালতি। সব মিলিয়ে ৩০ কেজি ওজনের মিষ্টি নিয়ে শিলিগুড়ি শহরে প্রতিদিন ২০ কিলোমিটার হেঁটে বেড়ান তিনি। মুখে তার রসগোল্লা, চমচম বলে চিৎকার থাকে। এভাবেই ২৫ বছর ধরে শিলিগুড়ি শহরে অন্যরকম মিষ্টির ফেরিওয়ালা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে পড়েছেন ৫৬ বছর বয়স্ক নিরঞ্জন ঘোষ। সবাই তাকে কাকা বলেই চেনেন।
চমচম এর জন্য বিখ্যাত জলপাইগুড়ির বেলাকোবা। সেই ৩৮ কিলোমিটার দূরের বেলাকোবা থেকেই চমচম সহ অন্যান্য মিষ্টি নিয়ে প্রতিদিন শিলিগুড়ি শহরে ফেরি করতে আসেন নিরঞ্জনবাবু। সকাল আটটার মধ্যে দুবালতি মিস্টি নিয়ে তার বেলাকোবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়া, তারপর বাসে চেপে শিলিগুড়ি শহরে চলে আসা। এয়ারভিউ মোড়ে বাস থেকে নেমে তার শুরু হয় পথ চলা। মহানন্দ পাড়া,টিউমল পাড়া, তারপর হাকিম পাড়া, আশ্রমপাড়া, পূর্ব বিবেকানন্দ পল্লী সহ শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করা। বিকেল চারটে পর্যন্ত শিলিগুড়ি শহরে মিষ্টি ফেরি করে আবার সন্ধ্যায় ফিরে যান বেলাকোবা কলেজ এর কাছে, তার নিজের বাড়িতে। সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করেন তার দুই কন্যা সন্তান, মিষ্টি তৈরির কারিগর। রাতভর চলে মিষ্টি তৈরির কাজ। সকালে আবার বেরিয়ে পড়া। এভাবেই ২৫ বছর ধরে নিরঞ্জনবাবুর মিষ্টি সাধনা চলছে। তবে ২৫ বছর আগে মূল শহরে হাঁক পেড়ে তার মিস্টি ফেরি করতে তেমন অসুবিধা হোত না।এখন যতটা হয়। কেননা,আগে এত যানজট আর হর্ণের দূষন ছিল না শিলিগুড়িতে। তবে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সবসময় তিনি আছেন তার মিস্টি ফেরিতে।তার কাছে বেলাকোবার চমচম ছাড়াও পাওয়া যায় রসগোল্লা, ল্যাংচা, ছানার জিলিপি, কাজু বরফি, পানতোয়া, ক্ষীরের পেয়ারা সহ প্রায় আট রকমের মিষ্টি। আবার কোন কোন মিষ্টির অবস্থা বুঝে তিনি নামকরণও করেন। যেমন তিস্তা পাপড়ি, রসদানা। তার কাছে নিমকি ও সুরমাও আছে। তিনি বলেন,এটা আমার পেশা ও নেশাও বলতে পারেন।বেশির ভাগ মিস্টির দাম দশ টাকা করে। তার এক কন্যা নবম আর এক কন্যা অষ্টম শ্রেনীতে পড়ে। তাদের পড়াশোনার ভরসা,তাদের বাবার এই কষ্টের মিস্টি উপার্জন। ( তথ্য ও ছবি দিয়ে এই খবর তৈরিতে উৎসাহ দিয়েছেন খবরের ঘন্টার সহসম্পাদিকা শিল্পী পালিত এবং অন্য ধ্রুপদের সঙ্গীত শিল্পী সোমা সান্যালচক্রবর্তী।) নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে তার মিস্টি ফেরির ধরন দেখে নেওয়া যেতে পারে ।