এখন শুধু চলছে যুদ্ধং শরনং গচ্ছামি

সিদ্ধার্থ বড়ুয়া ( সহকারী অফিস সম্পাদক, জ্ঞানজ্যোতি বিদর্শন ধ্যান আশ্রম,হায়দরপাড়া, শিলিগুড়ি) : শুক্রবার ৫ই মে,২০২৩ — ২৫৬৭ বুদ্ধ বর্ষ বা বুদ্ধ জয়ন্তী তথা শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা। এই তিথিতে মহামানব গৌতমের জন্ম ,বুদ্ধত্ব লাভ এবং মহাপরনির্বাণ লাভ– সব একই দিনে সংঘটিত হয়েছে বলে এটি বৌদ্ধদের কাছে ত্রিস্মৃতি বিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা নামেও অভিহিত । প্রতি বছর জাতিসংঘ তথা বিশ্বের প্রায় দেশে দিনটি মহা সাড়ম্বরে পালিত  হয়ে আসছে। যত‌‌ই দিনটি সাড়ম্বরে পালন করি না কেন, বর্তমানে বিশ্বের চলমান পরিস্থিতি দেখে মনে হয়, আমরা বুদ্ধের আদর্শ থেকে বিপরীতে অবস্থান করছি।

“বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি” থেকে সরে গিয়ে “যুদ্ধং শরনং গচ্ছামি”তে লিপ্ত হচ্ছি।
অত্যন্ত অবাক করা ও গৌরবের বিষয় এই যে আমেরিকার বোস্টন ইউনিভার্সিটির সমীক্ষায় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ১০০ জন মনীষীর তালিকায় এক ,দুই ও তিন নম্বরে ভারতবর্ষের তিনজন সূর্য সন্তানের নাম রয়েছে তারা হলেন  যথাক্রমে সিদ্ধার্থ গৌতম(বুদ্ধ), মহাবীর এবং মহান সম্রাট অশোক।
সিদ্ধার্থ গৌতম এর জন্ম থেকে বুদ্ধত্ব লাভ করা পর্যন্ত ৩৫ বছরের সময়কালে তিনি জীবের প্রতি প্রেম, জাতিভেদ প্রথা নিধন, সহানুভূতিশীল, পর কল্যাণ, মৈত্রীপরায়নতা, করুণা ও মহান ত্যাগশীলতার বার্তা দেন।আবার  রাজকুমার হয়ে যৌবন বয়সে রাজপ্রাসাদ , রাজ্য , মাতা-পিতা , স্ত্রী ও নবজাত পুত্রকে ফেলে গৃহ ত্যাগের মতো বোধোদয় ও অহিংসার মত নীতিগুলো তার কাছে বিরাজমান ছিল। জগতে এমন কোন লোক পাওয়া যাবে না, যে সুখ ছেড়ে দুঃখকে গ্রহণ করবে। মানব জীবনে সবচেয়ে অপছন্দের, অনাকাঙ্ক্ষিত, অত্যন্ত কষ্টদায়ক এবং বড় শত্রু হলো দুঃখ। প্রতিটি মানুষ কোন না কোন দুঃখে প্রতিনিয়ত জড়িয়ে আছে। সেহেতু দুঃখই মানব জীবনে সর্বশ্রেষ্ঠ সমস্যা।কেননাএকজন মানুষ জন্মগ্রহণ করলে তার জীবনে-
১।জরা দুঃখ হবে(বার্ধক্য),
২। ব্যাধি দুঃখ হবে(রোগাগ্রস্ত),
৩। প্রিয় বিয়োগ দুঃখ হবে(অত্যন্ত কাছের মানুষ মরে যাওয়া), ৪। অপ্রিয় সংযোগ দুঃখ হবে(অপছন্দের লোক বা মূর্খ লোকের সঙ্গে বসবাস),
৫। ইপ্সিত বস্তু অলাভ দুঃখ হবে(মন যেটা চায় সেটা না পাওয়া
আর সেই সর্বশ্রেষ্ঠ সমস্যা তথা দুঃখ থেকে মুক্তির পথ আবিষ্কার করেছেন মহামানব গৌতম বুদ্ধ। বুদ্ধগয়ার বোধি তরুমূলে ছয় বছর কঠোর সাধনার পর দুঃখ থেকে যেদিন তিনি মুক্তির পথ আবিষ্কার করেছেন সেদিন থেকেই তিনি জগতে বুদ্ধ নামে পরিচিত হন। মানবের জীবন থেকে কিভাবে দুঃখকে চিরতরে মোচন করা যায় তা দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে তৎকালীন ভারতবর্ষের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দিয়ে আশি বছর বয়সে মহাপরনির্বাণ লাভ করেন ।
বুদ্ধ জীবনে তিনি ৮৪ হাজার ধর্ম কথা ভাষণ দিয়েছিলেন  তার মধ্যে যদি শুধু একটি “অহিংসা নীতি” ই মেনে চলি তবে এত হানাহানি, মারামারি, গৃহযুদ্ধ এসব দেখতে হতো না।
পরিশেষে এমন শুভদিনে একটাই প্রত্যাশা— সকলেই হিংসা মুক্ত হউক, ভয়হীন হউক, বিপদহীন হউক, দুঃখমুক্ত হউক, শত্রুহীন হউক, জগতের সকল প্রাণী সুখী হউক।